Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন আদর্শ মাতৃত্বের প্রতিচ্ছবি বনাম ভ্রষ্ট বামদের মুখোশ উন্মোচন

আদর্শ মাতৃত্বের প্রতিচ্ছবি বনাম ভ্রষ্ট বামদের মুখোশ উন্মোচন

।। শায়খ আহমাদুল্লাহ ।।

আজকাল বেশির ভাগ মা-বাবা অর্থ উপার্জনের পেছনে এত বেশি সময় ব্যায় করে থাকেন যে, নিজেদের সন্তানদেরকে যে কিছুটা সময় দিবেন, সেই ফুরসতটুকু তাদের হয়ে ওঠে না। বাসা-বাড়িতে যে সময়টুকু তারা কাটিয়ে থাকেন, সে সময়টুকুতেও তারা বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যাস্ত থাকেন। নিজের আদরের সন্তানকে একান্তে সময় দেওয়ার সুযোগ খুব কম মা-বাবারই হয়ে ওঠে।

ঠিক এমনি এক সময়ে একজন মা ব্যাট হাতে, বল হাতে খেলার মাঠে তার সন্তানকে সঙ্গ দিয়েছেন। আর সেই মুহূর্তের ছবিগুলো ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে।

বেশির ভাগ মানুষ মা-পুত্রের এমন প্রাণবন্ত দৃশ্যকে প্রশংসনীয় ও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও, কিছু মানুষ সেগুলোর সমালোচনাও করছে। বিশেষ করে বোরখা পরিহিত একজন মা কেন খেলতে আসবেন, ব্যাট হাতে নিবেন, বল হাতে নিবেন? আর সন্তানের সাথে খেলায় সঙ্গ দিলেও তিনি বোরখা পরে কেন দিবেন, এ নিয়ে সমালোচনা করছেন কিছু কিছু মানুষ।

সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের সমাজে আজকাল বেশির ভাগ মায়েরা, বাবারা নিজেরা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত। সন্তানদের হাতেও তারা বিভিন্নভাবে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস তুলে দিচ্ছেন। ভিডিও গেমস, ফেসবুক ইত্যাদি হাতে তুলে দিচ্ছেন। এগুলোর মাধ্যমে সন্তানদেরকে একদিক থেকে তারা পঙ্গু করে তুলছেন নিজেদের অজান্তে, অপরদিক থেকে সন্তানদের যে স্বাভাবিক বিকাশ হওয়ার কথা ছিল- সেটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানকে বাইরের অন্য ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলতে দিচ্ছেন; যেখানে খারাপ ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশে তাদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে একজন মা নিজে যখন ছেলের খেলার সাথীর জায়গায় অবতীর্ণ হন এবং ছেলেকে সময় দেন, সন্দেহাতীত ভাবে সেটি প্রশংসার দাবি রাখে।

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) তিনি তার প্রিয় নাতি হাসান এবং হুসাইন আনহুমাকে নিজের পিঠে তুলে নিজে গোড়া সেজে তাদেরকে বিনোদন দিয়েছেন, তাদের খেলার সাথি হয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে)।

অতএব, একজন বাবা, একজন মা তাদের সন্তানদের সাথে খেলার সাথীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন, বিশেষ করে ফিতনার এই যুগে যখন বাইরে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশতে গেলে বিপথগামী হওয়ার, অসৎ পথে চলে যাওয়ার, বাজে ছেলে-মেয়েদের বাজে স্বভাব তার ভেতরে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে, এরকম সময়ে নিজের বাবা-মা নিজের সন্তানদেরকে সময় দেওয়া কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ- সেটি বলাই বাহল্য।

ছবি- ফিরোজ আহমদ।

যারা সমালোচনা করছেন সে মায়ের বোরখা নিয়ে, বোরখা পরিধান করে তিনি খেলায় অংশ গ্রহণ করা নিয়ে, অমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, এক সময় সে সমস্ত লোকগুলো বলতেন- পোশাকের কোন দোষ নেই যার যে পোশাক খুশি সে পোশাক পরিধান করার স্বাধীনতা থাকা উচিত। সেই মানুষগুলোই এখন পর্দানশীন মায়ের বোরকা নিয়ে, পোশাক নিয়ে কথা তুলছেন। এবং তারা দাবি করছে, এ পোশাক পরিধান করার কারণে নাকি বাঙ্গালীয়ানা ছুটে গেছে।

আরও পড়তে পারেন-

প্রিয় ভাইয়েরা, বাঙ্গালী নারীর আবহমান কাল থেকে যে প্রতিচ্ছবি আমরা দেখে আসছি। আমাদের সিনিয়রা দেখে আসছেন মাথায় কাপড় দেওয়া অথবা ঘোমটা দেওয়া নারী, হিন্দু কি, মুসলমান কি, তখন সব ধরনের নারীরাই মাথায় ঘোমটা দিতেন।

আজ যারা বোরকা পরা মায়ের পোশাক নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে তার বাঙ্গালীয়ানা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তারা নিজেরা মাথায় ঘোমটা দিয়ে শেষ কবে কাপড় পরেছেন এটি তারা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন। এ সমস্ত মানুষগুলো যারা নিজেদেরকে নারীবাদি বলে, মানবতাবাদি বলে দাবি করে এবং বিভিন্ন মুখরোচক স্লোগান দিয়ে নিজেদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তাদের সে সমস্ত স্লোগানগুলো যে ধোঁকা এবং প্রতারণায় পরিপূর্ণ, সেটা এ সমস্ত ঘটনার মাধ্যমে আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়।

