Home জাতীয় চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসার উদ্বোধীন সবকে মূল্যবান দিকনির্দেশনায় আল্লামা কাসেমী যা বলেছেন

চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসার উদ্বোধীন সবকে মূল্যবান দিকনির্দেশনায় আল্লামা কাসেমী যা বলেছেন

উম্মাহ প্রতিবেদক: গত ১৫ জুন শনিবার বাদ ফজর দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্র শেখ জনূরুদ্দীন(রহ) দারুল কোরআন শামসুল উলুম চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসায় চলতি শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী দরসদান করেন জামিয়া মাদানীয়া বারিধারার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসের নতুন ছাত্রদেরকে হাদীস শাস্ত্রের অন্যতম বিখ্যাত কিতাব সহীহ বুখারী শরীফের দরস দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের দরসের উদ্বোধন করেন।

মাদ্রাসা চত্বরে অনুষ্ঠিত দরসদান অনুষ্ঠানে উস্তাদ ও ছাত্রগণ ছাড়াও বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আল্লামা কাসেমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জরুরী উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক বয়ান পেশ করেন।

ইলমে নুবুওয়াতের গুরুত্ব ও মাহাত্য এবং ছাত্রদের করণীয় বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ নসীহত পেশ করেন। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, ছাত্রদেরকে ইলমের আজমত তথা বড়ত্ব বুঝতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। ছাত্রদের করণীয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে সবসময় গুরুত্ব দিতে হবে। যথা- এক নম্বরে ছাত্রদেরকে এই নিয়্যাত করতে হবে যে, ইলমে দ্বীন অর্জন করব আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য। দ্বিতীয়ত: ছাত্রদেরকে নিয়্যাত করতে হবে যে, আমি যা শিখব, সে মোতাবেক আমল করব। তৃতীয়ত: নিয়্যাত করতে হবে- আমি যা অর্জন করব তা নিজের একার জন্য নয়, বরং সারা বিশ্ববাসীর উপকার ও কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যেই অর্জন করব। আমার অর্জিত জ্ঞান সাধ্যমতো বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রসার করে যাব। চতুর্থত: ছাত্রগণ নিয়্যাত করবে যে, আল্লাহ পাক যদি আমাকে লিখনী শক্তি বা লেখার যোগ্যতা দেন, আমার অর্জিত এই ইলমকে লেখার মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রচার করতে সাধ্যমতো কাজ করে যাব। ছাত্রদেরকে এই চারটি নিয়্যাত করতে হবে।

আল্লামা কাসেমী বলেন, ইলম হাসেল করতে হলে একাগ্রতা ও মনোযোগ অপরিহার্য। ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। উস্তাদগণের ইজ্জত-ইহতেরাম বজায় রেখে চলতে হবে।

ছাত্রদের আমলের প্রসঙ্গে আল্লামা কাসেমী বলেন, ছাত্রদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাকবীরে ঊলার সাথে জামাতে আদায় করতে হবে। ছাত্র হাফেজ হলে প্রতিদিন পবিত্র কুরআনের তিন পারা এবং হাফেজ না হলে এক পারা তিলাওয়াত করতে হবে। শেষ রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়তে হবে। তাহাজ্জুদ শেষে আল্লাহ পাকের কাছে কান্নাকাটি করবে। নিজের জন্য, দেশের জন্য, সমাজের জন্য এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সফলতা ও অগ্রগতির জন্য দোয়া করবে।

তরীক্বায়ে তালীম প্রসঙ্গে আল্লামা কাসেমী বলেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রদের তিন কাজ এবং উস্তাদগণের দুই কাজ। ছাত্ররা ইবারত বিশুদ্ধ পড়বে। ইবারতের সঠিক অনুবাদ করবে। ইবারতের সঠিক মতলব তথা ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করবে। উস্তাদগণের দুই কাজ হল- সবক আদায় করার সময় ‘উহু’ আর ‘হুম’ বলবে। ছাত্ররা ইবারতে ভুল করলে, অনুবাদে ভুল বললে এবং মতলব তথা ব্যাখ্যায় ভুল করলে উস্তাদ শুধু ‘উহু’ বলবেন। ছাত্র কী ভুল করেছেন সেটা ধরিয়ে দিবেন না। ছাত্র পুনরায় বুঝে শুনে যখন শুদ্ধটা বলবেন, তখন উস্তাদ ‘হুম’ বলবেন। ছাত্র ভুল বললে ‘উহু, ছাত্র শুদ্ধ বললে ‘হুম’ বলাই উস্তাদের কাজ।

তিনি বলেন, দরস যেন এমন না হয় যে, উস্তাদগণ শুধু বলেই যাবেন, আর ছাত্ররা কান সুখ করবেন। এভাবে দরস হলে ভাল আলেম তৈরি হবে না। এ কারণেই আজকাল ফারেগ অনেক আলেম দেখা যায়, কিন্তু খুঁজতে গেলে যোগ্য আলেম পাওয়া যায় না। মেহনত না করলে যোগ্য আলেম হবে কী করে? তাই ছাত্রদেকে মেহনত করতে হবে। রাত-দিন কুতুববিনীর মেহনত করতে হবে।

পাঠ্য ও পঠন সম্পর্কে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, উর্দূ কায়দা থেকে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত হল দরসে নিজামী সিলেবাসের ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন যেই ছাত্রের মজবুত হবে, যে ছাত্র শুরু থেকে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত ভালভাবে কিতাব আয়ত্ব করতে পারবে, সে ছাত্র সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। এই ফাউন্ডেশন যদি দুর্বল হয়, তাহলে সে ছাত্র সামনে আগাতে পারবে না, মানে ভাল করতে পারবে না, ভাল আলেম হবে না। সুতরাং যে কোন মূল্যে ফাউন্ডেশন মজবুত করতে হবে। সুতরাং শুরু থেকেই এই ফিকির করতে হবে যে, যাতে ফাউন্ডেশন মজবুত হয়।

আল্লামা কাসেমী বলেন, যেসব ছাত্র শরহে বেক্বায়া, জালালাইন, মিশকাত, দাওরায়ে পৌঁছে গেছে, কিন্তু ফাউন্ডেশন দুর্বল, তারা কি করবে? তাদের জন্য হল ইমার্জেন্সী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন রোগীর শারীরিক অবস্থা যদি আশংকাজনক হয়, তাৎক্ষণিক তাকে জরুরী বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। এসব ছাত্রকেও জরুরী ভিত্তিতে নাহু-সরফের দুর্বলতা দূর করতে বিশেষ কোর্স করতে হবে। নাহু-সরফের দুর্বলতা দূর করা ছাড়া এমন ছাত্র কখনোই ভাল আলেম হতে পারবে না। এটা তার লাগবেই। তাহলে সে সফল হতে পারবে এবং নিজেকে ভাল আলেম হিসেবে প্রমাণ দিতে পারবে।নাহু-সরফের ইলম ছাড়া এটা সম্ভবই নয়।

শেখ জনূরুদ্দীন(রহ) দারুল কোরআন শামসুল উলুম চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসায় সবকদান অনুষ্ঠান শেষে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সকাল সাড়ে ৭টায় দক্ষিণখান মাদরাসাতুর রাহমানের সবক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং বুখারী শরীফের দরস দেন। এখানেও তিনি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বিশেষ দিক-নির্দেশনা ও হিদায়াতী বয়ান পেশ করেন।

এরপর আল্লামা কাসেমী আশুলিয়াস্থ আল-আমীন মাদ্রাসায় যোহর নামায আদায় করেন। যোহরের পর দুপুরের খাবারগ্রহণ শেষে তিনি প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং পরিচালনা করেন। আছর পর্যন্ত মিটিং স্থায়ী হয়। মিটিংয়ে তিনি মাদ্রাসার প্রশাসনিক সুষ্ঠু পরিচালনা, শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর রাখতে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দান করেন।

মুরসির মৃত্যু ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: আল্লামা কাসেমী