Home ইসলাম ইসলামে জুমার দিনের ফযীলত ও আমলসমূহ

ইসলামে জুমার দিনের ফযীলত ও আমলসমূহ

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

মুসলমানদের জন্য সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার তথা জুমার দিন। এটি পৃথিবীর অন্যতম তাৎপর্যবহ দিবস। জুমা নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল হয়েছে। জুমার নামাযের কথা সরাসরি আল্লাহর বাণীতে উল্লেখ হয়েছে।  মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআ, আয়াত- ১০)।

জুমার দিন এবং এই দিনের আমল সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এককভাবে অন্য কোনো দিন বা সেদিনের নামাজ নিয়ে এত বর্ণনা আর পাওয়া যায় না। যথা-

হযরত আবূ হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৪১০)।

হযরত আবূ হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা শেষে এসেছি, কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সব জাতিকে (ইহুদি ও খ্রিস্টান) আসমানী কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদেরকে কিতাব (কুরআন) দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখো, এ দিনটি (জুমার দিন) আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে আছে। ইহুদিরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খ্রিস্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং- ৮৫৬)।

হযরত আবূ হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন (ফরয গোসলের মত) গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল। দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল। তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদীস নং- ৮৮১)।

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জুমার দিন যে ব্যক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরয গোসল করে এবং) নিজেও ফরয গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোনো কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোযা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ৬৯৫৪)।

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ:

১. গোসল করা। ২. ফজরের ফরজ নামাযে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। ৩. উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৫. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। ৬. জুমার নামায শেষে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। ৭. মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করা। ৮. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। ৯. মনযোগ দিয়ে খুতবা শোনা। খুতবা চলাকালে কোনো কথা না বলা। ১০. দুই খুতবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা। ১১. অন্য সময়ে দুয়া করা। কারণ, এদিন দু’আ কবুল হয়। ১৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সারাদিন যথাসম্ভব বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। ১৪. নিজের ভুল ও গুনাহের কাজের জন্য বার বার তাওবা করা এবং আল্লাহর সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। ১৫. নিজের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, দেশবাসী ও বিশ্ব মুসলিমের বিপদাপদ দূর, উন্নতি, বরকত ও কামিয়াবীর জন্য দোয়া করা।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নয়াপল্টন, ঢাকা।