Home সম্পাদকীয় উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ ও বর্তমান বিশ্ব

উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ ও বর্তমান বিশ্ব

।। সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা ।।

সাম্প্রদায়িকতা বা কমিউনালিজম হচ্ছে, এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব। কোনো ব্যক্তির মনোভাব তখনই সাম্প্রদায়িক বলে বিবেচনা করা হয়, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তিতে ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি অহেতুক হিংসাবিদ্বেষ, বিরুদ্ধাচরণ এবং ক্ষতিসাধনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। এ ক্ষেত্রে মানুষ, মনুষত্ব ও মানবতা নিতান্তই গৌণ; মুখ্য হয়ে দেখা দেয় বিশেষ শ্রেণী, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় তোষণ।

উগ্র বা চরমপন্থী সাম্প্রদায়িকতার পরিশীলিত রূপই হচ্ছে বর্ণবাদ। যা সন্ত্রাসবাদের প্রতিভূ। সম্প্রতি বর্ণবাদ আশ্রিত সন্ত্রাসবাদ সভ্যতা ও মানবতার বিরুদ্ধে মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বস্তুত বর্ণবাদ সেই দৃষ্টিভঙ্গি, চর্চা এবং ক্রিয়াকলাপ যেখানে বিশ্বাস করা হয়, মানুষ বৈজ্ঞানিকভাবেই অনেক গোষ্ঠীতে (races) বিভক্ত এবং একই সাথে আরো বিশ্বাস করা হয়; কোনো কোনো গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর চেয়ে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে উঁচু অথবা নিচু; কিংবা তার ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকারী; অথবা অধিকতর যোগ্য কিংবা অযোগ্য।

অবশ্য বর্ণবাদের এক এবং অভিন্ন সংজ্ঞা নির্ধারণও সহজসাধ্য বিষয় নয়। কারণ, গবেষকদের মধ্যে ধর্মগোষ্ঠী ধারণা নিয়েই মতবিরোধটা বেশ প্রবল। এ ছাড়া কোনটি বৈষম্য এবং কোনটি বৈষম্য নয় সেটি নিয়েও মতবিরোধ বেশ স্পষ্ট। বর্ণবাদ কখনো গাত্রবর্ণ, কখনো আঞ্চলিকতা, কখনো গোত্র, কখনো বর্ণ বা কাস্ট দিয়ে হতে পারে। কারো কারো মতে, মানুষের আচরণ যদি কখনো তার জাতি বা বর্ণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটি অন্য কারো জন্য ক্ষতিকর না হলেও তাকে বর্ণবাদ বলা হবে। এ বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মত হলো, শুধু আঞ্চলিকতা, গোত্র বা বর্ণচিন্তায় প্রভাবিত হয়ে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা; নিগ্রহ, শোষণ এবং অত্যাচার চালানোর নামই বর্ণবাদ। শেষোক্ত এই মতটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।

বস্তুত ধর্মান্ধতাও সাম্প্রদায়িকতার নামান্তর মাত্র। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক উপযোগিতা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন না করেই স্বল্প ও ভাসাভাসা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গোঁড়ামি বা চরমপন্থা অবলম্বন করাই হচ্ছে ধর্মান্ধতা। অতীব দুঃখের বিষয়, বিশেষ উদ্দেশ্যে ধর্মানুরাগী মানুষদেরই এখন ধর্মান্ধ তকমা লাগানো হচ্ছে এবং এই প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবেই বাড়ছে। কিন্তু যারা প্রকৃত অর্থে ধর্মান্ধ তারা থাকেন একেবারেই আলোচনা-সমালোচনার বাইরে। এমনকি ‘ধর্মান্ধতা’ শব্দের অপব্যবহারও বেড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।

ধর্মান্ধতা কী তা যথাযথভাবে উপলব্ধি না করেই ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মান্ধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে রীতিমতো সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা এখন বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এই শব্দের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধ বলে গালি দেয়া হচ্ছে। অথচ শুধু ইসলাম নয় বরং ‘ধর্মান্ধ’ কথাটি কোনো ধর্মেরই ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আর ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ, চরমপন্থা, বর্ণবাদ ও ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই। যা অমুসলিম মনীষীরাও অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করেছেন।

