Home লাইফ স্টাইল আগর গাছ থেকে আতর তৈরির রহস্য

আগর গাছ থেকে আতর তৈরির রহস্য

মোগল আমলে বৃহত্তর সিলেটে আগর শিল্পের সুনাম ছিল বিশ্বজুড়ে। যদিও পরবর্তীতে সে শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সরকারিভাবে আতর উত্পাদিত হচ্ছে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকেই আগর চাষ করছে।

চিরসবুজ এক বৃক্ষ আগর গাছ। আর এই গাছের নির্যাস থেকেই তৈরি করা হয় আতর বা সুগন্ধি। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক দুই উপায়েই আগর থেকে সুগন্ধিজাতীয় আতর বা পারফিউম উৎপাদন করা হয়। 

আগর গাছের বাগানমৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা সুজানগর আগর-আতরের জন্য বিখ্যাত। এর আশেপাশের অঞ্চলে আগর চাষ করা হয়। এ গাছের উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত হয়। বড়লেখা উপজেলাধীন পাথারিয়া ও নিউ সমনবাগ অঞ্চল আগর চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি দেখতে অনেক লম্বা হয় যার কাণ্ড সোজা এবং লম্বা। একটি পূর্ণাঙ্গ আগর গাছ হতে হলে ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পরিপূর্ণ একটি আগর গাছ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। আগর গাছের কাঠ থেকে মহা-মূল্যবান আগর ও আতর তৈরি হয়।

আরও পড়তে পারেন-

আগর গাছ থেকেই তৈরি হয় আতর

-আগর গাছ থেকেই তৈরি হয় আতর ।

আগর গাছের বৈশিষ্ট্য

এই গাছের বয়স সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে দশ বছর হলে এর মোটা ডাল আগর উৎপাদনের জন্য উপযোগী হয়। দুইভাবে আগর গাছের কাণ্ড বা মোটা ডাল থেকে আগর উৎপাদন করা হয়- প্রাকৃতিক পদ্ধতি ও কৃত্রিম বা পেরেক পদ্ধতি। আগর গাছের বয়স পাঁচ থেকে দশ বছর হলেই তার কাণ্ড কালো বর্ণ ধারণ করে। এসময় গাছের বিভিন্ন স্থানে কালো ছোপ পড়ে। কালো হওয়া শুরু করলে তা পূর্ণ হতেও পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগে যায়। গাছের এ কালো অংশকেই বলা হয় আগর।

এমনই কালচে রং ধারণ করে

এমনই কালচে রং ধারণ করেকমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সী গাছের পুরু কাণ্ডের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত লাইন ধরে খুব ঘন ঘন করে মাঝারি আকারের পেরেক পুতে দেয়া হয়। কখন গাছে পেরেক পুততে হবে সেটি নির্ভর করে গাছের পুরুত্ব ও আকারের উপর, বয়সের উপরে নয়। ঠিকমতো না বাড়লে অনেক সময়ে দশ বছরের পুরনো গাছেও পেরেক পোতা সম্ভব হয় না। পেরেক পোতার পরে কমপক্ষে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কাণ্ডের পেরেকের গা সংলগ্ন অংশসহ ভেতরের অংশ কালো বর্ণ ধারণ করে বা আগর তৈরি হয়।   

গাছে এভাবেই পেরেক মারা হয়

গাছে এভাবেই পেরেক মারা হয় ।

যেভাবে আগর গাছ সংরক্ষণ করা হয়

আগর বাগান থেকে পূর্ণ বয়স্ক গাছ কেটে এনে প্রথমে তা টুকরো করে কেটে আলাদা করা হয়। এ টুকরোগুলোর দুইভাগ করা হয়। এক ভাগ ঘন কালো, হালকা কালো, তামাটে, অল্প তামাটে বর্ণের কাঠের টুকরা। অন্য ভাগে ধূসর, প্রায় সাদা বর্ণের কাঠের টুকরা থাকে। হালকা কালো, তামাটে ও অল্প তামাটে রঙের আগর কাঠের লগগুলোকে লম্বালম্বিভাবে কাটা হয়। এগুলোকে ফালি বলা হয়। অত্যন্ত যত্ন ও সুনিপুণভাবে ফালি করা হয় যেন কালো অংশ বা আগরগুলো আস্ত থাকে। 

নাররিাই ছুরন তৈরি করে থাকেচেরা ফালিগুলো স্থানীয় ভাষায় ধুম বলে। কারখানাগুলোতে ধুম তৈরির কাজগুলো মূলত নারীরা করেন। ধুম করার পর কাঠের ফালিগুলোকে কুচি কুচি করে কাটা হয়। চেরা ফালিগুলো কুচি কুচি করতে দা ব্যবহারের পাশাপাশি অনেক কারখানায় মেশিন ব্যবহার করা হয়। এরপর কুচি করে কাটা টুকরোগুলো একটি পাত্রে বা পানির ট্যাঙ্ক, ড্রাম, বড় হাঁড়িতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ভেজানো থাকে। এরপর কাঠগুলো তুলে পানি ঝরিয়ে ঢেকি দিয়ে গুঁড়া করা হয়। স্থানীয় ভাষায় কাঠের গুঁড়া অংশগুলোকে ছুরন বলা হয়। 

কাঠ থেকে ছুরন তৈরি করা হচ্ছে

-কাঠ থেকে ছুরন তৈরি করা হচ্ছে ।

এবার সুগন্ধি তৈরির পালা

পরবর্তীতে, ছুরনগুলোকেও কমপক্ষে আট থেকে দশ দিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। ছুরনগুলো খুব ভালোভাবে পচে গেলে সেগুলো তুলে নেয়া হয়। এরপর একটি পানি ভর্তি স্টিলের তৈরি বিশেষ পাত্রের মধ্যে রেখে পরবর্তীতে নিচ থেকে আগুনে তাপ দিতে হয়। পাত্রের চারিদিক খুব ভালোভাবে বন্ধ করা থাকে, অনেকটা এয়ার টাইটের মতো। এভাবে অনবরত ১০ থেকে ১২ দিন তাপ প্রয়োগ করতে হয়। পাত্রের উপরের দিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় একটা নল সংযুক্ত করা হয়। নলটির অপরপ্রান্ত আরেকটি পাত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে। 

কারখঅনায় এভাবেই আগরের তেল তৈরি করা হয়

-কারখানায় এভাবেই আগরের তেল তৈরি করা হয় ।

আগুনের তাপে ছুরন কাঠ সিদ্ধ হয়ে বাষ্পাকারে ওপরের নলে প্রবেশ করে। সেই বাষ্পগুলোই ঘনীভূত হয়ে অপর প্রান্তের পাত্রের মধ্যে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে থাকে। সেই জমতে থাকা পানির উপরেই তেলের আস্তরণ পড়ে। এই আস্তরণই আগর আতর তেল। এক তোলা আতর প্রায় ১২ গ্রাম পরিমাণ। জানা যায়, আতর বের করার পর উচ্ছিষ্টগুলো আগর বাতির ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করা হয়। তাছাড়া উচ্ছিষ্ট অংশগুলোও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি করা হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।