Home গল্প-উপন্যাস গল্প: রাজকীয় পুরস্কারের নেপথ্যে!

গল্প: রাজকীয় পুরস্কারের নেপথ্যে!

।। অনুবাদ: রুহুল আমীন ।।

বহুদিন আগের কথা। এক ছিল এক বৃদ্ধ। তার ছিল তিন ছেলে। সকলেই মিলেমিশে হাসিখুশি দিনাতিপাত করত। আর সকলেই বাবাকে যারপর নাই মুহাব্বাত দেখাত।

কোন একদিন বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার রোগ বেড়ে গেল। মৃত্যু ঘনিয়ে আসার আলামত সুস্পষ্ট। ছেলেরা সকলে একত্র হল। বাবার সেবা শুশ্রূষা করতে তারা রীতিমত প্রতিযোগিতা ধরল।

এ সময় ছোট ভাই তাদের কাছে আরজ করল, অনুগ্রহপূর্বক তাকে যেন একাই পিতার সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়। প্রথমত: তারা তার আবেদন খারেজ করে দিল। কিন্তু সে যখন বলল, আমি আমার পিতার মিরাসের বিনিময়ে হলেও তার সেবা শুশ্রূষার সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। তখন ভাইয়েরা রাজি হল।

ছোট পুত্র সানন্দে অসুস্থ পিতাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে তার সেবা করতে লাগল। আমৃত্যু চালিয়ে গেল বাবার সেবা। শেষতক বাবার বিদায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ূন।

কথামত অপর দু’ ভাই বাবার সম্পদের মালিক। আর ছোট ভাই বঞ্চিত। তবে এতেও সে আনন্দিত। তার চোখে মুখে বাবার খেদমত করতে পারার গৌরব-গরিমা। মিরাস না পাওয়ায় তার মাঝে নেই কোন প্রভাব দুঃখবোধ। এভাবেই তার কেটে যাচ্ছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। আর গত হচ্ছে বছরের পর বছর। সব মিলে তিনি ভালোই আছেন। বোধ হয় বাবার দোয়ায়।

একরাতের ঘটনা। ছোট পুত্র ঘুমিয়ে আছেন। গভীর ঘুমে অচেতন। হঠাৎ বাবার সাথে তার দেখা স্বপ্নে। বাবার আদর যত্ন-আর অব্যক্ত মায়া-মমতা তাকে বিমুগ্ধ করল। তার সাথে যোগ হল আরেক সংবাদ। বাবার গুপ্তধন ভাণ্ডারের সুসংবাদ। তিন পরিচয় ঘটিয়ে দিলেন স্থান ও মালের সাথে। ঘুম ভেঙে ভোর হল। লোকজন এখনো বাড়ি ঘরে ঘুমে বিভোর কিংবা নামাযে। বা অন্য কোন হালতে। তিনি বেরিয়ে পড়লেন। পৌঁছলেন বাবার দেখানো স্থানে। পেয়ে গেলেন একটি ছোট্ট সিন্ধুক। হাতে নিলেন। আহ!! হিরা মুতি ভরা। একেবারে মূল্যবান সম্পদে ঠাঁসা।

সিন্ধুক হাতে হাসিখুশি বাড়ি ফিরলেন। ভাইদের সবিস্তারে জানালেন। এবার শুরু তাদের পর্ব। তুমি তো মিরাসের বিনিময়ে খেদমত গ্রহণ করেছ। আর মিরাস দিয়েছ আমাদের। তাই এখানে তোমার কোন হিস্যা নেই। তোমার কোনো অংশ নেই। বেচারা তাতেও খুশী। দ্বিতীয় রাতে স্বপ্নে দেখলেন একই রকম আরেকটি গাট্টি। গাট্টি হাতে নিলেন। বাহ! তাতে অনেক সম্পদ। কিন্তু সেই একই কায়দায় এখানেও ছোট পুত্র বঞ্চিত।

সবর করলেন। কিছুটা দুঃখ কষ্ট নিয়ে ঘরে ফিরলেন। অতঃপর নিজেকে সান্তনা দিয়ে বললেন, যাক গে, আমার কপাল তো নিতে পারেনি। আর পারবেও না। তৃতীয় রাতেও স্বপ্নে বাবার দেখা। তিনি খবর দিলেন গুপ্তধনের। অতি অল্প মালের। একটি দিনার পোঁতা আছে পানির মূসকে। তাদের দূরবর্তী কোন শস্য ক্ষেতে। অভ্যাসমতো ভাইদের জানালেন। তারা তাকে নিয়ে উপহাসে মেতে ওঠল। এক দীনার! তাই তো!! যা যা। চাইলে তুই নিয়ে নে। তিনি গেলেন। দীনার গ্রহণ করলেন।

দিনার হাতে ফেরার পথে এক বৃদ্ধ মাছ শিকারীর সাথে তার দেখা। মাছ দু’টি পেশ করে শিকারীর জিজ্ঞাসা, মাছ কিনবেন?

– জ্বী।

– কত?

– এক দীনার মাত্র।

ঠিক আছে। চুক্তি সম্পন্ন। এক দীনার দিয়ে মাছ গ্রহণ করলেন। বাড়িতে নিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ভালো করে রান্না কর। স্ত্রী একটি মাছ কাটলেন। পেট থেকে বেরিয়ে এলো এক চমকপ্রদ বস্তু। হাতে নিয়ে দেখলেন। আরে জওহর তো! মাশা আল্লাহ। আরেকটা  কাটলেন। আহ্হা! আরেকটা জওহর। আহা! কী আনন্দ! কী উল্লাস। মাত্র এক দীনারে দুই মুতি। দুটি মুক্তা। আর তো মজার দুটি মাছ।

মুহূর্তেই খবরটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, রাজ্যের সবার মুখে মুখে। এমনকি রাজমহলে থামেনি তার তোলপাড়। বাদশাহ’র মন কাড়তেও মোটেও ব্যর্থ  নয় এ সংবাদ। শাহী নির্দেশে তিনি তা নিয়ে রাজ দরবারে হাজির হলেন। আর রাজকীয় পুরস্কারে ভূষিত হলেন। আর নতুনভাবে প্রমাণ করলেন  মাতা পিতার সেবা করলে এভাবেই অকল্পনীয় রিযিক পাওয়া যায়।।

ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺠْﻌَﻞ ﻟَّﻪُ ﻣَﺨْﺮَﺟًﺎ ﻭَﻳَﺮْﺯُﻗْﻪُ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﻟَﺎ

ﻳَﺤﺘَﺴِﺐُ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﻞْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻬُﻮَ ﺣَﺴْﺒُﻪ

[ বিদেশী গল্প অবলম্বনে ]