Home জাতীয় ইসলাম সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়, ঘৃণা ও সংঘাতের শিক্ষা দেয় না:...

ইসলাম সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়, ঘৃণা ও সংঘাতের শিক্ষা দেয় না: আল্লামা কাসেমী

উম্মাহ প্রতিবেদক: গতকাল (২৯ আগস্ট) বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গাজীপুর জেলার কর্মী সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৩টায় গাজীপুর টঙ্গী কলেজ গেটস্থ সানাই পার্টি সেন্টারে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাহদী হাসানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী নাসির উদ্দিন খান। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এখলাছুর রহমান রিয়াদ। আরো বক্তব্য রাখেন- গাজীপুর জেলা জমিয়তের সেক্রেটারী মাওলানা জাকির হোসাইন কাসেমী, মাদরাসা বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমদ এবং জেলা ছাত্র জমিয়তের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, এই মুহুর্তে মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী হলো ব্যক্তি গঠন। ব্যক্তি গঠন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ব্যক্তি থেকে সমাজ, জাতি ও দেশ গঠন হয়। ব্যক্তি যদি গঠিত না হয় সুষ্ঠু সমাজ গড়বে না, সুষ্ঠু জাতি গড়বে না এবং দেশ ও সুন্দর হবে না। ব্যক্তি গঠন হলে সমাজ, দেশ, জাতি সবকিছুই সুন্দর হবে। এজন্য ছাত্র জমিয়তের প্রতিটি কর্মীকে আগে নিজেকে পূর্ণ আদর্শবান হিসেবে গঠিত হওয়া লাগবে।

তিনি বলেন, নিজেকে আদর্শবান ও পরিশুদ্ধ রূপে গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হল- ইলমে নুবওয়াতের আলো দ্বারা নিজেকে আলোকিত করতে হবে। তাফাকুহুফিদ্বীন তথা দ্বীনের সঠিক উপলব্ধি অর্জন করতে হবে। যদি তাফাকুহফিদ্বীন অর্জন করতে সক্ষম না হয়, তাহলে নুবুওয়াতের ওরাসাতের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবে। এজন্য প্রতিটি কর্মীকে ইলমি তথা শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যদি যোগ্যতার সাথে জাতির নেতৃত্ব দিতে হয়, তাহলে ইলমি যোগ্যতার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, আদর্শ ও যোগ্যরূপে গড়ার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হল- আমানতদারী, দ্বিয়ানতদারী মেনে চলা।

তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মীকে অন্তর দিয়ে দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসাতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দেশে অশান্তি সৃষ্টি হয় এমন কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। এবং আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা সার্বভৌত্ব রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব; এটা দৃঢ়ভাবে অন্তরে পোষণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে ভারতে শত শত বছর ধরে বসবাস করে আসা মুসলমানদেরকে রাষ্ট্রহীন নাগরিক করা হচ্ছে। সেই দেশের মুসলমানদের উপর ইতিহাসের জঘন্যতম জুলুম-অত্যাচার করা হচ্ছে। মুসলিম এই পরিচয়টাই যেন তাদের অপরাধ। ভারতীয় মুসলমানরা এসব অত্যাচার-নিপীড়নের কারণে বর্তমানে খুবই অসহায় দিনাতিপাত করছে। তাদের জান, মাল, ইজ্জত, আব্রুর কোন নিরাপত্তা নেই।

তিনি বলেন, তাদের হিন্দুত্ববাদি আগ্রাসীদের জুলুম শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা আমাদের প্রিয় মাতৃভূতিমেও বিশৃঙ্খলা ছড়াতে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদে নানাভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে। এজন্য আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে আমাদের সকলকে দেশকে ভালবাসতে হবে এবং দেশের শত্রুদের সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। যদি আধিপত্য আগ্রাসীদের ষড়যন্ত্র থেকে আমরা আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে কাশ্মীর, মায়ানমারের মত আমাদের করুণ অবস্থা হওয়া সময়ের অপেক্ষা।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশকে হেফাজত করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে কোরআন সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালানায় সোচ্চার হতে হবে। এতে করে দ্বীনের হেফাজত হবে ও দেশের হেফাজত হবে। দেশের হেফাজতের জন্য ছাত্র সমাজকে জেগে উঠতে হবে। যদি দেশ ও জাতির হেফাজত করার জন্য ছাত্র সমাজ জেগে না উঠে, তাহলে মায়ানমার, ইন্ডিয়া, ফিলিস্তিনী মুসলমানদের মত আমাদের অবস্থাও করুণ হবে।

আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, আজকে আমাদের দেশ নিয়ে বহুমুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে- এমন আশংকা বাতাসে ভাসছে। কখনো শোনা যায় আগরতলা বিমান বন্দর সম্প্রসারণ করার জন্য সীমান্তে যে পিলার গাড়া হয়েছে সেগুলো তুলে ফেলা হচ্ছে। আবার কখনো শোনা যায় বাংলাদেশের বিস্তির্ণ গভীর সমুদ্র সীমানা অন্য রাষ্ট্রের অনুকূলে ছেড়ে দিতে তোড়জোড় চলছে। যদি দেশ এভাবে চলতে থাকে, তাহলে আল্লাহ না করুন- রোহিঙ্গারা যেভাব রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছে আমাদেরও সেই পরিণতি নেমে আসবে। এজন্য দেশের সার্বভৌমত্ব হেফাজতের জন্য যেকোন ধরণের ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। লোভ-লালসার পরিত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আজ আমাদের দেশে মা-বোনদের ইজ্জত আব্রুর কোন নিরাপত্তা নেই। সমাজে লুটপাট, দূর্নীতি, অবিচার ও ব্যভিচারের সয়লাব চলছে। শিক্ষা ও সংস্কতিতে ভিনদেশী আগ্রাসন ও প্রেসক্রিপশনের ফলে আমাদের চিরাচরিত সামাজিক রক্ষণশীলতা হারিয়ে পরিবার ও সমাজে অশান্তি নেমে এসেছে। যে কারণে ঘরে থেকেও মানুষ এখন নিরাপদবোধ করতে পারছে না। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা ও শান্তি নেই। ধর্ম ও আদর্শহীন শিক্ষা ও বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা না গেলে এদেশের মা-বোনদের ইজ্জত আব্রু হেফাজত করা কঠিন হয়ে পড়বে। মানুষের জানমাল নিরাপদ থাকবে না।

তিনি বলেন, জমিয়তের প্রধান লক্ষ হল- দেশ ও জাতিকে নিরাপদ রাখতে সর্বৌতভাবে সচেষ্ট হওয়া। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায়, ইনসাফ, সুবিচার ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতে ইসলাম নির্দেশিত হুকুম বাস্তবায়ন করা। দূর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। পরিবার ও সামজে শান্তি বজায় রাখতে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করে আদর্শ পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা চালু করা। এবং নিরপেক্ষ আদর্শ বিচার ব্যবস্থা কায়েম করা।

তিনি বলেন, আজ আমাদের শপথ হোক, দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে কাজ করবো এবং ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও বিধি-বিধানকে সংরক্ষণ করবো। ইসলাম আমাদেরকে দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও ইনসাফপূর্ণ আচরণের শিক্ষা দেয়, সামাজিক সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়। ইসলাম কখনোই ঘৃণা ও সংঘাতের শিক্ষা দেয় না।