Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ রমযান মাসের ‘রমযান’ নামকরণ: কারণ ও ইতিহাস

রমযান মাসের ‘রমযান’ নামকরণ: কারণ ও ইতিহাস

ইসলামী চন্দ্রবর্ষের ৯ম মাসকে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে রমাদ্বান বা রমযান নামে নামকরণ করেছেন। এই নামটি সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে মাত্র একবারই উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনের অন্য আরোও ১১৩টি সূরার কোথাও এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায় না। কেন যায় না, এর হাকীকত একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, রমযান হল এমন একটি মাস যার প্রথম দশক রহমতের বারিধারায় পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় দশক ক্ষমা ও মার্জনার জন্য নির্ধারিত। আর শেষ দশক জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভের উপায়রূপে নির্বাচিত।

সসীম জ্ঞানের অধিকারী মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সত্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞার যতটুকু নি’আমত দান করেছেন, তার আলোকে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানী ও ওলামায়ে কেরামগণ রমযান শব্দের অর্থ ও মর্ম বিশ্লেষণে বহুদূর অগ্রসর হয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

এই নিবন্ধে আমরা রমযান মাসকে রমযান নামকরণ-এর কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের বিশ্লেষণ সংক্ষেপে আলোকপাত করব।

১) আরবি ‘রমযান’ শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে “রমাযা”। রমাযা শব্দের শাব্দিক অর্থ দহন, জ্বলন ও ছাই বা ভস্মে পরিণত হওয়া। যেহেতু রোযা রাখার দরুন ক্ষুধা ও পিপাসার তীব্র তাড়ণায় রোযাদারের উদর জ্বলতে থাকে তাই একে রমযান নামকরণ করা হয়েছে। এই দহন ও কষ্টকে বোঝাবার জন্য আরবি ভাষায় বলা হয়ে থাকে যে, রোযাদার দগ্ধ হয় বা ভস্মীভূত হয়। ক্ষুধা ও পিপাসার কী জ্বালা তা রোযাদার মর্মে মর্মে অনুভব করে বলে রোযার এ মাসটির নামকরণ করা হয়েছে রমযান।

২) আবার রমাযা ধাতু হতে রমাযাউ শব্দটিও গঠিত হয়েছে। যার উত্তাপের তীব্রতা, জ্বলনের ক্ষিপ্রতা, অবস্থা ও পরিবেশের তাড়নায় রোযাদারের মধ্যে কখনও কখনও এই জ্বলন তীব্র রূপ ধারণ করে থাকে।

হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে, সূর্যোদয়ের পর সূর্য কিরণের তাপে প্রাচীর যখন জ্বলে উঠে, তখনই আউয়াবিন নামাজ পড়ার সময়। বস্তুতঃ সূর্যের তাপের তীব্রতায় মানুষের মাথা হতে পা পর্যন্ত জ্বলন ধরিয়ে দেয়। সূর্য তাপ যতই তীব্র হতে থাকে জ্বলনের তীব্রতাও ততো বাড়তে থাকে। মোট কথা, পুরো রমযান মাসটাই হলো অব্যাহত জ্বলন ও তীব্র দহনের একত্র সমাহার।

নেক আমল গোনাহ নিশ্চিহ্ন করে 

৩) এই মাসটি রমযান নামে নামকরণের আরও একটি কারণ হল, এই মাসে রোযাদারগণ যে সকল নেক আমল করে; তা তার জীবনের পূর্ববর্তী গোনাহসমূহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিসে আমরা এমন উক্তিরিই সন্ধান পাই।

৪) কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এই মাসটির নাম রমযান রাখার কারণ এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে, এই মাসে মুমিন মুসলমানদের হৃদয়-মন, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা ও কামনা-বাসনা নেক আমল করা, ওয়াজ-নসীহত শ্রবণ করা ও আখিরাতের চিন্তায় বিভোর হওয়ার জন্য বিশেষভাবে উত্তাপ গ্রহণ করে ও উদ্বেল হয়ে উঠে। যেমন সূর্যের প্রখর তাপে বালুকণা সমূহ ও প্রস্তরসমূহ উত্তপ্ত হয়ে থাকে।

দহন ও তীব্রতার জন্য রমযান নামকরণ ?

৫) একদল বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এই অভিমতও ব্যক্ত করেছেন যে, আরবি বারো মাসের নাম নির্ধারণকালে যে সময়টিতে সূর্যতাপ তীব্র হতে তীব্রতর হওয়ার দরুন দহন ও জ্বলন বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল, সে সময়টিরই নামকরণ করা হয়েছে রমযান মাস। তখনকার সময়ের জ্বলন ও দহনের তীব্রতার সাথে রোযাদারদের ক্ষুধা পিপাসার জ্বলন ও দহনের পূর্ণমাত্রায় সামঞ্জস্য রয়েছে তা নিদ্বির্ধায় বলা যায়।

৬) আল্লামা সোহরাওয়ার্দী (রহঃ) বলেছেন, প্রাক ইসলামী যুগে এই মাসটির নাম ছিল ‘তাছাবুক’; যার অর্থ পূর্বাহ্নে শাণিত করা। কেননা, অন্ধকার জাহিলি যুগে আরব জাতির লোকেরা রমযান মাস আসলে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও হাতিয়ার শাণিত ও ধার করে নিত। যেন শাওয়াল মাসে নির্বিঘ্নে শত্রুর মোকাবেলা করতে পারে। কেননা যেসকল মাসে যুদ্ধ করা হারাম তার পূর্ববর্তী মাস হল শাওয়াল। আর শাওয়াল রমযানের পরবর্তী মাস। এ জন্যই রোযাদারের ত্যাগ, ধৈর্য্য ও আন্তরিকতা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসাতে যাবতীয় শয়তানী প্ররোচনা ও চক্রান্তের জাল জ্বলেপুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

রমযান নামের মাহাত্মস্বরূপ আমরা যেন রোযা পালনের মাধ্যমে আমাদের আত্মার কলুষতাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে পারি, সে তৌফিক আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দান করুন, আমীন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।