Home ইসলাম ইসলামে হাসাদ বা হিংসা থেকে বাঁচার উপায়

ইসলামে হাসাদ বা হিংসা থেকে বাঁচার উপায়

হাসাদ আরবি শব্দ। বাংলায় যার অর্থ হিংসা করা। হাসাদ বা হিংসা মানুষের চরিত্রের একটি মারাত্মক মন্দ বিষয়। এটি এতই নিকৃষ্ট একটি বিষয় যে, এর কারণে সকলেই কষ্ট পায়। যার প্রতি হিংসা করা হয় সে তো কষ্ট পায়ই, এমনকি হিংসুক নিজেও এর কারণে কষ্ট পেতে থাকে। এছাড়া হিংসার আগুন যখন জ্বলে ওঠে তখন আশপাশের মানুষও এ থেকে রেহাই পায় না। হাসাদ থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আর (আশ্রয় চাচ্ছি) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।” (১১৩:৫)

কুরআনে হাসাদ বা হিংসা

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে হাসাদ বা হিংসার নিন্দাবাদ করা হয়েছে। বিশেষ করে জাতি হিসেবে হিংসুক ইহুদিদের আচরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের অবাধ্যতার জন্য হাসাদ বা হিংসা নামের বদচরিত্রই দায়ী। যেমন— এক আয়াতে বলা হয়েছে, “নাকি তারা মানুষের প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদের স্বীয় করুণা দান করেছেন।” (৪:৫৪)

হাসাদ বা হিংসা মানুষের স্বভাবের মধ্যকার একটি চরম ঘৃণিত বদগুণ। তাই তো কুরআনে হিংসা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। হাসাদ বা হিংসা থেকে বারণ করে আল্লাহ তা’আলা অপর আয়াতে বলেন, “আর তোমরা কামনা করো না ঐ জিনিস, যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারোও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।”

আরও পড়তে পারেন-

হাসাদ বা হিংসা করা নিন্দনীয় এবং হিংসুক নিজেও সর্বদা চিন্তাযুক্ত থাকে। হিংসা নেক আমলকে ঐভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। হাসাদ বা হিংসাই হলো পৃথিবীর প্রথম গুনাহ, যা আসমান ও জমীন উভয় স্থানে প্রথম করা হয়েছিল। আসমানে আদম আ’লাইহিস সালামের প্রতি হিংসা করেছিল ইবলিশ। আর জমিনে কাবিল হিংসা করেছিল তার ভাই হাবিলের প্রতি।

হাদিসে হাসাদ বা হিংসা

অসংখ্য হাদিসে হাসাদের ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন— আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা পরস্পরের প্রতি হাসাদ বা হিংসা করো না, একে অন্যের পেছনে পড়ে থেকো না। আর তোমরা পরস্পর ভাই হিসেবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।” আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে ঐভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেভাবে আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়।”

হিংসার থেকে কী ক্ষতি হতে পারে

সমাজে হাসাদের অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে আছে। যেমন—

  • হাসাদ থেকে শারীরিক রোগের সৃষ্টি হয়।
  • মানুষের নিকট হিংসুকের মর্যাদা কমে যায়।
  • মানুষ হিংসুককে ঘৃণা করতে শুরু করে।
  • হিংসুক আল্লাহর নাফরমানি করে তাঁর নারাজি অর্জন করে।
  • আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে হিংসুকের সম্পর্ক নষ্ট হয়।
  • হাসাদ থেকে গিবত ও চোগলখোরির মন্দগুণের সৃষ্টি হয়।
  • হাসাদের কারণেই জুলুম, চুরি, শত্রুতা, হত্যাকান্ড ইত্যাদি ঘটনার পথ তৈরি হয়।

হাসাদ পরিত্যাগে সহায়ক গুণাবলি

হাসাদ বা হিংসা করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। তাই এ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের জন্যই জরুরি। কিছু অভ্যাস আছে যেগুলি নিয়মিত চর্চা করলে হাসাদ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। যেমন—

  • মানুষের মুখাপেক্ষিতা থেকে অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর প্রতি সর্বদা মনকে ঝুঁকিয়ে রাখা এবং আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা।
  • কারও সাথে দুনিয়ার বিষয়ে নয়, বরং আখিরাতের বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।
  • মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করার ব্যাপারে অভ্যাস গড়ে তোলা।
  • অন্যের কল্যাণ বা ভাল দেখলে মাশা-আল্লাহ বলা বা বরকতের দু’আ করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
  • অন্যের ভালোর জন্য সর্বদা দু’আ করা। বিশেষ করে কারও মাঝে আল্লাহর কোনো নিয়ামত দেখলে তার জন্য বেশি করে দু’আ করা।
  • আল্লাহর যেকোনো ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা।
  • হিংসার পরিণতিগুলি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা। হিংসা যে নেক আমলকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় তা সর্বদা চিন্তায় জাগ্রত রাখা।
  • মানুষের ঘৃণার ভয় করা। কারণ হিংসুককে সকলেই ঘৃণা করে থাকে।
  • হিংসা সৃষ্টি হয় এমন কিছুর বিপরীত কাজ করা। যেমন— হিংসা অন্যের সমালোচনা করতে উৎসাহিত করে। এমনটি না করে সর্বদা অন্যের প্রশংসা করা।
  • শাহওয়াত বা কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা।

হাসাদ বা হিংসার ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়

হিংসুকের ক্ষতি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় রয়েছে। যথা—

  • আল্লাহ তা’আলার কাছে হিংসুকের ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া। কারণ তিনিই বাঁচানোর একমাত্র মালিক। তাই তো তিনি সূরা ফালাকে আল্লাহ আমাদেরকে এ কথা শিক্ষা দিয়েছেন, “আর (আশ্রয় চাচ্ছি) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।”
  • তাকওয়া বা আল্লাহভীতি ও সবর বা ধৈর্য্য এখতিয়ার করা। যেমন আল্লাহ বলেন, “আর যদি তোমরা সবর করো এবং আল্লাহকে (যথাযথ) ভয় করো তবে তাদের (হিংসুকের) চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
  • আল্লাহর উপর সর্বদা তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। কেননা আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।”
  • অন্যের হিংসার দিকে মনোনিবেশ না করা এবং তা নিয়ে চিন্তাফিকিরও না করা।
  • আল্লাহ তায়ালার প্রতি মনোনিবেশ করা এবং সকল মুসলিমুকে মহব্বত করা।
  • গোনাহ থেকে তওবা করতে থাকা। কারণ গোনাহর কারণেই মানুষের উপর মুসিবত আসে।
  • সদকা করা। কারণ সদকার দ্বারা সকল প্রকার বালা-মুসিবত দূর হয়।
  • হিংসুকের প্রতি এহসান বা উপকার করে তার অন্তর্জ্বালা দূর করা।
  • এ বিশ্বাস অন্তরে জাগ্রত রাখা যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।