Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন ইসলামে পিতা-মাতার হক বা অধিকার (২)

ইসলামে পিতা-মাতার হক বা অধিকার (২)

।। মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত ইব্নে মুররাহ আল জুহানী (রাযি.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি, রমযানের রোযা রাখি, যাকাত আদায় করি, হজ্ব করি, তাহলে আমার জন্য কি আছে? তিনি বলেন, এমনটি যে করবে, সে নবী-সিদ্দীক-শুহাদাগণের সাথে থাকবে, যদি সে পিতা-মাতার সঙ্গে নাফরমানী না করে। (ইমাম হাইছমী মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ গ্রন্থে [৮/১২৭] বলেন, ইমাম আহমদ ও তাবরানী দুই সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তাবরানীর একটি সনদের রিজালগণ সহীহ্)।

আজকাল পিতা-মাতার সাথে অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অভদ্রোচিত পন্থায় সন্তান যা-তা করে যাচ্ছে, বলে যাচ্ছে। অথচ সে ভুলে যায় তার উপর পিতা-মাতার ইহ্সান ও অনুগ্রহের কথা। ভুলে যায় মায়ের সীমাহীন কষ্টের বিবরণ। আর তাদের সাথে অসদ্ব্যবহার, বেআদবীর এমন চিত্রও সমাজে দেখা যায় যে, সন্তানেরা পিতা-মাতার উপর হাত উঠাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। সাবধান হে বেআদব! যে পিতা-মাতা তোকে জন্ম দিয়েছে, লালন-পালন করেছে, সেই পিতা-মাতার প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কেমন ব্যবহার করতে বলেছেন! তোর উপর পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার ফরযে আইন করে দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না। আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বলো না। এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। বল তাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে নত হয়ে যাও এবং বল! হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর যেমন তারা আমাকে শৈশব কালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩, ২৪)।

প্রথম কিস্তি পড়ুন- ইসলামে পিতা-মাতার হক বা অধিকার

যখনই পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হন, শরীর ভেঙ্গে পড়ে, দুর্বল হয়ে যান, তখনই তারা সন্তানের সেবা-যত্নের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন এবং তাদের বেঁচে থাকা সন্তানের সাহায্য-অনুগ্রহ ও কৃপার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন যদি সন্তানের পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্রও বিমুখতা বা অবহেলা প্রকাশ পায়, তবে তাদের অন্তরে তা ক্ষত হয়ে দেখা দেয়। যেহেতু বার্ধক্য মানুষের মেজাজকে স্বাভাবিকভাবেই খিটখিটে করে দেয়, অকেজো হয়ে যায় জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রকাশ পেতে থাকে তাদের থেকে শিশুসুলভ আচার-আচরণ। আর এমন মুহূর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানেরা তাদের কামনা-বাসনা পূরণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে।

আরও পড়তে পারেন-

কিন্তু পবিত্র কুরআন সেই মুহূর্তেও পিতা-মাতার সুখ-শান্তির ও মনোতুষ্টির জন্য আদেশ দেওয়ার সাথে সাথে সন্তানকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার শিশুকাল। অর্থাৎ হে সন্তান! আজ তোমার পিতা-মাতা তোমার যতটুকু মুখাপেক্ষী, এক সময় তুমিও তাদের প্রতি তদাপেক্ষা বেশী মুখাপেক্ষী ছিলে। তখন তোমার পিতা-মাতা অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে একমাত্র তোমার আরাম-আয়েশের প্রতি লক্ষ্য করে তাদের আরাম-আয়েশকে তোমারই মুহাব্বতে কুরবানী করেছেন। তোমার দুষ্টুমি সুলভ আচরণ ও অবুঝ কথাবার্তাকে স্নেহ-মমতায় উপভোগ করেছেন। আর আজ তাদের দুঃসময়ে-বিপদ মুহূর্তে তোমার সামনে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে যে, তাদের সাথে সুন্দর-সৌজন্যমূলক আচরণ তথা হাসিখুশীর মাধ্যমে তাদের সামনে আদব-সম্মান, পেয়ার-মুহাব্বতের ভিত্তিতে তাদের সকল কামনা-বাসনাকে পূর্ণ করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার। আর এটি একান্তভাবে কাম্য ও অবশ্যকরণীয়ও বটে।

হদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে পিতা-মাতার আনুগত্য করে, তার জন্য জান্নাতের দু’টি দরজা খোলা থাকবে, আর যে ব্যক্তি তাদের অবাধ্য হবে তার জন্য জাহান্নামের দু’টি দরজা খোলা থাকবে, যদি পিতা-মাতার মধ্য থেকে একজনই জীবিত ছিল তবে জান্নাত অথবা জাহান্নামের একটি দরজা খোলা থাকবে। একথা শুনে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! জাহান্নামের সেই শাস্তির বাণী কি তখনও প্রযোজ্য যখন পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি জুলুম করে? (উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) তিন বার বলেন) যদি পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি জুলুমও  করে, তবু পিতা-মাতার অবাধ্যতার কারণে সন্তান জাহান্নামে যাবে।

[চলবে]

  • মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী, উস্তাদুল হাদীস ও ওয়াল ফিক্বহ- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।