Home সাক্ষাৎকার সনদের সরকারী স্বীকৃতিতে আলেমদের গবেষণা ও কাজের ক্ষেত্র বাড়বে: মাওলানা নাজমুল হাসান

সনদের সরকারী স্বীকৃতিতে আলেমদের গবেষণা ও কাজের ক্ষেত্র বাড়বে: মাওলানা নাজমুল হাসান

বহুল প্রত্যাশিত কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীস (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান দেয়া সংক্রান্ত খসড়া আইনকে মন্ত্রীসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়াকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকার ভাইস প্রিন্সিপাল হাফেজ মওলানা নাজমুল হাসান। তিনি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, আমি আশাবাদি এতে করে কওমি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ তরুণ আলেমদের উচ্চতর গবেষণা ও কাজের ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হবে।

উম্মাহ ২৪ডটকম এর সাথে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান উপরোক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, উত্তরা রওজাতুল সালিহাত মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং উত্তরা ১২নং সেক্টর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা নাজমুল হাসান উম্মাহ ২৪ডটকমকে বলেন, “কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা শত শত বছর ধরেই স্বীকৃত ও জনপ্রিয় একটি শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে দ্বীনি শিক্ষা পরিচালনা করে আসছে। আপনি দেখতে পাবেন, শত শত বছর ধরে এসব মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনাপনার ব্যয় নির্বাহে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করে আসছে। দেশের সাধারণ জনগণের কাছে কওমি আলেমরা শত শত বছর ধরে অত্যন্ত মর্যাদা ও শ্রদ্ধার আসনে বিবেচিত। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মসজিদের ইমাম, খতীব ও মুয়াজ্জিনের পদে কওমি মাদ্রাসার আলেমগণই নিয়োজিত আছেন। সাধারণ মানুষ ধর্মীয় যে কোন প্রয়োজনে কওমি আলেমদেরকেই কাছেই গিয়ে থাকেন সবচেয়ে বেশি। তাই কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা এতদিন কোন স্বীকৃত শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না, এটা বলার কোন সুযোগ নেই। তবে সরকারী স্বীকৃতি ছিল না, এতটুকু বলা যেতে পারে”।

হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান এর সাথে যোগ করে আরো বলেন, “যেহেতু এখন সরকারীভাবেও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে, আমরা আশাবাদি ধর্মসংশ্লিষ্ট সরকারী চাকুরিতেও কওমি তরুণ আলেমগণ প্রতিযোগিতায় শরীক হতে পারবেন। সরকারী বিভিন্ন বিভাগ, দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক, ইমাম এবং কাজীর পদে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার বাহিনীর শত শত ধর্মীয় শিক্ষক পোস্টে কওমি শিক্ষিত আলেমগণ চাকুরির আবেদন করতে পারবেন। আরো উচ্চতর গবেষণা ও শিক্ষার জন্য তরুণ আলেমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন”।

মাওলানা নাজমুল হাসান বলেন, এর আগে কওমি মাদ্রাসার সনদের সরকারী স্বীকৃতি না থাকার কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ ও জায়গাসমূহে কওমি আলেমরা নিয়োগের আবেদন করতে পারেনি। শিক্ষার সরকারী স্বীকৃতির পর এই সংকট আর থাকবে না বলে আমি আশাবাদি।

মাওলানা নাজমুল হাসান সতর্ক করে এটাও বলেন, তবে সর্বাবস্থায় সরকারী স্বীকৃতির বিষয়ে কওমি শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা ও আলেম সমাজকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে যে, কওমি মাদ্রাসার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও দেওবন্দের উসূল বজায় থাকার বিষয়ে যেন কোনরূপ ছাড় বা আশংকা তৈরি না হয়। কারণ, সরকারী স্বীকৃতির অর্জনের চেয়েও কওমি স্বকীয়তা ও দেওবন্দের নীতিমালা অটূট রাখা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই।