Home সম্পাদকীয় রাজনীতি থেকে ইসলামী শক্তিকে মাইনাস চেষ্টা!

রাজনীতি থেকে ইসলামী শক্তিকে মাইনাস চেষ্টা!

।। সৈয়দ শামছুল হুদা ।।

বাংলাদেশের রাজনীতি দিনে দিনে ঘোলাটেই হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী শক্তিসমূহের জন্য আগামীর পথগুলো আরো বেশি বিপদশঙ্কুল হয়ে উঠার আলামত স্পষ্ট। পৃথিবীময় যারা রাষ্ট্র পরিচালনার নেপথ্য কারিগর, তারা চাচ্ছেন ইসলামকে বুকে ধারণ করে যারা রাজনীতি করে তাদেরকে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ থেকে যে কোন মূল্যেই মাইনাস করে দিতে হবে। আরব শাসকরা যেভাবে রাজনৈতিক ইসলামের দোহাই দিয়ে ইখওয়ানকে নিষিদ্ধ করেছে, তেমনি অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতেও ‘বিভক্ত করো এবং মাইনাস করে দাও’ নীতিতে সকল ইসলাম বিরোধী অপশক্তি এক হয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশে এটা খুব পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, আগামীতে ইসলামকে বুকে ধারণ করে কোন শক্তি মাঠে ময়দানে, রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আর ভালো করতে পারবে না। আওয়ামীলীগের সাথে উলামাদের ঘনিষ্ঠতা, ড. কামালদের সাথে বিএনপির মিত্রতা, সবকিছুর মূলেই আছে ইসলামী পোশাক-পরিচ্ছদ ধারণকারী শক্তিকে একটা সাইটে ফেলে দেওয়া।

আমরা অতীতের বিএনপিকে দোষারূপ করি, তারা আমাদের কী করেছে? আমি উত্তরে এতটুকুই শুধু বলবো- বিএনপি ইসলামের রাজনৈতিক শক্তিকে মুখ চেপে ধরেনি। আমরা কাজ করতে পারিনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু বর্তমান সরকার এবং আগামীর সরকার (যদি পরিবর্তন হয়), তাহলে ইসলামকে রাজনীতির মাঠ থেকে পর্যায়ক্রমে গৌণ পর্যায়ে নিয়ে আসবে- এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ইসলামী শক্তিগুলো যেভাবে তাদের শক্তি দেখাতে পেরেছে, যেভাবে উলামা-মাশায়েখগণ ধর্মীয় দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পেরেছেন, সর্বশেষ হেফাজতের মাধ্যমে ইসলামী দলগুলো যেভাবে নিজেদের বীরত্ব দেখাতে পেরেছে, এমন সুযোগ আর আগামীতে পাবে না।

হেফাজত থেকে শোকরানা মাহফিল পর্যন্তই মনে হয় আমাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয় শেষ। এরপর শুরু হবে নতুন যুগের। আমরা এমন অনেক কিছুই দেখবো, যেগুলো দেখে শুধু মাথার চুল ছিড়বো, আর ভাববো, এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ব- কখনো কি কল্পনা করেছিলাম! দেশে যে সকল বিচার শেষ হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে, এগুলোর নেপথ্য উদ্দেশ্য কিন্তু ইসলামকে নেতৃত্বশূন্য করা। কোন অপরাধকে দমন নয়। আগামীতেও এমন আরো বিচার হওয়ার শঙ্কা জেগে উঠছে। হয়তো অন্য অপরাধে, অন্য কারণ দেখিয়ে বড় বড় আলেমদেরকে হয়রানি করা হবে, প্রচন্ড চাপের মধ্যে রাখা হবে, যা এখন আমি আপনি ভাবতেও পারছি না। তখন আমরাই মনে করবো, অমুক আলেম মনে হয় অপরাধীই। না হলে, তার পেছনে রাষ্ট্র লাগলো কেন? এভাবেই আমরা দুর্বল হয়ে উঠবো। আমাদেরকে এভাবেই কাবু করা হবে।

ইসলামের যে জোয়ার বাংলাদেশে বিগত দিনে দেখেছেন, যে শক্তি দেখেছেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমন চিত্র আর দেখতে পাবেন না। ইসলাম নিয়ে সরাসরি কোন দল আগামীতে রাজনীতির মঞ্চে খুব ভালো করবে- এমনটা আশা করতে পারছি না। শুধু অন্ধকারই দেখতে পাচ্ছি। আজ ইসলামী শক্তির নেতাদের মধ্যে যে দূরত্ব, তা আগামী দিনে আরো বাড়বে বৈ কমবে না। কারণ এর পেছনে দূরতম শত্রুর ইন্ধন আছে, ইনভেষ্ট আছে। হেফাজতের ঘটনার পর থেকেই এই ইনভেষ্ট জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। এর কিছুটা ফলাফল এখনই দেখতে পাচ্ছি।

