Home জাতীয় পিন্ডি থেকে আজাদ হয়েছি দিল্লির গোলামির জন্য নয়: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

পিন্ডি থেকে আজাদ হয়েছি দিল্লির গোলামির জন্য নয়: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

টঙ্গীতে প্রিন্সিপাল নূরুল হুদা স্মরণে ইসলামী সাহিত্য ও সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রবর্তনে মতবিনিময় সভা

টঙ্গী সংবাদদাতা: জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, পিন্ডি থেকে আজাদ হয়েছি দিল্লির গোলামির জন্য নয়। আমরা কোন অবস্থাতেই দিল্লির কাছে মাথা নত করবো না।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে যে কোন জাতিকে পদানত করা যায়। আমাদের বিরুদ্ধে সেই আগ্রাসন শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে আলেম, সাংবাদিক, লেখক ও আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদেরকে সচেতন ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা স্মরণে ইসলামী সাহিত্য ও সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রবর্তনের লক্ষ্যে আজ (১০ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গীতে দেশের খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরামদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘নূরাইন ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও দোয়া মাহফিলে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) মহাসচিব এম. আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়েজ উল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম গাজীপুরের আমীর মুফতি মাসউদুল করীম, মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ, মাওলা ইকবাল মাসুম, মাওলানা আবু তৈয়ব, মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব, মাওলানা ইউনুস শাহেদী, মাওলানা আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

টঙ্গীর আল-হেলাল একাডেমী প্রাঙ্গনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, সত্যিকারের সৎ ও গুণি মানুষরা মরেও অমর হয়ে থাকেন। তাঁদের মৃত্যুর পরও যেমন মানুষ তাঁদের অমর কীর্তি গুণে উপকৃত হতে থাকেন, তেমনি তাঁদের সৎ কর্ম ও গুণাবলীর আলোচনা করে, তাঁদেরকে স্মরণ করে, উত্তরসুরিরা উত্তম কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন। এরকম সৎ ও গুণী মানুষরা মৃত্যুর পরও কবরে সাদক্বায়ে জারিয়ার সাওয়াব লাগাতার পেতে থাকেন। ঠিক এরকমই একজন গুণী মানুষ ছিলেন- প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.)। তিনি একদিকে যেমন ইলমে ওয়াহীর জ্ঞানের ভণ্ডারে ভরপুর আলোকজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, অন্যদিকে জাগতিক শিক্ষায়ও তিনি ছিলেন সুশিক্ষিত, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞতায় ভরপুর একজন আদর্শবান নাগরিক।

তাঁরা বলেন, ছাত্র জীবন শেষ করার পর দীর্ঘ শিক্ষকতার পেশায় তিনি অগণিত ইলম পীপাসুকে যেমন নববী ইলমের খোরাক জুগিয়ে হাজার হাজার আলেম গড়ে তুলতে কাজ করে গেছেন, তেমনি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে ইনসাফ, আদর্শ, সুবিচার এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন চেষ্টা সাধনা করে গেছেন। তিনি তাঁর সন্তানদেরকেও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে সৎ ও সঠিক নীতি-আদর্শে আদর্শবান করে গেছেন। যার ফলে তাঁরাও এখন নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ্যতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশ ও জাতির সেবায় সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এই মহান বুযূর্গ আলেমকে আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েও নিজ কর্মগুণে অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন। আমরা তাঁর মাগফিরাত ও জান্নাতে উঁচু মাকামের জন্য মহান রবের কাছে প্রার্থনা করি।

বক্তারা আরো বলেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.) যেভাবে দেশ ও উম্মাহর স্বার্থে কাজ করে গেছেন, তাঁর সুযোগ্য সন্তানরাও সে পথেই চলার চেষ্টা করছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আজকে তাঁর সুযোগ্য সন্তানগণ পিতার দেখানো পথেই পা বাড়াচ্ছেন। তাঁরাও তাদের গর্বিত পিতাকে স্মরণ করছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে। এবং তাঁরা চাচ্ছেন তাদের পিতাকে স্মরণের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতি উপকৃত হোক। দেশ ও জাতির মধ্যে নীতি-নৈতিকতার প্রচার-প্রসার ঘটুক। দেশের সকল স্তর থেকে অনৈতিকতা দূর হোক। এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই “নূরাইন ফাউন্ডেশন” গড়েছেন তাঁরা।

তাঁরা বলেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.) লেখালেখি, সাংবাদিকতা ও সাহিত্যকর্মেও প্রচুর খেদমত করে গেছেন। তাঁর সন্তানরাও এই ধারায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা সকলেই জানি যে, আদর্শ দেশ, জাতি, সমাজ ও পরিবার গড়ার জন্য লেখক-সাংবাদিকদের ভূমিকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। লেখালেখি ও সাংবাদিকতার এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবেন, এই ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে প্রতি বছর তাদেরকে সম্মানিত ও উৎসাহিত করতে পুরষ্কৃত করার উদ্যোগ পরিচালনা করা হবে। এতে করে যারা এসব ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন, তারা যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনি আরো অনেকেই লেখালেখি, সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় উৎসাহবোধ করবেন। গুণীজনকে পুরষ্কৃত করলে আরো গুণিজন তৈরি হয়, উৎসাহিত হয়। সম্মানি মানুষকে সম্মান জানালে আরো সম্মানি মানুষ তৈরি হয়।

তাঁরা বলেন, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ’র উদ্যোগে ‘নূরাইন ফাউন্ডেশন’ যে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ভাল লেখক, ভাল সাংবাদিক, ভাল সাহিত্যিক, ভাল কবি, যারা আছেন। যাদের চিন্তা-চেতনা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে, দেশ ও জাতির স্বার্থের পক্ষে, তাদের মধ্যে কৃতিত্ব অর্জনকারীদেরকে খুঁজে বের করে নূরাইন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সম্মান জানানো, পুরষ্কৃত করা, ক্রেস্ট প্রদান করা; এসকল কাজের মধ্য দিয়ে প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.)কে স্মরণ করা হবে। পাশাপাশি তাঁর সন্তানদের এসকল পুণ্যময় কাজ ইহকাল ও পরকালে মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। এবং সাদক্বায়ে জারিয়া হিসেবে এর সাওয়াব প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.)এর কবরে পৌঁছতে থাকবে।

তাঁরা বলেন, প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল হুদা (রাহ.) সত্যিই ঈর্ষনীয় এক উত্তম মানুষ। দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েও আজ তিনি আমাদের সকলের মাঝে অমর হয়ে ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আতাউর রহমান খসরু, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা সৈয়দ শামসুল হুদা, মুফতি জহির ইবনে মুসলিম, মাওলানা আবু বকর সিরাজী, ড. শামসুল হক সিদ্দিক, মাওলানা আবুল বাশার, মাওলানা গোলামুল কুদ্দুছ, মাওলানা ওসমান গনি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মরহুম মাওলানা নূরুল হুদা ও তাঁর সহধর্মিনী মরহুমা নূর খাতুনের রূহের মাগফিরাত কামনা এবং কাশ্মিরসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের হেফাজত ও কল্যাণ কামনা করে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দোয়া পরিচালনা করেন।