Home মহিলাঙ্গন নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাতের ইসলামী বিধান (শেষ কিস্তি)

নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাতের ইসলামী বিধান (শেষ কিস্তি)

চিকিৎসকের দৃষ্টিপাতঃ

চিকিৎসার প্রয়োজন অনুপাতে নারীর অসুস্থ অঙ্গের প্রতি চিকিৎসক দৃষ্টিপাত করতে পারবে। এ ব্যাপারে সকলে একমত। হযরত উম্মে সালমা (রাযি.) (নবীপত্নী) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সিংগা লাগাবার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন এবং আবু তাইয়েবাকে সিংগা লাগাবার নির্দেশ প্রদান করেন। (মুসলিম শরীফ-২/২১)।

অবশ্য এটা হতে হবে কোন মুহরিম ব্যক্তি, স্বামী অথবা বিশ্বস্ত কোন মহিলার উপস্থিতিতে, নিভৃতে নয়। চিকিৎসার প্রয়োজনে পুরুষ চিকিৎসকের দ্বারস্থ তখন হওয়া যাবে, যখন চিকিৎসা করানোর মত কোন মহিলা ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ পাওয়া না যায়। আর এ প্রয়োজনেই মহিলাদের চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন করা উচিত। যেন তাদের সমস্যা দর হয়। শুধু স্পর্শ করেই যদি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়, তবে রোগাক্রান্ত অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করাও চিকিৎসকের জন্য হারাম। (আল্ মিনহাজ-১৬/১৯৫)। তবে বিশেষ প্রয়োজনে দৃষ্টিপাত করা বৈধ।

বিপদকালে উদ্ধার কাজের সময় যেমন, পানিতে ডুবে যাওয়া, আগুনে পোড়া, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্ধারকারীর প্রয়োজনে উদ্ধারকৃতের শরীরের প্রতি দৃষ্টিপাত বৈধ। কারণ এ সময় সে তো ডাক্তারের ন্যায়। এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান প্রয়োজন সাপেক্ষে শিথিলযোগ্য। (মাফাতিহুল গায়েব-৬/৩৫৪)।

লেনদেন করার সময় দৃষ্টিপাতঃ

লেনদেন যেমন, কেনাবেচা ইত্যাদি করার সময় মহিলার প্রতি দৃষ্টিপাত বৈধ বলে জমহুর উলামা মত প্রকাশ করেছেন। কারণ পরিচয় নেওয়া ও চিনে নেওয়ার জন্য এটি প্রয়োজন। তবে উলামাগণ দৃষ্টিপাতের স্থান নির্ধারণ নিয়ে মতপার্থক্য ব্যক্ত করেছেন। হাম্বলী, শাফিঈ মাযহাব ও আহলে জাওয়াহেরগণ কেবল চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাতের কথা বলেছেন, (হাশিয়াতুল আদাবী-২/৪২৩) যেন লেনদেনকারী মহিলার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সময় মত মূল্য আদায় বা চুক্তিকৃত বিষয় সম্পাদন করতে পারে। (কিফায়াতুল আমবার-৪৮)।

ইমাম আহমদ (রাহ্.) বলেন, “কেউ যদি কোন মহিলার সাথে ভাড়া বা কেনাবেচা সংক্রান্ত লেনদেন করে, তবে তার জন্য মহিলার চেহারা দর্শন বৈধ। যেন প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে গিয়ে তাকে চিহ্নিত করা সহজ হয়। (আল্ মুগনী-৬/৫৫৮)। হানাফী এবং মালেকী মাযহাবে চেহারা এবং হাতের প্রতিও দৃষ্টিপাত বৈধ বলা হয়েছে। (ফাত্হুল ক্বাদীর-৮/৯৮)।

বর-কনের দৃষ্টি বিনিময়ঃ

বিবাহ করতে ইচ্ছুকদের জন্য ইসলাম দৃষ্টিপাত করাকে বৈধ ঘোষণা করেছে, তবে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে, যেন বিকৃতমনাগণ এ সুযোগে তাদের কু-বাসনা সিদ্ধি করতে না পারে এবং পরিণামে কনে পক্ষের জন্য তা সম্মানহানীর ব্যাপার না হয়। এ প্রয়োজনেই শরীয়ত কতিপয় শর্তারোপ করেছে। যেমন-

