Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর উম্মাহ প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ: পরিচালনায়- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

উম্মাহ প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ: পরিচালনায়- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

জামায়াতে নামায আদায়ের গুরুত্ব

জনাব মুহাম্মদ কামাল উদ্দীন, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।

প্রশ্নঃ কেউ যদি দিনভর রোযা রাখে আর রাতভর নফল ইবাদত করে; কিন্তু মসজিদে গিয়ে জামাআতে শামিল হয় না। তার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?

উত্তরঃ জামাআতের সাথে নামায পড়ার ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। জামাআতের সাথে নামায পড়ার যেমন বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তেমনি শরীয়ত সমর্থিত ওজর ব্যতীত জামাআত তরক করার ব্যাপারে ভয়াবহ পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ জন্যই জামাআতের সাথে নামায পড়া ওয়াজিব। বিনা ওজরে এই ওয়াজিব তরককারী অবশ্যই গুনাহ্গার হবেন। (সূত্র- মিশকাত-১/৯৬ ও ৯৭ পৃষ্ঠা)।

 

তালাক ও হীলা সংক্রান্ত

জনাব মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন আতিক, সাভার, ঢাকা।

প্রশ্নঃ স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর পুনরায় সেই স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চায়, তাহলে আমরা জানি ‘হীলা’ করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, এই ‘হীলা’ ছাড়াই যদি সেই স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করে, তাহলে উক্ত বিবাহ বিশুদ্ধ হবে কি? যদি শুদ্ধ না হয়, তাহলে দ্বিতীয় বার বিবাহ করার পর যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, উক্ত সন্তান কি জারজ হিসেবে গণ্য হবে? আর উক্ত স্বামী যদি দ্বিতীয় বার বিবাহ করে বিদেশ চলে যাওয়ার পর তার স্ত্রীকে অন্য কোন লোক বিবাহ করে এবং স্বেচ্ছায় কিংবা প্রথম স্বামীর পীড়াপীড়িতে তাকে তালাক দেয়, তাহলে প্রথম স্বামী এই মহিলাকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি?

উত্তরঃ ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর পুনরায় তাকে গ্রহণ করার কোন উপায় নেই। এবং হীলা পন্থা নামে পরিচিত ব্যবস্থা কোন ইসলামী ব্যবস্থা নয়। কিন্তু উক্ত তালাক প্রাপ্তা নারী ইদ্দত পালন শেষে দ্বিতীয় বার অন্য কোথাও স্বাভাবিক বিয়ে হলে এবং ওখান থেকেও তালাকপ্রাপ্তা হলে শুধুমাত্র এই অবস্থায় উদ্দত পালনের পর প্রথম স্বামী তাকে বিয়ে করতে চাইলে তখন শরীয়ত বিয়ের অনুমতি দেয়। হীলা একটি ঘৃণিত কাজ এবং পরিকল্পিতভাবে হীলা করা জায়েয নয়। এতদ সত্ত্বেও কেউ হীলা ব্যবস্থা তথা পরিকল্পিত বিয়ের মাধ্যমে (উক্ত স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর) তালাকপ্রাপ্তা হয়ে ইদ্দত পালন শেষে পুনরায় পূর্বের স্বামীকে বিয়ে করলে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে গেলেও গুনাহগার হতে হবে।

কিন্তু তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ের পর উক্ত স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তালাকপ্রাপ্তা হয়ে আসা ছাড়া তাকে দ্বিতীয় বার বিবাহ করলে সে বিবাহ ‘ফাসেদ’ তথা বাতিল বলে গণ্য হবে। আর ফাসেদ বিবাহের মাধ্যমে যেসব সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, তারা এই স্বামীর সন্তান বলে গণ্য হবে। এই ফাসেদ বিবাহের পর স্বামী যদি বিদেশ চলে যায় এবং ইদ্দত শেষান্তে অন্য কোন লোক এ মহিলাকে বিবাহ পূর্বক যৌন সহবাস করে। অতঃপর স্বেচ্ছায় বা প্রথম স্বামীর পীড়াপীড়িতে তাকে তালাক প্রদান করে কিংবা উক্ত স্বামী মারা যায়, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর উক্ত মহিলাকে প্রথম স্বামী পুনরায় বিবাহ করতে পারবে। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে শামী, ক্বাদীম-২/৮৩৫, হিদায়া-২/৩৭৯, ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ্-৪/২৪, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়্যাহ্-১/৫৪০)।

 

জায়নামাযে খানায়ে কাবার চিত্র থাকা বিষয়ে শরীয়তের হুকুম কি?

জনাব মুহাম্মদ আলমগীর হুসাইন, দেলপাড়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, নারায়ণগঞ্জ।

প্রশ্নঃ আমাদের দেশে যে সব জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফের ছবি রয়েছে, সেগুলোর উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা বা মানহানী হবে কি? জায়নামাযে এ ধরনের ছবি অংকন করা জায়েয আছে কি?