বিখ্যাত ইংরেজ পণ্ডিত জর্জ বার্নার্ড শ ইসলাম ও মহানবী সা: সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে বলেছেন, ‘চমৎকার প্রাণবন্ততার কারণে মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি মুহাম্মদকে নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। তিনি অতি চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিষ্টানবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে’। (Sir George Bernard Shaw, ÔThe Genuine IslamÕ, Vol. 1, No. 8, 1936).

বস্তুত ভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার ক্ষুণœ করে, স্বার্থহানি ঘটিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা-অপপ্রয়াসই সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতা উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িকতার পরিশীলিত রূপ মাত্র। আর অন্যের স্বার্থে কোনো প্রকার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে, ভিন্ন মত ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই নিজ সম্প্রদায়ের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা কোনোভাবেই কোনো নীতিগর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তা সাম্প্রদায়িকতার পর্যায়ভুক্ত বিবেচনার কোনো সুযোগও নেই।

সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলমানেরাই এখন এর প্রধান ভিকটিম। অথচ বিশেষ উদ্দেশ্যে এ জন্য মুসলমানদেরই দায়ী করা হয়। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ হুমকির মুখে পড়েছে- এমন উদ্ভট ও কল্পিত বিশ্বাস থেকে চালানো সর্বশেষ হামলায় গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে নির্বিচার গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব সন্ত্রাসবাদী ও বর্ণবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবই হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ঘটনার আদ্যোপান্ত পর্যালোচনায় এক ভয়াবহ চিত্রই বিশ্ববাসীর সামনে উঠে এসেছে। যা বিশ্বশান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

২০১৫ সালের অক্টোবরে সুইডেনের ট্রোলহাটনের স্কুলে হামলায় নিহত হন তিনজন। এ হামলার লক্ষ্যবস্তুও ছিল মুসলমান। নিহতদের মধ্যে ছিল ১৫ বছর বয়সী আহমেদ হাসান। সোমালিয়ায় জন্ম নেয়া এই শিশুটি কয়েক দিন আগেই সুইডেনে এসেছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার কুইবেক অঙ্গরাজ্যের এক মসজিদে সদ্য নামাজ শেষ করা মুসল্লিরা যখন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন ২৯ বছর বয়সী বিসোনেত্তে নামের ব্যক্তি তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। বন্দুক হামলাকে প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হন আজেদাইন সৌফিয়ান নামে এক ব্যক্তি। ওই হামলায় আহত হন আরো ১৯ জন।

২০১৭ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডে ছুরিকাঘাতে নিহত হন দু’জন। অভিযুক্ত হত্যাকারী আদালত কক্ষে চিৎকার করে বলেছিল, ‘স্বাধীনভাবে কথা বলতে দাও নইলে মরো। তুমি একে সন্ত্রাসবাদ বলতে পারো, আমি এটাকে দেশপ্রেম বলব।’ একই বছরের জুনে যুক্তরাজ্যের ফিনসব্যুরি পার্কের বাইরে একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর চালিয়ে দেয়া ভ্যানের চাপায় নিহত হন মুকাররম আলি ও অপর ১২ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, ড্যারেন অসবর্ন নামের হত্যাকারী ভ্যান হামলার পর চিৎকার করে বলেছিল, ‘আমি সব মুসলমানকে মারতে চাই-অল্প কয়েকজনকে মারলাম।’

২০১৭ সালের জুনে পূর্ব লন্ডনের বেকটনে ব্রিটিশ মুসলিম মডেল রেশাম খান (২১) এবং তার চাচাতো ভাই জামিল মুখতারের (৩৭) ওপর এসিড হামলা হয়। এতে প্রচণ্ডরকমের দগ্ধ হন দু’জনই। রেশাম ও জামিলের ওপর এসিড নিক্ষেপকে মুসলিমবিদ্বেষী হামলা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

