Home লাইফ স্টাইল নিয়ম করে হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন

নিয়ম করে হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন

- সংগৃহীত ছবি।

।। দীনা ফারজানা ।।

নিজকে আমরা সবাই ভালোবাসি। সুস্থ হাসিখুশি থাকতে চাই সবাই। কিন্তু নিয়ম করে প্রস্তুতি নিয়ে জিমে যাওয়া কিংবা শরীরচর্চার যন্ত্র কিনে ঘরেই সুস্থ থাকার কাজটা অনেকেরই করা হয় না। কিন্তু একটা কাজ আমরা খুব সহজেই করতে পারি বাড়তি প্রস্তুতি ছাড়াই। বাড়ির আশপাশেই প্রতিদিন একটু হেঁটে আসতে পারি চাইলেই। শুধু প্রয়োজন এক জোড়া আরামদায়ক জুতা আর ইচ্ছা।

প্রতি দিন নিয়ম করে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা আমাদের বাঁচাতে পারে নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে শারীরিক কর্মক্ষমতাও বাড়বে। হাঁটা দেহ ও মনকে সতেজ ও চাঙা রাখতেও অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট হাঁটেন তাঁদের গড় আয়ু তিন থেকে চার বছর বেড়ে যায়।

আমরা আজকাল অনেককেই প্রায়ই বলতে শুনি বয়স বেড়ে গেছে; শরীরে আগের মতো শক্তি নেই, সহজেই ক্লান্তি চলে আসে, গায়ে হাতে ব্যথা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা ইত্যাদি। এই ধরনের কথা যখন চল্লিশে পড়া লোকজনের মুখে শুনি, তখন চিন্তিত হতেই হয়। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭০-৮০ বছর। তার মানে চল্লিশ বছর বয়স মানে আধেক যাত্রা। আমাদের সুস্থ থাকতে হবে আরও বহুদিন। এই সুস্থ থাকাটা একটা নিয়মিত চর্চার ব্যাপার। এই চর্চা নিয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকাটা যেমন জরুরি, তেমনি সুস্থ দেহ সম্পর্কিত ধারণা থাকাটাও দরকার। রোগহীন দেহ মানেই সুস্থতা নয়। বরং রোগমুক্ত কর্মক্ষম, সামর্থ্যবান শরীর ও মন মিলিয়েই সামগ্রিক সুস্থতা। দেহের পাশাপাশি মানসিক সুস্বাস্থ্য সুন্দর জীবনের জন্য অপরিহার্য। এই সুস্বাস্থ্যের জন্য তিনটি বিষয়ে নিয়ম মেনে চলাটা খুবই জরুরি। এগুলো হচ্ছে সঠিক ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, শরীর চর্চা বা ব্যায়াম এবং উপযুক্ত বিশ্রাম। তিনটির একটির অনুপস্থিতিতে শরীর হারাতে পারে কর্মক্ষমতা।

আবার অনেকের ধারণা শুধু বাড়তি মেদটুকু ঝরে গেলে নিয়মিত ব্যায়ামের আর প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কিন্তু ব্যাপারটা ভুল। অবশ্যই বাড়তি মেদ কমানোর সুফল অনেক। কিন্তু এটি নিয়মিত শরীরচর্চার অনেকগুলো উপকারিতার মাত্র একটি। বাকি উপকারগুলো পেতে হলে মেদ ঝরে যাওয়ার পরও শরীরচর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সহজ উপায় হিসেবে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।

হাঁটব কেন? চলুন বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণার আলোকে নিয়মিত হাঁটার কিছু উপকারিতা জেনে নেই—
নানাবিধ জটিল রোগ প্রতিরোধ: ক্যানসার নামক জটিলতম রোগ প্রতিরোধেও নিয়মিত হাঁটার ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট হাঁটেন তাদের কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। ইতিমধ্যে ক্যানসারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত হাঁটার ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমে আরোগ্য লাভ সম্ভব না হলেও ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসার সুফল পেতে হাঁটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট জোরে হাঁটলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটায় উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করে।

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ: যেকোনো রোগ নিয়ন্ত্রণের চাইতে প্রতিরোধ ভালো। প্রতিদিন ৪০-৫০ মিনিট হাঁটায় রক্তে বাড়তি সুগারের মাত্রা ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। এতে ওষুধের ব্যবহার কমানো যায়। এ ছাড়া হাঁটার মাধ্যমে যে বাড়তি ওজন কমে, তা ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক।

স্মৃতিশক্তি লোপ প্রতিরোধ: নিয়মিত হাঁটা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, তাঁদের জন্য নিয়মিত একটু হাঁটাহাঁটি স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া রোধে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ: বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে পায়ের রক্তনালি সরু হওয়ার কারণে স্বল্প রক্ত প্রবাহজনিত রোগ দেখা যায়, যা ‘পেরিফেলার ভাসকুলার ডিজিজ’ নামে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্তরা কিছুক্ষণ হাঁটতেই দুই পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রোগের অন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে হাঁটা। এতে পায়ের রক্ত প্রবাহ বাড়ে, যা ব্যথা কমানোর পাশাপাশি বাড়ায় কর্মক্ষমতাও।

মানসিক সুস্থতা: নিয়মিত প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটলে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ‘এনডরফিন’ নামক হরমন নিঃসৃত হয়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে। এতে করে মনের অবসাদ, বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা দূর হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন ৪০-৫০ মিনিট হাঁটা ওজন কমাতে সাহায্য করে। নানা ঝুঁকিপূর্ণ রোগ প্রতিরোধে সঠিক ওজন ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাড়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন হাঁটলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়। এ ছাড়া নানাবিধ আর্থরাইটিস ব্যথা কমাতেও হাঁটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আর যারা এত কিছুতেও হাঁটা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন, তাদের বলি, ভবিষ্যতের জিম খরচ কিংবা শরীরচর্চার যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ অর্থ ব্যয় করতে না চাইলে দ্বিধা ঝেড়ে হাঁটতে বেরোন। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা বিশুদ্ধ হাওয়ায় গান শুনতে শুনতে হাঁটুন। সঙ্গী থাকলে তো কথাই নেই। গল্প করতে করতে হাঁটুন নিয়ম করে। সুস্থও থাকবেন, সম্পর্কও দৃঢ় হবে। ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে লাভ নেই। ব্যস্ততা থাকবেই, এর মধ্যেই নিজের জন্য সময় বের করে নিতে হবে। একবার সব বাধা উপেক্ষা করে এক মাস নিয়মিত হাঁটুন, অভ্যাস হয়ে যাবে।