Home জাতীয় ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামায: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামায: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

আসাদুজ্জামান খান: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তোমরা আল্লাহর রশিকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। অপরদিকে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কুরআনের রশিকে আঁকড়ে ধরো’। সুতরাং আল্লাহর রশিকে মজবুত করে ধরতে হলে সবার আগে কুরআনের রশিকে ধরতে হবে। কুরআনের রশিকে ধরার মানে হচ্ছে, বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। এ জন্য আমাদের সকলকে কুরআনের ছাত্র হয়ে যেতে হবে।

গতকাল (২৮ ডিসেম্বর) শনিবার রাজধানী ঢাকার মুগদা স্টেডিয়াম ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন মাঠে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি ও সামাজিক সেবামূলক সংগঠন আল-মাদানী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর ৩ দিন ব্যাপী ৯ম বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের এত বেশি ফযীলত যে, কেউ যদি অজু ছাড়া মুখস্ত তিলাওয়াত করেন, তাতেও একটি হরফে ১০ নেকি পাওয়া যায়। অজুর সাথে পড়লে ২৫ নেকি। নামাযে বসে পড়লে ৫০ নেকি, দাঁড়িয়ে পড়লে ১০০ নেকি। তাই কালামে পাকের নাজেরা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষার্জন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সম্মেলনে উপস্থিত মুসল্লীদের একাংশ। ছবি- উম্মাহ।

তিনি বলেন, ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো- নামায। তাই আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে খুশু-খুজু সহকারে আদায় করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তাকবিরে ঊলার সাথে ৪০ দিন একাধারে নামায আদায় করবে, তার জন্য দু’টি শুভ সংবাদ। এক. মুনাফিকী থেকে মুক্তি। দুই. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জানন্নাত লাভ। এজন্য ভাই আমাদেরকে যাবেতা তথা নিয়ম রক্ষার নামায আদায় নয়, বরং রাবেতা তথা পরিপূর্ণ খুশু-খুজু ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে নামা নামায আদায় করতে হবে এবং গুনাহমুক্ত যিন্দেগী গড়তে হবে।

তিনি বলেন, মানুষ গুনাহ করে দুই কারণে, এক. নফসে আম্মারা তথা প্রবৃত্তির তাড়নায় পড়ে। দুই. শয়তানের ধোঁকায় পড়ে। একজন মায়ের জন্য তার সন্তানকে বুুকের দুধ ছাড়ানো যেমন কঠিন, গুনাহমুক্ত জীবন গড়াটাও তেমনই কঠিন। তাই আমাদেরকে গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার জন্য ব্যাপক সংগ্রাম-সাধনা করতে হবে। আর এটাই হলো তাকওয়ার যিন্দেগী।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী হাদীসে রাসূলের উদ্ধৃতি দিয়ে অত:পর বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচটি পর্যায় আসার আগের স্তরের অতীব গুরুত্ব দিতে উপদেশ দিয়েছেন। যথা- ১. হায়াত বা জীবনের ক্বদর করতে হবে মৃত্যু আসার আগে আগে। ২. যৌবনের ক্বদর করতে হবে বার্ধক্য আসার আগে আগে। ৩. সুস্থতার ক্বদর করতে হবে রোগব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার আগে আগে। ৪. সম্পদের ক্বদর করতে হবে দারিদ্রতা আসার আগে আগে। ৫. ফুরসত বা ব্যস্ততাহীন সময়ের ক্বদর করতে হবে ব্যস্ততা আসার আগে আগে।

তিনি বলেন, এজন্য ভাই সময় নষ্ট করা যাবে না, সময়ের ক্বদর করতে হবে, আর জীবনের মূল্যায়ন করতে হবে।

বয়ান শেষে আল্লামা কাসেমী উপস্থিত মুসলিম জনতাকে সাথে নিয়ে মন উজাড় করে মহান আল্লাহর দরবারে রহমত, বরকত ও হিদায়াত কামনা করে সকলের জন্য দুআ করেন। তিনি বাংলাদেশের শান্তি ও উন্নতির জন্যও দোয়া করেন।

আল-মাদানী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান মাওলানা ইমতিয়াজ উদ্দিন সাব্বির-এর পরিচালনায় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশেষ অতিথির বয়ান পেশ করেন ভারত থেকে আগত শাইখুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ.)এর দৌহিত্র আল্লামা আজহার মাদানী।

আরো বয়ান করেন, মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী, মাওলানা হিদায়াতুল্লাহ আজাদী, মাওলানা ক্বারী শোয়াইব আহমদ আশরাফী, ক্বারী হাফেজ সাইদুল ইসলাম আসাদ, ক্বারী হাফেজ সাইফুর রহমান তাক্বী প্রমুখ।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ ট্রাক ও কার্ভাড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান । সম্মেলনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আল-মাদানী ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন।

সম্মেলনের শেষ দিন আজ রোববার প্রধান অতিথি হিসেবে বয়ান পেশ করেন প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (কুয়াকাটা হুজুর)।