Home ফিকহ ও মাসায়েল আহা! কেমন করেই না আমরা গাফেল থেকে যাই…

আহা! কেমন করেই না আমরা গাফেল থেকে যাই…

।। নুসরাত জাহান ।।

স্কুলে থাকতে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বই থেকে শিখেছি ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত । পাঁচটির মধ্যে বোধ করি কেবল মাত্র চারটিকে আমরা দ্বীনের জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট মনে করি। আর তাই খুব ছোটবেলা থেকে নিজ সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গিয়ে প্রথম থেকেই আমরা সেই চারটি বিষয় অর্থাৎ নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত এর উপর বেশি গুরত্ব দিয়ে যাই ।

বাচ্চা নামায পড়া শিখে গেছে, বালেগ হবার পর থেকে ফরয রোযাও রাখছে, হজ্জ ও যাকাতের হুকুম আহকামগুলোও বেশ ভালো করে রপ্ত করেছে, ব্যস …। কিন্তু যে শিক্ষাটার গুরুত্ব আমরা পুরো জীবনে সবচেয়ে হাল্কা ভাবে নেই এবং যেটাকে কেবল মুখস্থ বলে যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি তা হলো ‘কালেমা’ ।

কালেমার প্রথম অংশটুকু বহন করে তাওহীদের তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার একত্ববাদের বাণী। শুধুমাত্র ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ..’ এই অংশটুকুর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আমাদেরকে খুব সহজেই ধাবিত করে বড় ও ছোট নানা ধরনের শিরকের দিকে ।

আমি এরকম অনেক মানুষকে দেখেছি এবং দেখছি, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, সদাকায় কোন কমতি রাখেন না, কিন্তু তাওহীদের জ্ঞান ক্লিয়ার না । যার দরুন পহেলা বৈশাখ কিংবা নিউ ইয়ার পালন না করা থেকে শুরু করে বিধর্মীদের উৎসবে কেন শুভেচ্ছাটুকুও জানানো উচিত না, এই ব্যপারগুলো তাদেরকে একে বারেই বোঝানো যায় না । বরং অনেকে যুক্তি দিয়ে ব্যপারগুলোকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেন ক্ষেত্র বিশেষে। (নাউযুবিল্লাহ)।

আবার অনেককে দেখেছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’লা আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, কিন্তু একই সাথে মাজার পূজারী, পীরের মুরিদ হয়ে শিরকের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন। মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহকে উপাস্য মানতো, কিন্তু এর সাথে সাথে মূর্তি পূজাও করতো। কারণ, তারা বিশ্বাস করতো, এই মূর্তিগুলো আল্লাহ এবং তাদের মধ্যে মিডিয়া হিসেবে কাজ করে, যেরকমটা মাজার পূজারীরা বলে থাকে।

আপনি আপনার সন্তানকে হুজুর রেখে কায়দা আমপারা পড়ান, কুর’আন খতম দেওয়ান, অতি উত্তম কাজ। কিন্তু দয়া করে তাকে পাশাপাশি তাওহীদ কি, তা শেখান? তাওহীদের জ্ঞান আল্লাহর জমীনে সকল বিশ্বাসী বান্দার জন্য ফরয। আমাদের নামায রোযা’সহ অন্যান্য ইবাদাতে ত্রুটি থাকলে আল্লাহ গাফুরুর রাহীম হয়তবা চাইলে ক্ষমা করে দিলেও দিতে পারেন, কিন্তু ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ-এর জ্ঞান যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে যে কোন সময় শিরকের ফাঁদে পড়ে সকল ভালো আমলগুলো ভেস্তে যেতে পারে নিমেষেই।

শেষ করবো মন ভালো করে দেওয়া খুব সুন্দর একটি হাদীস দিয়ে। ইবনে মাজাহ্ হতে বর্ণিত, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “বিচার দিবসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তাঁর এক বান্দাকে ডেকে আনবেন। সবার উৎসুক চোখ তাকে ঘিরে থাকবে। তার সামনে রাখা হবে ভাঁজে মোড়ানো ৯৯টি আমলনামা, যার প্রত্যেকটি দুনিয়াতে তার সারা জীবনের গুনাহের সাক্ষ্য বহন করছে। এক একটি আমলনামার মোড়ক খুলে দিলে দৈর্ঘ্যে ঐ পরিমান বিস্তৃতি পাবে- যতদুর চোখ দিয়ে দেখা যায়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তখন তাঁর বান্দাকে জিজ্ঞাসা করবেন “তুমি কি এর কোনও একটি গুনাহ অস্বীকার করো”? বান্দা বলবে “না, আমার রাব্ব”।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা আরও বলবেন “তুমি কি মনে করো কোন গুনাহ বেশি লেখা হয়েছে?”
বান্দা আবারও মাথা নিচু করে লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে বলবে “না, আমার রাব্ব ! কোন গুনাহ বেশি লেখা হয়নি”।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তখন বলবেন, “তোমার এত গুনাহের বিপরীতে কি কোন ভালো আমল আছে?” বান্দা হতাশ ভঙ্গিতে বলবে “না, আমার তো কোন ভালো আমলই নেই এর তুলনায়”।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা শুধু একটি ভালো আমল আছে বলে ফেরেশতাদের আদেশ দিবেন সেটি পেশ করতে। ফেরেশতারা কেবল মাত্র ছোট্ট একটি লেফাফা নিয়ে আসবেন যেখানে লেখা থাকবে ‘লা-ইলা-হা-ইল্লাল্লাহ’।

বান্দা অবাক হয়ে বলবে “ইয়া রাব্ব ! আমার এত হাজার হাজার গুনাহের বিপরীতে মীযানের পাল্লায় সামান্য এই লেফাফা কি কাজে আসবে?”

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলবেন، “আজ ফায়সালার দিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাদের করা হয়েছিলো । আজ তোমাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবে না”।

এরপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ফেরেশতাদেরকে মীযানের উপর সেই লেফাফা রাখার নির্দেশ দিবেন । ফেরেশতারা তা রাখার পরপর সহস্রাধিক গুনাহ সমূহের পাল্লা উপরের দিকে শুন্যে উঠে যাবে আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র পাল্লা তার সমস্ত ওজন নিয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়বে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা তখন তাঁর বান্দাকে বলবেন, “হে আমার বান্দা ! জান্নাতের দিকে অগ্রসর হয়ে যাও”।

ছোট্ট একটি বাক্য অথচ এর মর্যাদা আপনার রবের নিকট কত বেশি ! সুবহানাল্লাহ।

আহা ! কেমন করেই না আমরা গাফেল থেকে যাই…