Home রাজনীতি ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ বারিধারাস্থ ময়মনসিংহ জেলা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ বারিধারাস্থ ময়মনসিংহ জেলা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ বারিধারাস্থ মোমেনশাহী জেলা শাখার কাউন্সিল সভা গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। এতে আগামী সেশনের জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়।

মাওলানা মাহদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ও ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম তোফায়েল, ছাত্র জমিয়ত ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ এবং ছাত্র জমিয়ত বারিধারাস্থ মোমেনশাহী জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

গতকাল রাতে বারিধারাস্থ ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র জমিয়তের কাউন্সিল সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ছাত্র জমিয়তের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি ও উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট মন্ডিত জীবন গঠন, যথাযথভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিকালীন সময়ে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি মনোনিবেশ, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, সেবামূলক সামাজিক কর্মকাণ্ডে শরীক হওয়া, নিয়ম মেনে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়নের রূপরেখা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়তে পারেন-

মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ছাত্র জমিয়তের নেতা-কর্মীদেরকে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যোগ্য আলেম হয়ে গড়ে ওঠার প্রতিও গুরুত্বারোপ করে বলেন, আপনারাই সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে ইনসাফ, সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিবেন। পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত ও ঈমানহারা করার মিশনে নিয়োজিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকার মোকাবেলা করতে হবে আপনাদেরকে। বিশেষ করে এনজিও ও খ্রীস্টান মিশনারী কর্তৃক মুসলমানদেরকে ঈমানহারা করার সুগভীর চক্রান্তের জাল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে ছাত্র জমিয়তকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়া এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লুটপাট, দমন-পীড়ন ও অর্থপাচার বন্ধ করে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে আপনাদেরকে। এসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার কাজে দুর্বল জ্ঞান ও ইলম দিয়ে জাতিকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মাওলানা জয়নুল আবেদীন জমিয়তের ইতিহাস ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। এরপর তিনি ছাত্র জমিয়তের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গভীর মনোযোগের সাথে কিতাব মুতালায়ার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে ব্যক্তি জীবনে উন্নতি করতে হলে কঠোর শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে চলার অনুশীলন এখন থেকেই করতে হবে। একে অপরের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও বিনয়ী আচরণের চর্চা করতে হবে। ছাত্ররা আচরণগত ও আমলে উন্নতি করতে পারলে আরো অনেকেই দ্বীনি শিক্ষার প্রতি অনুপ্রাণিত হবে, আগ্রহী হবে এবং সাধারণ জনতার মাঝেও আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে এবং সহযোগিতামূলক মানসিকতায় অগ্রগতি ঘটবে।

তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও আপনারা সুশৃঙ্খল ও আদব বজায় রেখে চলাফেরা ও কথাবার্তা বলবেন। পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করবেন। এমনভাবে জীবন গড়বেন, যেন আপনাদেরকে দেখে সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি এবং জমিয়তের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়। মনে রাখবেন, জমিয়ত ক্ষমতার জন্য বা পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতি করে না। জমিয়তের রাজনীতি হলো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে ও সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম তোফায়েল বলেন, জন-দাবী আদায়ে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অনস্বীর্কায। অন্য কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষ ততটা সংগঠিত হতে পারে না যতটা হতে পারে ছাত্ররা। তারুণ্য নির্ভর তেজোদীপ্ত সংগঠিত ছাত্রদের দৃঢ় আন্দোলনের মুখে অনেক জালিম শাহীর পতন হয়েছে। নিকট অতীতে ৯০ দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়েছে ছাত্র রাজনীতির ফলেই।

তিনি বলেন, ছাত্ররা সমাজের সবচেয়ে বড় সচেতন গোষ্ঠী। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো অন্যায় করলে ছাত্ররাই প্রথমে ফুঁসে উঠে তার প্রতিবাদ জানায়। এজন্যই দেশ ও কওমের স্বার্থে কাজ করার লক্ষ্যে সুশৃংখল এবং সুসংগঠিত ছাত্র রাজনীতি যেকোনো দেশের সার্বিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

কাউন্সিল সভায় ছাত্র নেতারা বর্তমানে দেশ ব্যাপী মহামারি আকারে আবির্ভুত হওয়া ধর্ষণ, সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ, পুলিশের হেফাজতে হত্যা, দ্রব্যমূল্যে আগুন এবং দেশের সব সেক্টর দুর্নীতি, লুটপাট, আইন ও ইনসাফের শাসনের অভাব, সর্বত্র মানবতার হাহাকার এবং নগরিকদের মৌলিক অধিহার হরণের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বক্তারা সকল ক্ষেত্রে ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন৷ বক্তারা তরুণ ছাত্রদেরকে আগামীর নেতা ও দেশ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে বলেন, কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন থেকেই ন্যয়-নীতি ও ইনসাফপূর্ণ দেশ ও সমাজ গঠনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

কাউন্সিল সভায় মাওলানা মাহদী হাসানকে সভাপতি, হাফেজ আবু রায়হান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক, হাফেজ মুস্তাফিজুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চৌধুরী নাসির আহমাদকে সভাপতি, মুহাম্মদ আব্দুল আলীমকে সাধারণ সম্পাদক ও আনাসকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২০১৮-১৯ সেশনের জন্য ছাত্র জমিয়তের ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কাউন্সিল সভায় ছাত্র জমিয়ত ময়মনসিংহ জেলা বারিধারা ক্যাম্পাস শাখার আগামী সেশনের জন্য মাওলানা মাহদী হাসানকে সভাপতি, আব্দুল্লাহ আল মামুন সিনিয়র সহসভাপতি, হাফেজ আবু রায়হান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক, হাফেজ মুস্তাফিজুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তাওহিদুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। উপস্থিত কাউন্সিলগণ হাত তুলে সর্বসম্মতিক্রমে নতুন কমিটিকে অনুমোদন করেন।

সবশেষে মুনাজাতের মাধ্যমে কাউন্সিল সভার কার্যক্রম শেষ হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।