Home ওপিনিয়ন এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?

এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?

।। মোহাম্মদ আবু নোমান ।।

পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করা মেয়েটির ছবি চোখে দেখা ও সহ্য করার মতো নয়। আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? মাঝেমধ্যেই এ ধরনের ছবি ও সংবাদ দেখে হতাশ ও আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এ ধরনের ঘটনা আমাদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়।

সমাজের নানা জায়গায় যৌন হয়রানি আছে, এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু ইদানিং স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইমারি ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের কারো কারো নামে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়, তাতে সেটাকে শুধু সামাজিক অধঃপতন বলে কি পার পাওয়া যাবে?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবে। অথচ সেখানেই যদি ঘটে শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির ঘটনা আর সেটা যদি হয় প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক, তাহলে তা মেনে নেয়া যায় না। রাস্তাঘাটে বা অন্য কোথাও নয়, মেয়েটি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। পরীক্ষার হলে ঢোকার পর তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার হীন ও বর্বর অপচেষ্টা সংবাদ পড়ে বিবেকবান মানুষের গায়ে কষ্টের, বিদ্রোহের আগুন না লেগে পারে কি?

অপরাধীরা এত আস্ফালন পায় কোথায়? মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই এদেশে? দেশে সাধারণ মানুষের বেলায় আইনের সঠিক প্রয়োগ কতটুকু হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপারে আইন-কানুন প্রয়োগকারীদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি মানুষের প্রতি মানুষের হিংস্রতা এতবেশি প্রকট আকার ধারণ করছে, যার জন্য মানুষ আর পশুতে কোন ভেদাভেদ থাকছে না। পশুর মধ্যেও এত হিংস্রতা নেই, আজকাল যতটা মানুষের মধ্যে দেখা যায়।

রাফির অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সংবাদ শোনার পর বিশ্বাস হতে চায় না যে, আমরা মানুষ। মানুষ আর পশু এক নয়। মানুষের বোধশক্তি আছে, যেটা একটা পশুর নেই। কোন কাজটা করলে ভালো হবে, আর কোনটা করলে খারাপ হবে- এই বোধটুকু প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই থাকা উচিত। কিন্তু বর্তমানে মানুষ এতবেশি হিংস্র আর বর্বর হয়ে গেছে, তাদের বিচার-বিবেচনা বোধটুকুও লোপ পেয়েছে।

ভেবে কুল পাচ্ছি না, মানুষ কী করে মানুষের গায়ে আগুন ধরাতে পারে? প্রকৃত মানুষ হলে তো একটা কুকুরের গায়েও গরম পানি ঢালতে হাত কেঁপে ওঠার কথা। ফেনীর ঘটনায় আজ আমাদের নির্বাক হওয়ার মতো অবস্থা। কোথায় আমার বোনের, সন্তানের নিরাপত্তা? আমরা কি তবে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি?

শিক্ষকদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, পিতা-মাতার পরে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষকদের উপরই সবচাইতে বেশি ভরসা করে। এরপরও সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে এমন লজ্জাজনক আচরণ শিক্ষকরা কিভাবে করতে পারেন? শিক্ষকতা হচ্ছে মহান ও মর্যাদাজনক পেশা। অথচ কতিপয় শিক্ষক এই মহান পেশার মর্যাদা কী অবলীলায় ভুলুণ্ঠিত করে চলছেন!

রাফি যখন শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছিল, প্রশাসনের উচিত ছিল তখনই তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো হৃদয় বিদারক এ ঘটনার জন্ম হতো না। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজুদ্দৌলা পূর্ব থেকেই নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন।

অথচ তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দেখা যায়, সবসময়ই কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনা চেপে যায়। রক্ষকরাও যখন ভক্ষক হয়ে ওঠে, তখন আত্মসম্মানের কথা ভেবে বেশিরভাগ ভূক্তভোগী চুপ থাকে। শিক্ষক হয়ে যখন এরকম ঘৃণ্য কাজ কেউ করে, তখন অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

একজন শিক্ষক কেবল মেধাবী ও উচ্চ ডিগ্রিধারী হবেন না; তার নৈতিক মান ও নীতিবোধও উঁচু হওয়া উচিত। উদ্বেগের বিষয়, আমাদের শিক্ষাঙ্গনে নীতি ও নৈতিকতাবোধ বিবর্জিত ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

ই-মেইল: abunoman1972@gmail.com

অবশেষে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন অগ্নিদগ্ধ নুসরাত