যে লোকগুলো বলতেন পোশাক যার যার খুশি মতো স্বাধীনভাবে পরিধান করার অধিকার থাকা উচিত, কে কি পোশাক পরবে সেটা তার ব্যাপার। আল্লাহর বিধানকে মানতে গিয়ে, পর্দার বিধানকে মানতে গিয়ে যখন একজন পর্দানশীন মা নিজে তার খুশি মতো পোশাক পরিধান করেছেন, তিনি যখন বোরখা পরিধান করেছেন, তখন সে মানুষগুলোকেই সেটা নিয়ে নানা কুরুচিপূর্ণ, আভক্তিকর এবং নির্লজ্জ মন্তব্য করতে আমরা দেখেছি।

তাহলে এ মানুষগুলো আদতে ভন্ড, নির্লজ্জ, প্রতারক এরা মুখরোচক বুলির আড়ালে থেকে আমাদেরকে প্রতারিত করতে চায়, আমাদের সমাজের মানুষকে বিপদগামী করতে চায়- সে বিষয়টি আবারো প্রমাণিত হয়ে গেল।

প্রিয় পাঠক, এদের যতসব প্রশ্ন হলো বোরকা নিয়ে, হিজাব নিয়ে, নিকাব নিয়ে। এর বাইরে একজন পুরুষ যখন প্যান্ট, শার্ট পরেন তখন তাদের কাছে বাঙ্গালীয়ানা ছুটে যায় না। এদের একজন মেয়ে মানুষ যখন প্যান্ট বা টি-শার্ট পরে তখনও তাদেরকে বাঙ্গালীয়ানা ছুটার প্রশ্ন তুলতে কখনো দেখা যায় না।

প্রিয় পাঠক, পোশাক পরিধানের মধ্য দিয়ে যদি বাঙ্গালীয়ানা প্রমাণ করতে হয়, তাহলে এদেশের মানুষ মাত্র রিক্সাওয়ালা ও হুজুর শ্রেণীর মানুষ, তাও অর্ধ বাঙ্গালীয়ানা, তাদের মধ্যে রয়েছে বলা যেতে পারে। কারণ, তারা বেশিরভাগ লুঙ্গি পরে থাকেন সবসময়।

প্রিয় পাঠক, আজ লুঙ্গির জায়গা প্যান্ট দখল করে নিয়েছে, পাঞ্জাবীর জায়গা শার্ট বা টি-শার্ট দখল করে নিয়েছে। কই তখন তো বাঙ্গালীয়ানা ছুটে যাওয়ার প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় না। তাহলে মুলত: এ লোকগুলো বাঙ্গালীয়ানার ছবক দিতে গিয়ে আমাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরাতে চায়। এরা শয়তানের চক্র কিংবা মানুষ রূপে শয়তান। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে, আমাদের গোটা সমাজকে মানুষ রূপি শয়তান থেকে এবং তাদের প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা থেকে হেফাজত এবং নিরাপদে রাখুন।

প্রিয় পাঠক, আমাদের সকলের উচিত হবে বাবা এবং মায়ের জায়গা থেকে বড় ভাই এবং বড় বোনের জায়গা থেকে আমাদের অধীনস্থ ছোট ভাই-বোনদেরকে, আমাদের সন্তানদেরকে একান্তে সময় দেওয়া। তাদের খেলার সঙ্গী যদি আমরা নিজেরা হয়ে যেতে পারি তাদেরকে আনন্দ এবং বিনোদনে আমরা সময় দিতে পারি, তাহলে শিশু-কিশোরদের বখে যাওয়ার যে প্রবণতা যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটি অনেকখানি কমে যাবে, ইনশাআল্লাহু তায়ালা।

তবে মা তার সন্তানকে পেশাদার ক্রিক্রেটার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা করবেন কিনা সে বিষয়টি গবেষণা সাপেক্ষ বিষয়। তবে মৌলিকভাবে এ কথা বলা যায় যে, ইসলাম খেলাধুলার মত বিষয়গুলোকে জীবনের টার্গেট বানিয়ে নেওয়া, জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেওয়া, পেশা বানিয়ে নেওয়াকে কোন অবস্থাতেই সমর্থন করে না। কারণ, এগুলো মানুষের ইহজাগতিক অথবা পারোলৌকিক কল্যাণের মৌলিক কোন বিষয় হতে পারে না।

খেলা তো নিছকই খেলা, এটাকে ইসলাম সেভাবে দেখে। তারপরেও এ বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরামের গবেষণালব্ধ ফতোয়ার জন্য অপেক্ষা করব; সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু বাবা-মা’র জন্য সন্তানের সাথে খেলায় সামিল হওয়া এটি রাসূল (সা.)এর আদর্শ নীতি। তিনি তাঁর নাতীদের সাথে করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন আমাদের সকলকে রাসূলের সুন্নাহ সঠিকভাবে অনুসরণ করার এবং সব ধরণের ফেতনা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

অনুলিখনে- ইফতিখার আহমদ (আতিক)

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।