Home ওপিনিয়ন সুদূর আন্টার্কটিকাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ?

সুদূর আন্টার্কটিকাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ?

একবিংশ শতাব্দীতে প্লাস্টিকের প্রচলন প্রায় সর্বত্র এবং তাই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ। যেহেতু প্লাস্টিক প্রাকৃতিক উপায়ে নষ্ট হয় না এবং পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আছে নানারকম জটিলতা, তাই বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ যে বিশ্বব্যাপী এক বিরাট সমস্যা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমরা দেখেছি শহরের জঞ্জাল ফেলার জায়গাতে প্লাস্টিকের স্তুপের পাশাপাশি সমুদ্রে অব্দি অবাধে প্লাস্টিক দূষণ। বলা বাহুল্য সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রাণহাণিও আকছার ঘটে এই প্লাস্টিকের জন্য। এতদিন অব্দি সুদূর আন্টার্কটিকার জলে বা পলিতে প্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছিল।

কিন্তু তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক এবং আন্টার্কটিকা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (IMAS) একদল গবেষক এই প্রথমবারের মত আন্টার্কটিকার জমাট বাঁধা বরফের মধ্যেও পেলেন মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির প্রমাণ। তাদের এই গবেষণা প্রকাশিত হল Marine Pollution Bulletin জার্নালে।

আরও পড়তে পারেন-

আন্টার্কটিকা এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ

পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশের নাম আন্টার্কটিকা। পৃথিবীর ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরুর অবস্থানও এই মহাদেশেই। আন্টার্কটিকাকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর এবং এই মহাদেশের ৯৮% অংশই হল বরফ। এই বরফ গড়ে প্রায় ২ কিমি মত পুরু এবং বাকি মহাদেশের তুলনায় সমুদ্রপৃষ্ঠের সবথেকে বেশি উঁচুতে অবস্থিত।

প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে আন্টার্কটিকা প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের সাথে সংযুক্ত থাকলেও প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন মহাদেশের সৃষ্টি হয়। আন্টার্কটিকা পৃথিবীর শীতলতম স্থান হওয়ার পাশাপাশি সবথেকে শুষ্ক জায়গাও। ২০ লক্ষ বছরে এখানে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।

প্লাস্টিকের কোনো টুকরো যদি লম্বায় ৫ মিমি বা তার থেকে ছোট হয়, তবে তাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। প্রধানত দুই রকমের মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা শ্রেণীবিভাগ করেছেন: প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি মাইক্রোপ্লাস্টিক। যে সমস্ত প্লাস্টিকের টুকরো পরিবেশে প্রবেশ করার সময়েই ৫ মিমি বা তার থেকে ছোট আকারের হয়, তারা প্রাইমারি মাইক্রোপ্লাস্টিক।

আর যে প্লাস্টিক গুলো পরিবেশে প্রবেশ করার পর ভেঙে ৫ মিমি বা তার থেকে ক্ষুদ্র আকার পায় তারা সেকেন্ডারি মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক বা মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষয় হতে ১০০ বছরেরও বেশি সময় লাগে আর তাই দূষণের মাধ্যমে জীবদেহে জমতে থাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আমরা যে বোতলবন্দি পানি পান  করি, তাতেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বহুল পরিমাণে থাকে।

কী জানা গেল নতুন এই গবেষণায়?

আন্টার্কটিকার সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে বরফের চাঁই কেটে তা পরীক্ষা করে গবেষকরা লিটার প্রতি ১২টি মাইক্রোপ্লাস্টিকের হদিশ পেয়েছেন। তারা আর্কটিক সমুদ্রের জল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেখানে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছিলেন তার থেকে এই ক্ষেত্রে পরিমাণ কম হলেও, ওখানে ১৭ রকমের মাইক্রোপ্লাস্টিকের তুলনায় এক্ষেত্রে ১৪ টি পাওয়া যায়। গবেষকদের কথায় যা বেশ উদ্বেগজনক।

সমুদ্রের জল থেকে প্রতিবছর তৈরী হওয়া বরফের ৮০ শতাংশই প্রতি বছর গলে গিয়ে পুনরায় বরফ হয়ে যায়। ঠিক সেই সময়েই সমুদ্রের জলের সাথে বয়ে আসা মাইক্রোপ্লাস্টিক বরফবন্দী হয়ে পড়ে। এই গবেষণার সাথে যুক্ত আনা কেলির কথায়, “সুদূর এবং দুর্গম দক্ষিণ মহাসাগরও এই দূষণ কে রুখতে পারছে না, এই গবেষণায় সেটাই প্রমাণ হয়।”

গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন আর্কটিক সমুদ্রে পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকের থেকে বরফে পাওয়া মাক্রোপ্লাস্টিক আকারে একটু বড়। যার অর্থ হল সেগুলি আরও ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে যাওয়ার পর্যাপ্ত সময় পায়নি। যা প্রমাণ করে এই দূষণের উৎস স্থানীয়। মিস কেলি জানান,”এই স্থানীয় উৎস হতে পারে এখানে আসা পর্যটক এবং গবেষকদের পোশাকে থাকা ফাইবার ইত্যাদি।”

এই গবেষণা আরও প্রমাণ করে যে বরফ এই মাইক্রোপ্লাস্টিক দের অনেকদিন বন্দী করে রাখতে পারে এবং বরফ যেহেতু জলে ভাসে, তাই সমুদ্রের তলায় মাইক্রোপ্লাস্টিক গুলি জমা না হয়ে শেষে তা দক্ষিণ মহাসাগরের উপকূলে জমা হচ্ছে। এর ফলে সেখানে থাকা বিভিন্ন সামুদ্রিক জীবের, যেমন ক্রিল, এর দেহে এবং তাদের থেকে খাদ্যশৃঙ্খলের অন্যান্য জীবদের দেহেও প্রবেশ করছে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।