বিশ্বব্যাপী একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, বেশির ভাগ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী হামলার সাথে মুসলমানেরা জড়িত। কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে তা অসার বলেই প্রমাণিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার গবেষণার ফলাফলেও সে চিত্রই ফুটে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপের ফলাফলে দেখা দেছে, গত ১০ বছরে দেশটিতে শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সাথে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংস্থা অ্যান্টি-ডিফেম্যাশন লিগ কাজ করে ইহুদি-বিরোধী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা নিয়ে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যতগুলো সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে ৭১ শতাংশ চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ও আধিপত্যবাদীরা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

এ দিকে দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস অব অস্ট্রেলিয়া নামের স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।’ সিডনিভিত্তিক সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসসূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে (সারাবিশ্বে) উগ্র-ডানপন্থী দল ও ব্যক্তিরা ১১৩টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের।’

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, শুধু ২০১৭ সালেই হামলা হয়েছে ৫৯টি। আর সে বছর মারা গেছেন ১৭ জন। ২০১৭ সালে ১২টি হামলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে, ছয়টি সুইডেনে এবং গ্রিস ও ফ্রান্সে দুটি করে হামলা চালানো হয়েছে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয়েছে ৩০টি। তাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির হিসাবে সেসব হামলার বেশির ভাগই পরিচালিত হয়েছে ‘মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগে আক্রান্ত উগ্র-ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে।’

গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেগুলো তিন ভাগের দুইভাগ চালিয়েছে বর্ণবাদী, মুসলমানবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, ফ্যাসিস্ট, সরকারবিরোধী এবং জাতিবিরোধী ভাবাবেগে প্রভাবিত ব্যক্তিরা।

‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শুরুতে উত্তর আমেরিকায় অনেক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জেহাদি দলগুলোর জড়িত থাকার খবর আসে। কিন্তু গত দুই বছরে উগ্র-ডানপন্থী রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। এতে আরো বলা হয়, ‘২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ৯টি সন্ত্রাসী হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেসব হামলার জন্য দায়ী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা।’ প্রতিবেদনটির ভাষ্য মতে, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের কথা বেশি শোনা গেলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১০ বছরে উগ্র ডানপন্থীরাই বেশি হামলা চালিয়েছে।

মূলত ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রচার হয় উগ্র-ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেভাবে প্রচার হয় না। এখন সে দিকটিতে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কেননা, সব জায়গাতেই উগ্র-ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দু’টি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

উগ্র বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ সব সময়ই বিশ্ব শান্তি, প্রগতি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। ইতিহাস পর্যালোচনায় সে চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। বর্ণবাদী ও সন্ত্রাসবাদীরা প্রতিনিয়ত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করলেও পরিকল্পিতভাবে এসব উগ্রবাদী তৎপরতার জন্য দায় চাপানো হয় মুসলমানদের ওপর। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণায় এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা মিলে না।

ইসলাম যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, বর্ণবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরোধী। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘কোনো মানুষকে হত্যা করার কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করল তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিলো।’ (সূরা আল মায়িদা-৩২) রাসূল সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে, তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার।’ (বোখারি, মুসলিম)

বস্তুত, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা কখনোই বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি নয় বরং সংখ্যালঘু শ্বেতসন্ত্রাসীরাই এখন বিশ্বশান্তির জন্য প্রধান অন্তরায়। অথচ এসব অপরাধী থাকে নেপথ্যে। এরা কোনো ধর্মেরই প্রতিভূ নয় বরং সভ্যতা ও মানবতারই প্রতিপক্ষ। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডির মাধ্যমে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের অন্তরদৃষ্টি খুলে দিয়েছে। অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বশান্তি নিয়ে নতুন করে ভাবার।

– সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা, ই-মেইল: smmjoy@gmail.com

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণের শামিল: ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের অভিমত