Home ইতিহাস ও জীবনী মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.): আগস্ট যাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়

মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.): আগস্ট যাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়

মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.)।
মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.)।

।। মাওলানা সাইফুদ্দীন ইউসুফ ফাহিম ।।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভ্রান্তমতবাদি কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.)৷ তিনি খমতে নবুওত আন্দোলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আকিদায়ে খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ছিলেন৷ মাওলানা শামসুদ্দিন কাছেমী (রাহ.) খতমে নবুওতের ডাক দিয়ে রাজপথের আন্দোলন চাঙ্গা করেছিলেন৷ জেল, জুলুম আর হুলিয়া ছিল যার নিত্য সাথী। ফলে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৫ইং সালের আগস্ট মাসে কাদিয়ানীদের লিখিত ‘ইসলামেই নবুওয়াত’ নামক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কাদিয়ানীরা সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি জনাব সুলতান আহমদ খান ও বিচারপতি জনাব এম. মাহমুদুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যথোপযুক্ত শুনানির পর কাদিয়ানীদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।

হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণ তাঁদের রায়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের পরে নবী আবির্ভূত হওয়ার আকীদাকে কুফরী বিশ্বাস বলে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন আদালতের রায়ে কাদিয়ানীরা যে অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে, এ শুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট সে কথাই পুনঃব্যক্ত করেছেন। সংবাদটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ইং তারিখে প্রকাশিত হয়।

১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে অন্য একটি মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মাদ আব্দুল জলিল ওবিচারপতি মোহাম্মাদ ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীদের অমুসলিম বলে রায় প্রদান করা হয়। এর দ্বারা বাংলাদেশে হাইকোর্টের মতেও কাদিয়ানীরা অমুসলিম ঘোষিত হয়। সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করার সুপারিশ করেছেন। (তথ্য সূত্র: মোহাম্মদ আব্দুল কাসেম ভূঁঞা লিখিত- কাদিয়ানী ধর্মমত বনাম ইসলামী দুনিয়ার অবস্থান)।

কাদিয়ানী মতবাদ, শিয়া মতবাদ, মওদুদীবাদ’সহ বাহায়ী, রেজভী, ইংরেজদের দোসর দেশ ও ধর্মবিদ্বেষী এনজিও’র বিরুদ্ধে মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী (রাহ.) আজীবন আপোষহীন সংগ্রাম পরিচালনা করে গেছেন৷ তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী সভাপতি, মাসিক পয়গামে হক্ব ও সাপ্তাহিক জমিয়তের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও একজন বিজ্ঞ শায়খুল হাদীস ছিলেন৷

তিনি ৩ বার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব নির্বাচিত হন। অতঃপর সহসভাপতি ও নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে গেছেন। ১৯৬৬ সালের ১৬ই মার্চ ঢাকা নবাব বাড়ীর আহছান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (পূর্বপাকের) কমিটি গঠিত হলে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (দা.বা.) সভাপতি এবং মরহুম কাছেমী (রাহ.) সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন।

১৯৬৯ইং ৫ই জানুয়ারী দ্বিতীয়বারের মত সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে জমিয়তের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে সভাপতি খলীফায়ে মাদানী শায়খে কৌড়িয়া এবং তিনি সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা লালকুঠি হলে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শাইখুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা হাফিজ সৈয়দ আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া ও আমীরে শরীয়ত সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হাফিজ মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজী হুজুর (রাহ.)কে পৃষ্ঠপোষক এবং হযরত মাওলানা আজীজুল হক (খেলাফত মজলিসের সাবেক আমীর)কে সভাপতি ও মরহুম শাইখুল হাদীস কাছেমী (রাহ.)কে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। তাছাড়া আরো দু’বার যথা ১৯৮১ ও ১৯৮৮ সালে সেক্রেটারী নির্বাচিত হন।

এ মহান ব্যক্তিত্ব ১৯ অক্টোবর ১৯৯৬ ইংরেজিতে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক মাওলানা শামছুদ্দীন কাছেমী (রাহ.)কে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন।