Home জাতীয় কুফরী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে: মানববন্ধনে আল্লামা কাসেমী

কুফরী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে: মানববন্ধনে আল্লামা কাসেমী

উম্মাহ রিপোর্ট: পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনের ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা বাতিলের দাবিতে সর্বস্তরের উলামা-মাশায়েখের অংশগ্রহণে আজ (৩১ জুলাই) বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। কর্মসূচীর আহ্বায়ক শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে এতে শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতৃবৃন্দসহ দলমত নির্বিশেষে কয়েক হাজার আলেম শরীক ছিলেন।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে আহ্বায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, মুসলিম শিক্ষার্থীদের মননে নাস্তিক্যবাদের বীজ বুননের অসৎ উদ্দেশ্য থেকেই ২০১৩ সাল থেকে জাতীয় শিক্ষার মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স স্তর পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ‘বিবর্তনবাদ’ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিবর্তনবাদ মানুষ ও বানরের পূর্ব পুরুষ একই সাব্যস্ত করে। অথচ পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে বলেছেন, মানব জাতির উৎপত্তি হযরত আদম (আ.) থেকেই শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বিবর্তন তত্ত্ব মতে শুধু মানুষের আদি পিতা বানর সাব্যস্ত করেই শেষ নয়। বরং এই মহাবিশ্ব, গ্রহ, উপগ্রহ, সমগ্র প্রাণী জগত এবং তরুলতাসহ সকল সৃষ্টি যে অত্যন্ত সুনিপুণ ও সুবিন্যস্তভাবে আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন, এই বিশ্বাসটাই আর অক্ষুণœ থাকে না। এই মতবাদ মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা বিরোধী কুফরী মতবাদ। এই মতবাদে বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না।

তিনি বলেন, ইসলাম বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের বিরোধী নয়। বরং মানব কল্যাণে জ্ঞানের চর্চা, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। কিন্তু বির্বতনবাদ শিক্ষা বিজ্ঞান চর্চার নামে কেবল অনর্থক সময় অপচয়ই নয়, বরং এটা ইসলামকে উৎখাতের পুঁজিবাদের এক মহাপ্রকল্প। আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনীকে ছুঁড়ে ফেলেছে। যে কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে বিবর্তন শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে ‘বিবর্তন’ শিক্ষার নামে কোন কিছু ছিল না। ২০১৩ সালে একযোগে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের পাঠ্যবইয়ে বিবর্তন পাঠ যুক্ত করা হয়। দৃশ্যতঃই বুঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ ও পুঁজিবাদিদের চাপ ও প্ররোচণাতেই এটা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবিধান মতেও মুসলিম ছাত্র-ছাত্রদীদেরকে ঈমান-আক্বিদা বিরোধী কুফরী বিবর্তন মতবাদ শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। এই শিক্ষা অব্যাহত থাকলে কয়েক প্রজন্ম পর পুরো জাতির মধ্যে নাস্তিক্যবাদ ছড়িয়ে পড়বে। এটা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জাতীর চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস থেকে ঈমান হরণের এক ভয়াবহ উদ্যোগ।

তিনি বলেন, এই শিক্ষা কুপ্রভাবে সমাজ ও ব্যক্তিজীবন থেকে ধর্মীয় বিধিনিষেধ ওঠে যেতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিয়ে মানবে না। বিয়ের বহুবিধ দায়বদ্ধতা ছাড়াই লিভটুগেদারে আগ্রহী হবে। জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। মদ, জুয়ার বিধি-নিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা নিয়ে আন্দোলন হবে। মানবতাবোধ হারিয়ে যাবে এবং ভোগবাদে মানুষ ডুবে যবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম নিয়ে কটূক্তি এবং আলেম-উলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে।

মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ঈমান-আক্বিদা ও সমাজিক শৃঙ্খলাবিরোধী ডারউনের কুফরী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা পাঠ্যপুস্তক থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ঈমান-আক্বিদাবিরোধী এই কুফরী শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এবং শিক্ষার সকল স্তরে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইসলামধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের মধ্যে শরীক ছিলেন- আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন খুলনা, মাওলানা শফিক উদ্দীন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মাওলানা আবুল হাসান শামসাবাদী, মাওলানা আতাউর রহমান আরিফী, মাওলানা মকবুল হোসাইন, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা নূর মুহাম্মদ, মাওলানা রূহুল আমীন, মাওলানা আব্দুল লতিফ ফারুকী, মাওলানা গাজী ছানাউল্লাহ, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা ফায়সাল আহমদ, মুফতি শরীফ উল্লাহ, মাওলানা বশীরুল হাসান, মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়গরী, মাওলানা ফয়জুল্লাহ প্রমুখ।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিবর্তন শিক্ষা বাতিলের দাবি সম্বলিত বিশাল আকৃতির ৩টি ব্যানারসহ অসংখ্য ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিল। মানববন্ধন কর্মসূচী এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে বেলা ১২টায় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর মুনাজাত পরিচালনার মাধ্যমে শেষ হয়।

আসামের নাগরিকপঞ্জি এবং আমাদের ভাবনা