Home ফিকহ ও মাসায়েল ইসলামে হক ও অধিকার

ইসলামে হক ও অধিকার

।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।

আমাদের জানা উচিত যে, ইসলামী শরীয়ত ও বিবেক-বুদ্ধি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে একথা প্রমাণিত যে, আমাদের থেকে কিছু হক বা কর্তব্যের বিষয় দাবী করা হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু হক আল্লাহর আর কিছু হক বান্দার। বান্দার হকের মধ্যে কিছু দ্বীনি আর কিছু দুনিয়াবী। আবার দুনিয়াবী হকের মধ্যে কিছু নিকটাত্মীয়, কিছু অপরিচিত এবং কতক বিশেষ লোকদের সাথে সম্পর্কিত। কতক হক রয়েছে সাধারণ মুসলমানের প্রতি, কিছু রয়েছে বড়দের প্রতি আর কিছু রয়েছে ছোটদের প্রতি। এমনিভাবে আরও হক রয়েছে অন্যান্যদের প্রতি।

অজ্ঞতার কারণে অনেকের তো কিছু কিছু হক সম্পর্কে ধারণাই নেই। আর কিছু লোক, যাদের এ ব্যাপারে ধারণা আছে, বদ আমলীর কারণে সেগুলো আদায় করার ব্যাপারে কোন গুরুত্ব নেই। তাই এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু লিখতে মনস্থ করলাম। আশা করি এর দ্বারা সমাজের কিছু উপকার হতে পারে।

আল্লাহ তায়ালার হক

সর্বপ্রথম বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার হক বর্তায়। যিনি বিভিন্ন ধরনের নিয়ামতরাজী দিয়ে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং বেঁচে থাকার তাওফীক দান করেছেন। যিনি গোমরাহীর অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদেরকে হিদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। আর তদানুযায়ী আমল করার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের নিয়ামত প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার হক হলো নিম্নরূপ-

(১) তাঁর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন-হাদীস অনুযায়ী আক্বীদা-বিশ্বাস রাখা।
(২) আক্বায়েদ বা আক্বীদা-বিশ্বাস, আমল, চাল-চলন, লেন-দেন ও চারিত্রিকতায় যা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী হয়, তা-ই গ্রহণ করা এবং যা অপছন্দনীয় তা পরিত্যাগ করা।
(৩) আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও ভালবাসাকে সবার সন্তুষ্টি ও ভালবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়া।
(৪) কারো সাথে ভালবাসা বা বিদ্বেষ পোষণ করলে অথবা কারো উপকার করলে বা না করলে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই করা।

নবী-রাসূলগণের হক

আল্লাহ তায়ালার সত্তা, গুণাবলী ও তাঁর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয় সমহ আমরা যেহেতু নবী-রাসূল (আ.)গণের মাধ্যমে অবগত হয়েছি, ফেরেশ্তাগণ তাঁদের নিকট ওসব বিষয়ে আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন, এমনিভাবে আমরা পার্থিব অনেক উপকারী ও ক্ষতিকর বিষয় আম্বিয়া তথা নবী-রাসূল (আ.)গণের মাধ্যমে জানতে পারি। অনেক ফেরেশ্তা আমাদের উপকারের জন্য নির্ধারিত রয়েছেন ও আল্লাহ তায়ালার আদেশে তারা তাদের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন; সেহেতু নবী-রাসূলগণ (আ.) ও ফেরেশ্তাগণের (আ.) হক আল্লাহ তায়ালার হকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।

আরও পড়তে পারেন-

বিশেষ করে সরওয়ারে আলম প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইহ্সান, তাঁর অবদান আমাদের উপর সবচেয়ে বেশী। এজন্য তাঁর হকও সবচেয়ে বেশী। এসব হকের মধ্যে কিছু হল-

(১) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত বা নবুওয়্যাতের বিশ্বাস রাখা।
(২) সর্ববিষয়ে তাঁর অনুসরণ করা।
(৩) হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠত্ব, তাঁর ভালবাসা হৃদয়ে পোষণ করা।
(৪) বেশী বেশী তাঁর উপর দরূদ শরীফ পড়া।

ফেরেশ্তাগণের হক

(১) তাঁদের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখা।
(২) তাঁদেরকে মা’সূম বা নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ মনে করা।
(৩) তাঁদের নাম শুনলে ‘আলাইহিস্ সালাম’ বলা।
(৪) দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য ভক্ষণ করে মসজিদে প্রবেশ করলে বা মসজিদে বায়ু নির্গত করলে ফেরেশ্তাগণের কষ্ট হয়। তাই এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। তাই কাঁচা রসুন, পিঁয়াজ, মূলা, পান, তামাক ইত্যাদি ভক্ষণ করে মসজিদে প্রবেশ না করা। এমনিভাবে তেলযুক্ত বাতি বা হারিকেন জ্বালানো অথবা দিয়াশলাই ব্যবহার করার দ্বারাও দুর্গন্ধ ছড়ায়। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

আরও যেসব ক্রিয়া-কর্মের দ্বারা ফেরেশ্তাদের কষ্ট হয় বা ঘৃণার উদ্রেক হয়, সেগুলো পরিত্যাগ করাকে আবশ্যকীয় মনে করা। যেমন ফটো রাখা, শরয়ী প্রয়োজন ব্যতিরেকে কুকুর পালন করা, মিথ্যা বলা, গোসল ফরয হলে অলসতা করে পড়ে থাকা। যদ্বারা অনেক সময় নামাযও ছুটে যায়। শরয়ী বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া বিবস্ত্র না হওয়া। যদিও নির্জনে হয়।

সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইত (রাযি.)গণের হক

হযরাত সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইত (রাযি.)গণের যেহেতু হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দ্বীনি ও দুনিয়াবী উভয় ধরনের সম্পর্ক রয়েছে, সেহেতু তাঁদের হকও হযরত নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সেগুলো হলো-

(১) তাঁদের অনুসরণ করা।
(২) তাঁদেরকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসা।
(৩) হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.)গণকে আদেল বা ইনসাফকারী ও সত্যের মাপকাঠি বলে বিশ্বাস করা।
(৪) তাঁদেরকে যারা ভালবাসেন তাদেরকে ভালবাসা আর হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রাযি.)গণের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে, তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা।

উলামা ও পীর-মাশায়েখগণের হক

যেহেতু উলামায়ে কিরাম ও পীর-মাশায়েখগণ যাহিরী ও বাতিনীভাবে সারওয়ারে আলম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তরাধিকারী ও তাঁর স্থলাভিষিক্ত, সেহেতু তাঁদের হকও হুযর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হকের অন্তর্ভুক্ত। আর সেগুলো হলো-

(১) ফুক্বাহায়ে মুজতাহিদীন, উলামায়ে মুহাদ্দিসীন, আসাতিযায়ে কিরাম, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় গ্রন্থ প্রণেতাদের জন্য সর্বদা নেক দোয়া করা।
(২) শরয়ী প্রয়োজনানুসারে তাঁদের অনুসরণ করা।
(৩) যাঁরা জীবিত আছে, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। তাঁদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করা। তাঁদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও বিরোধিতা না করা।
(৪) স্বচ্ছল হলেও তাঁদের আর্থিক সহযোগিতা করা বা হাদিয়া তুহফা পেশ করা। [চলবে]

লেখকঃমুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকাখতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গীগাজীপুরউপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।