সিলেটের অন্যতম প্রখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কাসিমুল উলূম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও প্রধান মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল হক শায়খে গাছবাড়ির ইন্তিকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক হযরত আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া।
আজ (১৭ মে) বুধবার প্রদত্ত এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মরহুম মুহিব্বুল হক শায়খে গাছবাড়ি সমসাময়িক সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ও মুরুব্বী আলেমদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ১৯৪৫ সালের ৬ ডিসেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ফখরোচটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জ দরগাহপুর মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সূচনা হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগার শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন। তখন থেকে আমৃত্যু প্রায় ৫১ বছর ধরে একটানা এখানে ইলমে নববীর খেদমত আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন। একই সাথে তিনি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলসহ জাতীয় স্তরেও গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি দায়িত্ব পালন ও নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তিনি সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিলেট জেলার সভাপতি, সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, খাদিমুল কুরআন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা উলামা কমিটির চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ফতোয়াবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
শোক বার্তায় আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আরো বলেন, মরহুম শায়খে গাছবাড়ির সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই সুসম্পর্ক ছিল। প্রায় সময়ই তাঁর সাথে বিভিন্ন দ্বীনি প্রোগ্রামে দেখা হতো। অনেক সময় টেলিফোনেও দীর্ঘ সময় কথা হতো। হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষার আন্দোলন বিষয়েও তাঁর সাথে প্রায় সময়ই কথা হতো। উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা ও আস্থা ছিল। প্রায় সময়েই তিনি ফোন করে জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর খোঁজ নিতেন, সফরে আসতেন। গত কয়েক মাস আগেও তিনি জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীতে এসেছিলেন।
গভীর হতাশা প্রকাশ করে আল্লামা ইয়াহইয়া বলেন, গত কয়েক বছরে পরপর অনেক শীর্ষ আলেমকে হারানোর পর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অল্প কয়েকজন নেতৃস্থানীয় মুরুব্বী আলেম যাঁরা ছিলেন, শায়খে গাছবাড়ি তার অন্যতম ছিলেন। কিন্তু এভাবে আকস্মিকভাবে তাঁকে আমরা হারিয়ে ফেলবো, কখনো ভাবিনি। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর এই ইন্তিকালে জাতীয় পর্যায়ে ইলমি ও ইসলামি অঙ্গনে যে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা সহজে পুরণ হবার নয়।
শোকবার্তায় আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া মরহুম শায়খে গাছবাড়ির বর্ণাঢ্য কর্মমুখর জীবনের মূল্যবান দ্বীনি খিদমত ও দক্ষ নেতৃত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। একই সাথে তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে জান্নাতে মরহুমের সুউচ্চ মাক্বামের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন। পাশাপাশি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, জামিয়া কাসিমুল উলূম দরগাহ মাদ্রাসার শোকাহত শিক্ষক-ছাত্র এবং অগণিত শাগরিদ-ভক্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