উত্তরঃ কা’বা শরীফের চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা হবে না। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত ফিক্বাহ্বিদ আল্লামা মাহ্মুদুল হাসান বলেন, কা’বার চিত্র বিশিষ্ট জায়নামাযে নামায পড়লে তাতে কা’বা শরীফের কোন অবমাননা হবে না। কেননা, প্রথমতঃ সেটি কা’বা শরীফের ছবির নামান্তর মাত্র, প্রকৃত কা’বা শরীফ নয়। দ্বিতীয়তঃ মূল জিনিস এবং তার ছবির হুকুম এক নয়। তৃতীয়তঃ স্বয়ং কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে নামায পড়া হয়। কিন্তু তাতে যেহেতু কা’বা শরীফের অবমাননা হয় না, তাই যা ছবির নামান্তর মাত্র, তা পায়ের নীচে পড়ার দ্বারা কা’বা শরীফের অবমাননার প্রশ্ন উঠে না।

বিশিষ্ট ফিক্বাহ্বিদ আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী (রাহ্.) বলেন, শরীয়তে মুহাম্মদীতে এ ধরনের চিত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন জরুরী নয়। এরূপ চিত্র বিশিষ্ট কোন কিছু যদি কেউ নষ্ট করে ফেলে, তাহলে তাকে অন্যায়কারী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। অনুরূপভাবে কা’বা শরীফের চিত্রের উপর মূল কা’বা শরীফের কোন হুকুম প্রযোজ্য হয় না। যেমন, চিত্র দেখার সময় দোয়া কবুল হওয়ার সময় নয়, চিত্রে তাওয়াফের দৃশ্য মূল কা’বা শরীফের তাওয়াফের ন্যায় নয়। এরূপ চিত্রকে ক্বিবলা বানিয়ে সেদিকে ফিরে নামায পড়া জায়েয নয় ইত্যাদি। বরং কা’বার চিত্র কেবল আয়নার ন্যায়। যদ্বারা মূল কা’বা শরীফের পরিচয় লাভ হয় মাত্র। সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার দ্বারা এ কথাই বোঝা গেল যে, জায়নামাযে এরূপ চিত্র অঙ্কিত থাকা মূলতঃ জায়েয, কিন্তু শর্ত হল, এসব চিত্রের কারণে নামাযের ধ্যান মগ্নতায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারবে না। চিত্রের দিকে দৃষ্টিপাতের দরুন যদি নামাযের ধ্যান-খেয়ালে বিঘ্ন ঘটে, তাহলে এরূপ চিত্র বিশিষ্ট জায়নামায ব্যবহার মাকরূহ্ হবে। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ্-৭/১১১, ফাতওয়ায়ে আব্দুল হাই-২/২৮৫, মুসলিম শরীফ-১/২০৮, ফাত্ওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ্-৬/২৭৪)।

 

জুমআর নামাযের সঠিক ওয়াক্ত প্রসঙ্গে

জনাব এস.এন আমীন, গালুয়া বাজার, রাজাপুর, ঝালকাঠী।

প্রশ্নঃ জুম্আর নামায পড়ার সঠিক সময় বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী কয়টা বাজে হবে? কোন ইমাম সাহেব যদি শুক্রবারে জনকল্যাণ মূলক কোন কাজে লিপ্ত থাকেন, রুগী দেখেন, তা’বীজ-কবজ দেন এবং ইচ্ছে করেই (শীতকালে এবং গরমকালে) দেরী করে নামায পড়ান এবং এ কারণে সাধারণ মুসল্লীগণ বিরক্ত হন। কিন্তু ইমাম সাহেবকে কিছু বলতে সাহস করেন না। ফলে ইমাম সাহেবও তার নীতির পরিবর্তন করেন না। এমতাবস্থায় দেরী করে নামায পড়ায় শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন ক্ষতি আছে কি? এ ক্ষেত্রে আমাদের (মুসল্লীদের) কিছু করণীয় আছে কি?

উত্তরঃ শরীয়তের বিধান মোতাবেক জুম্আ এবং যোহর নামাযের সময় এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ- ঠিক দ্বিপ্রহর হওয়ার পর যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলতে আরম্ভ করে, তখন থেকে যোহর ও জুম্আর ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। তবে জুম্আর নামায তাড়াতাড়ি আদায় করা ভাল। কারণ, জুম্আর নামাযে অন্যান্য নামাযের তুলনায় মানুষ অধিক হারে অংশগ্রহণ করে থাকে। কাজেই জুম্আর নামায দেরী করে আদায় করা হলে অনভ্যস্ত মানুষ কষ্ট ও বিরক্তিবোধ করে একসময় গাফেল হয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হতে পারে। অপর দিকে যোহর নামায দেরী করে আদায় করলে যদি মানুষ বেশী হয়, তাহলে দেরী করে পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। প্রশ্নোল্লিখিত ইমাম সাহেবকে মুসল্লীগণের পক্ষ থেকে তাদের অসুবিধার কথা জানিয়ে তার নীতি পরিবর্তনের এবং আউয়াল ওয়াক্তে পড়ার ফযীলতের কথা স্মরণ করিয়ে তাড়াতাড়ি পড়ার আবেদন করা যেতে পারে। (সূত্র- দুররুল মুখতার-১/৩৫৯, ফাতওয়ায়ে শামী-১/৩৬৭, ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম-১/২৭৪, বাহরুর রায়েক্ব-২/১৪৬, ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ্-১/১৩১)।