১. দেখা-দেখি হবে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে, ইজাব-কবুলের পূর্বে, যেন বিবাহের নিশ্চিত প্রস্তাব দিয়ে অতঃপর দেখা-দেখি করে প্রত্যাখ্যান না করা হয়। (সিরাজুল ওয়াহ্হাজ-৩৫৯)।

২. দেখার পর পছন্দ না হলে তাৎক্ষণিকভাবে চুপ থেকে পরে জানিয়ে দিবে।

৩. পাত্র আনুসাঙ্গিক বিষয়ের খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেবে যে, এ মেয়েকে বিবাহ করা যায় যদি পাত্রী পছন্দ হয়। আর যদি আনুসাঙ্গিক বিষয়েই অপছন্দ হয়ে থাকে তবে পাত্রী দেখা বৈধ নয়।

৪. ইমাম মালেক (রাহ্.)এর মতে কন্যার অজানতে কন্যা দেখা মাকরূহ্। সুতরাং পাত্রী বা পাত্রীর অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক। তবে জমহুর উলামার মতে অনুমতির প্রয়োজন নেই। কারণ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শর্ত আরোপ করেননি। হযরত জাবির (রাযি.) বলেন, “(আমার বিবাহের পূর্বে) আমি ওৎপেতে থেকে তাকে দেখেছি।” এ হাদীস কন্যা বা কন্যাপক্ষকে না জানিয়েই দেখার প্রমাণ বহন করে।

৫. পাত্র নিজেই দেখবে। দুলাভাই, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কোন প্রতিনিধি দ্বারা দেখাবে না যে, তারা এসে পাত্রীর বর্ণনা দিবে। ইমাম মালেক (রাহ্.) বলেন, “যদি প্রতিনিধি উপভোগের জন্য না দেখে তবে প্রতিনিধি প্রেরণ বৈধ।” (শারহুস্ সগীর-১/৩৭৭)।

যদি পাত্রের পক্ষে কোন কারণে পাত্রী দেখা সম্ভব না হয়, তবে তার পক্ষে কোন মহিলাকে প্রেরণ করা বৈধ, যে দেখে এসে তার নিকট বর্ণনা দিবে। এটা সর্বসম্মত মত। কেননা, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মে সুলাইম (রাযি.)কে এক মহিলার নিকট প্রেরণের সময় বলে দিয়েছিলেন, “তার পিঠ/মেরুদণ্ড দেখবে এবং বগলে গন্ধ আছে কি-না দেখবে।” (নাইলুল আওতার-৬/১২৫)।

৬. পাত্রীর দিকে বার বার দৃষ্টি দিয়ে ভাল করে দেখে নেওয়া পাত্রের জন্য বৈধ। অর্থাৎ ভালভাবে তার মধ্যে কাঙ্খিত সৌন্দর্য খোঁজ করবে। (আল্ মুগনী-৬/৫৫৩)। হানাফী উলামাগণ বলেন, “দেখার এ অনুমতি লাগামহীন নয়, বরং প্রয়োজন অনুপাতে তা নির্ধারিত হবে। সুতরাং যদি একবার নজর করাতেই তার দেখার প্রয়োজন সমাপ্ত হয়, তবে এর বেশী দৃষ্টিপাত পাত্রের জন্য হারাম হবে। কেননা, এ দৃষ্টিপাতের অনুমতি প্রয়োজনের কারণে দেওয়া হয়েছে। ফলে তা নির্ধারিত হবে প্রয়োজন অনুপাতে। (ইব্নে আবেদীন-৬/৩৭০)।

৭. পাত্র পাত্রীর দিকে তাকাতে পারবে, তবে স্পর্শ করতে পারবে না।

৮. পাত্রের জন্য একাকিত্বে পাত্রীর সাথে একত্র হওয়া বৈধ নয়। ফলে নির্জন নয় এমন কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পাত্রী দেখতে হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “কখনো কোন পুরুষ কোন পরনারীর সাথে নির্জন সাক্ষাতে মিলিত হবে না। কেননা, এতদুভয়ের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান।” (আল্ মুগনী-৬/৫৫৩)। হাদীসটি ইমাম বাইহাক্বী (রাহ্.) বিবাহ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। (বাইহাক্বী শরীফ-৭/৯১)।

নারীর দৃষ্টিপাত পুরুষের প্রতি

ফিক্বাহ্বিদগণ বেগানা/পর-পুরুষের প্রতি কামাসক্তি ও আবেগভরে নারীর দৃষ্টিপাতকে সর্বসম্মতভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তবে কামাসক্তি মুক্ত দৃষ্টিপাত বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি মতামত দেখা যায়। যেমনঃ

১. ইমাম শাফিঈ (রাহ্.)এর একটি অভিমত- পুরুষের জন্য যে সব কারণে নারীর শরীরের যে সব অঙ্গ দেখা বৈধ, নারীর জন্যও একই কারণে পুরুষের সে সব অঙ্গ দেখা বৈধ। (নিহায়তুল মুহ্তাজ-৬/১৯৪)। হাম্বলী মাযহাবের ইমাম আবুবকর (রাহ্.)ও একই মত পোষণ করেছেন। (আল্ মুগনী-৬/৫৬৩)। তাঁদের দলীল নিম্নরূপ-

(ক) পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ “মু’মিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত করে।”

(খ) ইমাম জুহরী হযরত নুবহান থেকে, তিনি উম্মে সালমা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মে সালমা বলেন, “আমি এবং হাফ্সা (দু’জনই নবীপত্নী) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। এ সময় হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মাকতুম সেখানে আসার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অন্দরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি তখন বল্লাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো অন্ধ, দেখতে পাবে না। তিনি বল্লেন, তোমরাও কি অন্ধ, তাকে দেখতে পাবে না।” (আবু দাঊদ শরীফ-২/৩৮৪)।

২. মালেকী ও হানাফী মাযহাবের গৌণ মতে এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহ্.)এর এক বর্ণনায় পরপুরুষের ততটুকু শরীরের প্রতি নারীর দৃষ্টিপাত বৈধ, একজন পুরুষ তার মুহ্রিম মহিলার যতটুকু শরীর দেখতে পারে। যেমন, চেহারা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের প্রান্তসীমা অর্থাৎ ঘাড়, মাথা, হাত-বাহু ও পায়ের পাতা।

৩. হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মত হল, একজন নারী কোন পরপুরুষের সতর ব্যতীত শরীরের অন্যান্য অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারে। হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের সতর হল, নাভির নীচ থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। আর হাম্বলী মাযহাব মতে নাভির নীচ থেকে হাটু পর্যন্ত। তাঁদের দলীল নিম্নরূপ-

(ক) হযরত ফাতিমা বিনতে ক্বয়েসকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তুমি ইব্নে উম্মে মাকতুমের ঘরে ইদ্দত পালন কর, যেহেতু সে অন্ধ মানুষ। সুতরাং তুমি তোমার বহির্বাস খুলে রাখলেও সে তোমাকে দেখতে পাবে না।” (বুখারী শরীফ-১/১২৩)।

(খ) হযরত আয়েশা (রাযি.)এর হাদীস, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন, আর আমি মসজিদের ভিতরের নিগ্রো লোকগুলোর লাঠি খেলা দেখছিলাম।”

(গ) যদি নারীর দৃষ্টিপাত অবৈধ হত, তবে নারীর ন্যায় পুরুষকেও পর্দা গ্রহণ করতে বলা হত। যেন নারীগণ পুরুষদেরকে দেখতে না পায়।

৩. নারীদের জন্য পুরুষের লজ্জাস্থান ব্যতীত পুরো শরীরের প্রতি দৃষ্টিপাত বৈধ। এটি আহলে জাহেরদের মত। (আল্ মুহাল্লী-২/১৫৩)।

