Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন টকশোঃ ইসলামপন্থীদের দলীল কী হওয়া উচিত?

টকশোঃ ইসলামপন্থীদের দলীল কী হওয়া উচিত?

।। রাশিদুল হাসান ।।

সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই হকের উপর বাতিলের অমূলক অথবা হঠকারি কিংবা শত্রুতাভাবাপন্ন প্রশ্ন ছিলো। সময়ের সাহসী সন্তানেরা আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জবাবও দিয়েছেন সামান্তরাল মজবুতভাবে। হক ও বাতিলের এ যুদ্ধ চলবে অবিরাম পৃথিবীর শেষ দিন অবধি।

বিবর্তন, পরিবর্তনই পৃথিবীর বৈশিষ্ট। বাতিল উপস্থাপনায়ও নিত্যনতুন ধারা আসছে। একসময় মুখোমুখি মুনাজারাহ (তর্কবিতর্ক) এর পদ্ধতি চালু ছিলো। সময়ের ধাক্কায় তা পাল্টে গেছে।  এখন এর আপডেট ভার্সন হলো টকশো।  এখানেও হকপন্থীরা সমানতালে ভূমিকা রেখে আসছেন। তবে বাতিলের অবান্তর প্রশ্ন ও যুক্তির তালে পড়ে তারাও যুক্তির আশ্রয় নেন। ফলে প্রায়ই তারা খেই হারিয়ে ফেলেন।

যুক্তি কেন দলিলযোগ্য নয়ঃ

মহামহিম আল্লাহ অসীম। তাই অসীম তার সকল সিফাত ও কর্ম। মানুষ সসীম। সসীম তাই তার আকল, কর্ম, শক্তি সবকিছুই। মানুষ যতই তীক্ষ্ণ  মেধার অধিকারী হোক না কেন, তা সসীম হওয়ায় নিদৃষ্ট সীমার বাইরে যেতে পারে না। সসীম অসীমকে ধারণ করতে পারে না। তাই সসীম আকলের দ্বারা অসীম আল্লাহ ও তার কার্যাবলীকে পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করা কখনই সম্ভব নয়। আল্লাহ পাকের অগণিত বিস্ময়কর সৃষ্টির একটি হলো আমাদের এই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি নক্ষত্র হলো আমাদের এই পৃথিবী। মানুষ আজো এই পৃথিবীরই রহস্য উন্মোচন করে শেষ করতে পারেনি। রহস্য উন্মোচনে একটিতে পা রাখলেই দল বেঁধে আরো সামনে এসে দাঁড়ায় আরো বেশি বিস্ময় নিয়ে। মহাবিশ্বের মাত্র কয়েকটি নক্ষত্র নিয়ে গবেষণা চলছে যুগ যুগ ধরে। এর বাইরে রয়েছে কত বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-উপগ্রহ। এটা তো খোদ বিজ্ঞানেরই স্বীকারোক্তি।

মানুষ যখনই আল্লাহকে যুক্তি বা বিজ্ঞানের আলোকে অনুধাবন করতে চেয়েছে, তখনই প্রবলভাবে হোচট খেয়েছে। ফলে কেউ আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পণ করেছে। কেউ ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তির অসারতাঃ

বিজ্ঞান অর্থই হলো ধারণার সমষ্টি। আরেকটু স্পষ্ট করে বলা যায়, ভৌত বিষয়াবলীর ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ, পরিক্ষণের প্রাপ্ত জ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে। ধারণায় ভ্রান্তির অবকাশ আছে এবং হয়ও। দেখা যাচ্ছে আজ যা সত্য বলে সিদ্ধ হচ্ছে, আগামীতেই তা মিথ্যায় পর্যবসিত হচ্ছে। এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার ভবিষ্যদ্বাণী বেশ কয়েকবারেই করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী গোল না চ্যাপ্টা? সূর্য ঘুরে নাকি ঘুরে না- এই সব ব্যাপারে নানান মুনি’র নানান মত আমরা অহরহই শুনতে পাচ্ছি।

আগেই বলা হয়েছে, আকলের কাজের একটি সীমারেখো আছে। এর বাইরে সে যেতে পারে না। এর সীমারেখা হলো এই মহাবিশ্ব। আল্লাহ পাক এই মহাবিশ্বের ঊর্ধ্বে। তাই তাঁকে, তাঁর সিফাত ও কর্মকে আকল দ্বারা পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। আর তাই বাতিলের যুক্তি দ্বারা গঠিত প্রশ্নের উত্তর যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করা ঠিক হবে না। এর প্রয়োজনও নেই।

দলিল কী হবেঃ

তাদের সকল প্রশ্নের উত্তরে যুক্তির অবকাশ থাকলেও কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে দেওয়াই উত্তম। কারণ, ইসলাম  যুক্তির ঊর্ধ্বে। মানুষের বিবেক সেখানে পৌঁছুতে অক্ষম। যুক্তি দিয়ে তাগুতের মোকাবালা করা যাবে না। যুক্তির পিঠে যুক্তি আসবে। ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো আত্মসমর্পণ, আনুগত্য। সুতরাং ইসলামের অর্থই হলো প্রভুর সমীপে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ দ্বারা দলীল পেশ করা হলেই মুসলিম নামধারী তাগুতের পদলেহীদের মুখ বন্ধ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ পাক কেন এমন এমন আদেশ করেছেন তা তিনিই ভালো জানেন। তাঁকে যেহেতু জিজ্ঞাসা করা সম্ভব নয়, তাই এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করাই অবান্তর। বান্দার কাজ তাঁর আদেশের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্প করা। তবে এতটুকু জানা যায়- তিনি মহাজ্ঞানী। বান্দার কল্যাণকামী। সুতরাং মন্দ কোন কাজের আদেশ তিনি দিতে পারেন না।

আল্লাহকে নিয়েই যারা প্রশ্ন তুলেন, তাদের সাথে ইসলামী জীবনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। খোদ আল্লাহতে যার বিশ্বাস নেই, ইসলাম নিয়ে তার প্রশ্ন-আপত্তি থাকবে; এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহকে বিশ্বাস করার দাবী করেও যারা তাঁর প্রবর্তিত ইসলামী জীবনব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে, সংশয়ে ভোগে কিংবা আলোচনা হতে পারে তাদের সাথে।

যুক্তি বা প্রমাণের ভিত্তিতে যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে ঈমানের মূল্য থাকলো কোথায়? আল্লাহ পাক সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানুষকে সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আসলে  মানুষ মাত্রই শ্রেষ্ঠ নয়। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। এমনকি ফেরেস্তাদের থেকেও। তার কারণ এই যে, মানুষ আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করে। আর ফেরেস্তারা আল্লাহকে দেখে বিশ্বাস করে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তো এখানেই।

ইসলাম ধর্ম সত্য সুন্দর হিসেবে হিসেবে প্রমাণিত। একে এখন নতুন করে প্রমাণিত করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন যে সত্য সুন্দর আছে তাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন। এ সত্য সুন্দরে মুগ্ধ হয়ে যে আত্মসমর্পণ করবে, আলহামদু লিল্লাহ। নতুবা বুঝতে হবে এরাই গাইরুল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দোয়াল্লীন এর অন্তর্ভুক্ত।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম, মাওনা, শ্রীপুর, গাজীপুর।