 

মসজিদের ইমাম প্রসঙ্গে

জনাব হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল হক, সামরাজ সুলিজ মসজিদ, চরফ্যাশন, ভোলা।

প্রশ্নঃ মসজিদের পাশে নির্মিত ইমাম সাহেবের জন্য নির্ধারিত কক্ষে ইমাম সাহেব নিজে লাভজনক কোন প্রকার পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করতে পারবেন কি-না? তাছাড়া এরূপ কক্ষ মসজিদের অংশ কি-না জানালে উপকৃত হব।

উত্তরঃ ইমাম-মুয়ায্যিনের থাকার জন্য মসজিদের পাশে যেসব কক্ষ তৈরী করা হয়, সেগুলোতে তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক মালামাল রাখতে কোন অসুবিধা হবে না, যদি না মসজিদের কোন অসুবিধা হয়। আর এসব কক্ষ মসজিদের অংশ হিসেবে গণ্য নয়, বরং মসজিদের প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে গণ্য। (সূত্র- ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ্-১২/২৬০ পৃষ্ঠা)।

 

মসজিদে বিধর্মীদের দানের অর্থ গ্রহণ প্রসঙ্গে

জনাব আব্দুস সোবহান মাস্টার, বৈদ্যপাড়া, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।

প্রশ্নঃ আমি একজন স্কুল শিক্ষক। যোহরের নামায স্কুলের মধ্যেই পড়ে থাকি। আমাদের স্কুল ভবন এবং তার যাবতীয় আসবাবপত্র এনজিও’দের সাহায্যকৃত অর্থে ক্রয়কৃত। জনৈক আলেম বলেন, বিধর্মীদের সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠান, এমনকি বিধর্মীদের জায়গায় নামায হবে না। এর যথার্থতা কতটুকু? তাছাড়া বিধর্মীদের রাষ্ট্রে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে তা থেকে মসজিদ-মাদ্রাসা বা অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করা শরীয়ত সম্মত হবে কি?

উত্তরঃ শরীয়তের আলোকে পৃথিবীর যে কোন পবিত্র স্থানে নামায পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে জনৈক আলেমের বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। তবে এরূপ স্থানে নামায পড়া তাক্বওয়া ও পরহেযগারীর বিপরীত। এ ক্ষেত্রে অন্যত্র কোথাও নামায পড়া যেতে পারে। দ্বিতীয়তঃ পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রে গিয়ে হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জন করে তা থেকে ধর্মীয় স্থানে দান করতে অসুবিধা নেই। (সূত্র- সূরা আনকাবূত- ৫৬, বুখারী শরীফ-১/৬২, মিশকাত শরীফ-১/১৬৭, ফাত্ওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ্-৯/১৯৫, ক্বাযীখান-১/৩২)।

 

মসজিদের হুকুম সংক্রান্ত

জনাব মুহাম্মদ শোয়াইব, দক্ষিণ সতর, ছাগলনাইয়া, ফেনী।

প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব মসজিদ কমিটির শরীয়ত বিরোধী কোন নির্দেশনা জারি করতে পারবে কি?

উত্তরঃ সৃষ্টির আনুগত্য করতে গিয়ে কারো পক্ষে স্রষ্টার নাফরমানী করার কোন অধিকার নেই। তার মানে মানুষের আনুগত্য মৌলিকভাবে কেবল মাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। মানুষ শুধু তাঁরই আনুগত্য করতে আদিষ্ট। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের “মাখলুকের জন্য পাপের ক্ষেত্রে আনুগত্য নেই” উক্তিতে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, আল্লাহর নাফরমানী করে মানুষের কোন আনুগত্য করা যাবে না। সুতরাং উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এ কথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, ইমাম সাহেব মসজিদ কমিটির শরীয়ত বিরোধী কোন হুকুম পালন করতে পারবে না। (সূত্র- বুখারী শরীফ-২/১০৫৭, মিশকাত শরীফ-২/৩১৯)।

 

জবাব লিখেছেন- মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী

ফাযেলে দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা), মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা, উপদেষ্টা সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ডটকম, খতীব- আব্দুস সাত্তার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ-শ্রীপুর, গাজীপুর।

নোটঃ উম্মাহ ২৪ডটকম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে আপনিও চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন অবশ্যই ইসলাম ধর্মবিষয়ক হতে হবে। প্রশ্নের আকার ছোট হতে হবে এবং একক বিষয়বস্তুর হতে হবে।

প্রশ্ন পাঠানোর জন্য editor@ummah24.com এই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।