Home ইতিহাস ও জীবনী কাশ্মীর সংকটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

কাশ্মীর সংকটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

- ফাইল ছবি।

।। পিনাকী ভট্টাচার্য ।।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর দু’মাস পর্যন্ত কাশ্মীর স্বাধীন ছিল। বৃটিশ ইন্ডিয়াতে ৫৮৪ টা প্রিন্সলি স্টেট ছিলো যারা বৃটিশ ভারতের অংশ ছিলো না তাঁরা স্বাধীন রাজ্য ছিলো।

ভারত ভাগ হওয়ার পরে এই প্রিন্সলি স্টেটের বিভিন্ন রাজ্যের শাসকেরা কোন দেশে থাকতে চান সেই পছন্দের ওপর তারা হয় ভারতে অথবা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হলেন। ভারত অনেক ক্ষেত্রেই ভয়, প্রলোভন, বলপ্রয়োগ ও রক্তপাতের মধ্যে দিয়ে প্রিন্সলি স্টেট গুলোকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এই কাজটা করেছিলেন বল্লভ ভাই প্যাটেল। তাই মোদি সরকার এই কংগ্রেসি নেতার পর্বত প্রমান স্ট্যাচু বানিয়ে সন্মান দেয়। কিন্তু কাশ্মীরের জনগণ একটি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হলেন।

মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের শাসক হিন্দু মহারাজ হরিসিং দু’মাস পর্যন্ত কাশ্মীরকে স্বাধীন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি এটা করেছিলেন পাকিস্তান ও ভারতের সাথে একটি স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে। কিন্তু এই পরিস্থিতি বদলে গেল ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে যখন মহারাজা যেসব কাশ্মীরের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাশ্মিরি মুসলমান সৈনিকদের কাছে থেকে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করে নিয়ে স্থানীয় হিন্দু গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এই ঘটনা পাকিস্তানের পশতুন উপজাতির মধ্যে উত্তেজনা উস্কে দেয়। পশতুনদের নেতৃত্বে সিমান্ত অঞ্চলের উপজাতি অদিবাসিরা কাশ্মিরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়। তবে এই উপজাতীয়রা পাকিস্তানের সম্মতি ছাড়াই লড়েছিল।

মহারাজা ভারতের গভর্নর জেনারেলের কাছে সামরিক সহায়তা চাইলেন। উত্তেজনা দমনে হিন্দু শাসকদের সেনাবাহিনী, হিন্দু চরমপন্থি সংগঠন RSS-কে সঙ্গে নিয়ে জম্মুর মুসলিমদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন মুসলিমদের হত্যা করা হয়; যার সংখ্যা ২০ হাজার থেকে ১ লাখ হতে পারে। এই হত্যাযজ্ঞটি উপমহাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার অনুকূলে ইন্ধন যোগায়, যাতে প্রায় ২০ হাজার হিন্দু ও শিখ নিহত হয় বলে ধারনা করা হয় ।

হিন্দু শাসক ২৬ অক্টোবর কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত করে সাময়িক ব্যবস্থাপত্রে স্বাক্ষর করেন। পাকিস্তান এই বলে প্রতিবাদ করে যে, মহারাজার কাশ্মীর করায়াত্তকরণের কোনো অধিকার নেই। কেননা, তখন পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে স্থিতাবস্থা চুক্তিটি বহাল ছিল। ১৯৪৭ সালর ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সেনাদল কাশ্মীর অবতরণ করে বিদ্রোহী এবং পস্তুন উপজাতিদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে।

এর মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এই মর্মে ওয়াদা করলেন যে, ‘‘জম্মু এবং কাশ্মীরের ভাগ্যের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। আমরা এ অঙ্গীকার শুধু কাশ্মীরবাসীকেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বকেও দিচ্ছি। আমরা এ থেকে পিছু হটবো না এবং হটতে পারি না।’’ দু’মাসের কিছু বেশি সময় পরেই ভারত এই বিরোধের বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে।

১৯৪৮ সালের ১৩ আগস্ট এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, একটি গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু আর কখনোই সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি এবং কোনো গণভোটও হয়নি।

পরবর্তী ৭০ বছরে কাশ্মীর বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তান ৩ বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়; যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকায়ন এলাকায় পরিণত করেছে। শুধুমাত্র ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেই ভারত প্রায় ৬ লাখ সৈন্য মোতায়েন রেখেছে; যারা ধর্ষণ, নিপীড়িন এবং বলপূর্বক অপহরণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ করেছে, যা এখনো অব্যাহত আছে।

হিসাব মতে, এ যাবৎ কাশ্মীরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানও তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষক-এর এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে একটি রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার ওপর বিধি-নিষেধপূর্ণ এলাকা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউস’ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রায় অর্ধেক জনগণ বিরোধপূর্ণ রাজ্য দুটিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পেতে চায়। যদিও ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই দাবী করে কাশ্মীরের জনগন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে চায়।

কাশ্মীর কখনোই ভারত বা পাকিস্তানের অংশ ছিলোনা। ভারত বা পাকিস্তান কেউই স্বাধীন কাশ্মীর চায় না।

নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ কাশ্মীর কি আর কখনো পাবে?