Home ফিকহ ও মাসায়েল হিন্দু পণ্ডিত সাগর ত্রিপাঠি’র কবিতায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রশংসা

হিন্দু পণ্ডিত সাগর ত্রিপাঠি’র কবিতায় রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রশংসা

উম্মাহ অনলাইন: ভারতে যখন মুসলমানদের গরুর গোস্ত খাওয়া, নামায পড়ার জায়গা ও ঐতিহাসিক মুসলিম ব্যক্তিত্বদের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট করা নিয়ে উত্তেজনা চলছে, তখন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রশস্তি করে কবিতা (‘নাতিয়া শায়েরি’) রচনা করে চলেছেন এক হিন্দু পণ্ডিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া’র।
যার কবিতায় উঠে এসেছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ  (সা.)এর প্রশংসা, তিনি হচ্ছেন পণ্ডিত রাম সাগর পৃথ্বিপাল ত্রিপাঠী। তিনি অবশ্য পরিচিত শুধু সাগর ত্রিপাঠি নামে। তার পরিবার আবার অযোধ্যার রাম লীলা বিন্যাস মন্দির ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু ৬৮ বছর বয়সী সাগর ত্রিপাঠী নিজেকে পরিচিত করেছেন ভিন্ন ভাবে, শায়রি বা কবিতার মাধ্যমে। তার কবিতায় আসছে স্রষ্টার প্রশস্তির সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রশংসা। তিনি বিশ্ব ব্রাহ্মণ পরিষদেরও সভাপতি।
কেন তিনি ইসলামের রাসূল নিয়ে কবিতা লিখছেন? এর উত্তরে সাগর ত্রিপাঠী টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “নবী মুহাম্মদ শুধু মুসলিমদের নন, তিনি বিশ্ব মানবের। তাই তাঁর কাছে করুণা চাওয়ায় কোনো ভুল নেই।”
একটি শের-এ তিনি বলেছেন, ‘সিরফ এক কওম কি নেহি হ্যায় উয়েহ/ রহমতে আলামীন হ্যায় আকা (তিনি শুধু একটি কওমের নন, তিনি সারা বিশ্বের জন্য আল্লাহর রহমত)।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে নয়, মুহাম্মদ (সা.)কে সাগর ত্রিপাঠী দেখেন মানবতার প্রতীক হিসেবে, সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রীতির প্রচারক হিসেবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মুম্বাইয়ের কোলাবায় সাগরমুখী যে ফ্ল্যাটে সাগর ত্রিপাঠী থাকেন, সেখানে তার অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন, মুহাম্মদ (সা.)এর জীবনী। সেই সঙ্গে আছে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ গীতা ও রামায়ণ। তার বসার ঘরে বিশাল সোফার পেছনে রয়েছে কিছু জায়নামায, যাতে তার মুসলিম ভক্তরা এলে নামায পড়তে পারেন।
সাগর ত্রিপাঠি উর্দু ও দেবনাগরীতে কবিতা রচনা করেন। তার কবিতায় গঙ্গা-যমুনা তাহযিব-এর (যৌথ সংস্কৃতি) প্রকাশ দেখা যায়।
অযোধ্যার পণ্ডিত পরিবারের একজন হয়ে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়, আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।
তবে এটুকু বলতে পারি, যদি মানুষ তাদের অহমবোধ ছাড়ে, আর রাজনীতিকরা দূরে থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।”
উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর জেলায় জন্ম নেওয়া সাগর ত্রিপাঠীর কবি হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর পরিবার চাইছিল, তাদের ছেলে হবে সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু উর্দু কবি রঘুপতি সাহাই ফিরাক গোরখপুরীর প্রভাবে কবি জীবনই বেছে নেন সাগর ত্রিপাঠী।
“আমার মনে হয়েছিল, আমি বরং তার জন্য চা-পানি আনা নেওয়া করব, আর তার কবিতা শুনব,” হাসতে হাসতে বলেন সাগর ত্রিপাঠী।
তরুণ বয়সে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমানোর পর অর্থ রোজগার ভালোই করেছিলেন তিনি।
“কিন্তু তার মধ্যেও আমি মনের মাঝে এক ধরনের শূণ্যতা অনুভব করতাম, মনে হত কী যেন নেই, আমার সেই শূণ্যতা ভরিয়ে দিয়েছে কবিতা।”
ত্রিপাঠি তার বই বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ গরিব মুসলমান ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় করেন।
সাগর ত্রিপাঠীর প্রশংসা করে খ্যাতিমান উর্দু কবি আবদুল আহাদ সা‘জ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “সমকালীন উর্দু মুশায়রা (কবিতার আসর) জগতে সাগর সাহেব একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গঠনে তার প্রচেষ্টা ও অবদান প্রশংসার দাবি রাখে।”

সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া।