আমাদের মতঃ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ব্যতীত পুরো শরীরের প্রতি কামাসক্তি মুক্ত দৃষ্টিপাত নারীর জন্য বৈধ। যদি নারীর মনে কোন প্রকার কামাসক্তি বা ভাবাবেগ থাকে, তবে দৃষ্টিপাত হারাম। আর যদি নারী কামাসক্তি ও ভাবাবেগের ব্যাপারে সন্দেহ মুক্ত হতে না পারে, তবে চক্ষু অবনত করা ও দৃষ্টিপাত না করা সূচিতা ও পবিত্রতার পরিচায়ক। এটিই ইমাম আবু হানীফা (রাহ্.)এর অভিমত।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাত

স্ত্রীর বিশেষ অঙ্গ ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের শরীরের সকল অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারবে বলে জমহুর উলামা মত পোষণ করেন। স্ত্রীর লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত বিষয়ে আলেমগণের মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথমতঃ হাম্বলী মাযহাবে ও শাফিঈ মাযহাবের গৌণ মতে স্ত্রীর বিশেষ অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করা মাকরূহ্। (আল-ইনসাফ ফী মা’রিফাতির রাজিহ মিনাল খিলাফ-৮/৩৩)। ইমাম মালেক (রাহ্.) প্রায় অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। (তাফ্সীরে কুরতবী-১২/৩২)। তাঁদের দলীল নিম্নরূপ-

(ক) হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে দেখিনি, আর তিনিও আমার থেকে দেখেননি”। (ইব্নে মাজাহ-১/১১৭)।

(খ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত হীনমন্যতা ও অশান্তি সৃষ্টি করে”। (আল-মুগনী-৭/১০১)।

দ্বিতীয়তঃ হানাফী মাযহাব, হাম্বলী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মতে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের যে কোন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে নিষেধ নেই। কোন কোন হানাফী আলেম একথা বলেছেন যে, “উত্তম হল, না তাকানো”। (ইবনে আবেদীন-৬/৩৬৬)। তবে যে কোন অবস্থায় স্পর্শ করার বৈধতা সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়্যাহ্-৫/৩২৭)।

গ্রহণযোগ্য মতঃ উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, যারা দৃষ্টিপাত বৈধ বলেছেন, তাদের মতই অধিক গ্রহণযোগ্য। এর বিপরীত মত পোষণকারীগণ যে প্রমাণ পেশ করেছেন, অধিকাংশ মুহাদ্দিস সেগুলোকে দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতিভাত হয়েছে যে, নারীর প্রতি পুরুষের এবং পুরুষের প্রতি নারীর দৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ত একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। দৃষ্টিপাত এমন একটি বিষয়, যা বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত কাজে প্রেরণা ও উৎসাহ যোগায়। তাই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মু’মিনদেরকে অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে চক্ষুদ্বয়কে হিফাযত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় বিষয় হল, আমরা যেন অবাঞ্ছিত দৃষ্টিপাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি; যাতে করে চির দুশমন শয়তান মানবাত্মাকে কলুষিত করে ধ্বংসাÍক পথে পরিচালিত করতে না পারে। হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) বর্ণনা করেছেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, চক্ষুদ্বয় দ্বারাও যিনা হয়, আর চোখের যিনা হল দৃষ্টিপাত।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায় ‘দৃষ্টি’ হল শয়তানের তীরসমূহের একটি। এ তীর সংরক্ষণের সহজ সরল পদ্ধতি নির্দেশ করতে গিয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাযি.)কে বলেন, “হে আলী! কোন অপাত্রে একবার তোমার দৃষ্টি পড়লে দ্বিতীয়বার আর দৃষ্টিপাত করবে না। কেননা, প্রথমবার তোমার কোন অপরাধ না হলেও দ্বিতীয়বার দৃষ্টিপাতের বৈধতা তোমার জন্য নেই।” এ কথার অর্থ এটা নয় যে, প্রথমবার দৃষ্টি দিয়েই অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকবে, বরং দৃষ্টিপাতের সাথে সাথেই চক্ষু অবনত করে ফেলতে হবে। আর এতেই রয়েছে নর ও নারী উভয়য়েরই কল্যাণ। মহান আল্লাহ্ আমাদের দৃষ্টি হিফাযত করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥

লেখক পরিচিতিঃ সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাতের ইসলামী বিধান-১

নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাতের ইসলামী বিধান-২