বিএনপি রাজনৈতিক ইসলামকে ঘৃণা করে না। আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক ইসলামকে সহ্য করতে পারে না। এটা হলো একটা মৌলিক পার্থক্য। কিন্তু হেফাজতের ঘটনার পর থেকে যখন দূরতম শত্রুর ইনভেষ্ট শুরু হয়েছে, তখন ইসলামী শক্তিগুলোর শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞাও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। এখন চিত্র উল্টো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শোকরানা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেন আল্লামা আহমদ শফি (দা.বা.), অপরদিকে বিএনপি দৌঁড়ায় ড.কামালদের মতো আমেরিকার সিআইএর পরীক্ষিত নেতাদের পিছনে। আজ বিএনপির কোন মঞ্চে কোন ইসলাম পন্থীকে সামনের টেবিলে দেখি না। সেখানে মান্না, আ স ম রব, সুলতান মনসুর, ড. কামাল প্রমুখদের দেখেন। বিএনপি কাদের সিদ্দীকির বাসায় বারবার ধর্ণা দেয়, কোন ইসলামী শক্তিকে বিএনপি তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হয় না।

বিএনপিকে এসব বিষয় চাপ দিয়ে করানো হচ্ছে। তাদের বুঝানো হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে চাইলে ইসলামপন্থীদের ব্যাকসাইটে নিয়ে রাখতে হবে। হেভিওয়েট নেতা যারা জনগণের ভোটে পাশ করতে পারে না, কিন্তু পাশ্চাত্যসহ তাদের পছন্দের শক্তিরও পছন্দ, তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ক্ষমতার পালাবদল সম্ভব। সেভাবেই সবকিছু আগাচ্ছে। আমরা হয়তো ধর্ম-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবো, এর বাইরে আসতে চাইলেই ইনভেষ্ট এর দায় শোধ করতে হবে। কঠিন থেকে কঠিনতর বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।

বিএনপির বামঘেষা চূড়ান্ত রাজনীতি, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কওমীদের সাথে ঘনিষ্ঠতার মধ্যে দুই পক্ষের জন্যই রয়েছে ঝুঁকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এ দিকে বেশি ঝুঁকেন, তাহলে তাঁর জন্যও রয়েছে বিপদের সমূহ আশংকা। আর কওমী আলেমগণ যেভাবে স্বীকৃতির শোকরিয়া আদায় করতে গিয়ে প্রবল জনমতকে উপেক্ষা করছেন, এর খেসারত আগামীতে বড় আকারে দিতে হয় কী না- তা নিয়েও ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, কওমী মাদ্রাসাগুলো চলে, জনগণের দান-অনুদানে। সেখানে আওয়ামীলীগ আছে, বিএনপিও আছে। সব দলের সামর্থবান লোকদেরই সহযোগিতা আছে। নতুবা এতগুলো মাদ্রাসা সরকারের কোন প্রকার অনুদান ছাড়া কোনভাবেই চলতে পারতো না।

ইসলামী দলগুলোর জন্য চলমান সঙ্কট এবং বিশ্বমোড়লদের যে দূরভিসন্ধি, তা থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে কিছু কিছু জায়গায় এক হতে হবে। আর সে ঐক্য যেনতেন প্রকারে নয়, ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নতুবা দেশের রাজনীতি এবং নির্বাচনে যেভাবে বিদেশি শক্তিগুলো নাকগলানো শুরু করেছে, এর পরিণাম কিন্তু হয় ভিয়েতনাম, নতুবা আফগান কিংবা ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ভিন্ন আর কিছু নয়।

মনে রাখতে হবে, এদেশে এতবেশি আলেম ও হাফেজ, যা আর কোন দেশে নেই। এটা ইসলাম নির্মূলবাদি শক্তি কোন কালেই বরদাশত করতে পারে নাই, আগামী দিনেও পারবে না। আমাদের অনৈক্যের সুযোগে ওরা সংখ্যালঘু হয়েও রাজনীতির কলকাঠি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, আর আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ওদের গোলামী এখনই শুরু করে দিয়েছি। আগামী দিনে আরো বেশিই করবো। নতুবা পিটিয়ে গোলামী করতে বাধ্য করবে।

ধীরে ধীরে খেয়াল করে দেখুন, ইসলামী দলগুলোকে রাজনীতির মাঠে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। একবার এ দলগুলো দুর্বল হয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগ আপনাকে দিবে না। আমাদের প্রতি ওদের অন্তরে যে পরিমান ক্ষোভ এবং ঘৃণা বিদ্যমান, তা পবিত্র কুরআনই বলে দিয়েছে। আসুন, আমরা পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে অবস্থান করি। মিলে মিশে রাজনীতি করি। হানাহানি, ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করি। তাহলে যদি কিছুটা সম্ভব হয় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। নতুবা রাজনীতির মাঠে আমাদের কোন অবস্থান থাকবে না। মসজিদ থাকবে, মাদ্রাসা থাকবে। কিন্তু বাতিলের বিরুদ্ধে আপনার ‍হুঙ্কার দেওয়ার শক্তি থাকবে না। দন্ত-নখর বিহীন বাঘে পরিণত হয়ে যাবেন।

আল্লাহ আমাদের বুঝ দান করুন। [31.10.2018]