Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন হযরত উসমান (রাযি.)এর যুগে যেভাবে পবিত্র কুরআন সংকলন হয়েছে

হযরত উসমান (রাযি.)এর যুগে যেভাবে পবিত্র কুরআন সংকলন হয়েছে

।। মুফতি আবু সাঈদ ।।

ইসলামী খেলাফতের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি. এর যুগ ছিল ইসলামের স্বর্ণযুগের একাংশ। ইসলামী ‘তাহযীব-তামাদ্দুন’ তথা ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচার যখন ধু-ধু মরুরাজ্যের জনমানবকে প্রকৃত সত্যের রশ্মিতে প্রদীপ্ত করল এবং উত্তপ্ত কংকরময় প্রান্তরকে সিক্ত করে আরবের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেলো সুদূর রোম ও পারস্য সা¤্রাজ্যের রাজপ্রাসাদে। তখন কুরআনের আলোয় আলোকিত সাহাবায়ে কেরাম রাযি. নবাগত মুসলমানদেরকে শিখাতে লাগলেন কুরআনের সাত হরফের কেরাত। যার বিশুদ্ধতা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্বীকৃত।

‘সাত হরফের কেরাত’ এবং তার শুদ্ধতার ব্যাপারে কারোর ভিন্ন মত পোষণ করার অবকাশ ছিল না। কিন্তু এই সাত কেরাতের বিশুদ্ধতার ব্যাপক প্রচলন না থাকার ফলে সৃষ্টি হল অনৈক্যের তুমুল ঝড়। প্রত্যেকেই নিজেকে কুরআনের বিশুদ্ধপাঠের পাঠক ভাবতে লাগল, অন্য কেরাতের অনুসারীকে ভ্রান্ত সম্বোধন করতে লাগল।

রাসূলের যুগ থেকে চলে আসা সহীহ ও শুদ্ধসূত্রে বর্ণিত কুরআনের বিশুদ্ধ সাত কেরাতের ব্যাপারে সঠিক দিক-নির্দেশনা না পেয়ে তার কোন একটিকে অশুদ্ধ বলার মতো মারাত্মক ভুল করে বসার আশংকা দেখা দিল। এছাড়াও সর্বস্থানে কুরআনের উল্লেখযোগ্য এমন কোন পা-ুলিপি পাওয়া যেত না, যাকে কোন সমস্যার সমাধানের একক মাপকাঠি হিসেবে দাঁড় করানো যায়!
মদিনায় মাত্র একটি পা-ুলিপি বিদ্যমান ছিল। যা হযরত যায়েদ রাযি. এর লিখিত। আর ব্যক্তিগত পা-ুলিপিগুলোতে সাত কেরাতের দিকটির তেমন গুরুত্ব ছিল না।
সময়ের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীতে এমন একটি সমাধানী পা-ুলিপি অতীব জরুরি ছিল, যা ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। সকল মতানৈক্য নিরসনে সকলের ভরসার কেন্দ্র হবে। আর তার অন্তর্গত হবে বিশুদ্ধ সাত কেরাত। সহজেই শুদ্ধ-অশুদ্ধ কেরাতের পার্থক্য ফুটে উঠবে। এ সকল বিষয়ের সমাধানের লক্ষ্যে যিনি যুগশ্রেষ্ঠ উপহারটি মানবজাতিকে দিয়ে গেলেন, তিনি হলেন ‘হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান’ রাযি.।

হাদিসের আলোকে এই যুগশ্রেষ্ঠ কাজের প্রকৃত ইতিহাস

“হযরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান রাযি. আযারবাইজান ও আরমেনিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানের পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালোভাবেই লক্ষ্য করেন। দেখলেন, মহাগ্রন্থের বিশুদ্ধ কেরাতসমূহের ব্যাপারে লোকদের প্রকৃত জ্ঞান না থাকায় তারা পরস্পরে মতবিরোধে লিপ্ত আছে।

হযরত হুজাইফা রাযি. যখন মদিনায় আসলেন, তখন অন্য কোন কাজের ব্যস্ততা মাথায় নেননি। কারণ, কুরআনের ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান স্বল্পতায় তাদের পরস্পরের মাঝে যে মনোমালিন্য প্রত্যক্ষ করে এসেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। কুরআনের স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী মুসলমানগণ নিজেদের মাঝে ভয়ানক মতভেদে জড়িয়ে পড়বে।

সেই পরিস্থিতি তাঁর হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করছিল। তাই কালক্ষেপণ না করে সেই বার্তা পৌঁছাতে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে চলে গেলেন।

মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাযি.। তাঁর কাছে পৌঁছে সেই ভয়াবহ প্রেক্ষাপটের চিত্রটি যেভাবে তুলে ধরেছিলেনÑ

হে আমীরুল মুমিনীন! এই উম্মত আসমানী গ্রন্থের ব্যাপারে অভিশপ্ত ইহুদি-খৃস্টানদের ন্যায় মতানৈক্যের পথ মাড়িয়ে ভ্রান্ত পথের পথিক হয়ে বসার পূর্বেই আপনি এর প্রতিরোধের কোন একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
হযরত উসমান রাযি. উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন! আসল ব্যাপারটা কী? খুলে বলুন।
তখন হযরত হুজাইফা রাযি. তাঁর সামনে ‘আরমেনিয়া’র যুদ্ধের দৃশ্যপটের বিবৃতি দিলেন।

হযরত! সেখানের বিব্রতকর পরিস্থিতি আমি নিজ চোখে দেখে এসেছি। সেই ঝঞ্ঝাটপূর্ণ পরিবেশের মূল কারণ ছিল- ‘শাম’দেশের অধিবাসীগণ কুরআন পাঠে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাযি. এর কেরাত অনুসরণ করে থাকে। কুরআনের সেই পঠন পদ্ধতির জ্ঞান হয়তো তখনও ইরাকবাসীগণ জানতো না।

অন্যদিকে ইরাকবাসীগণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর কেরাতের অনুসরণ করে থাকে। কুরআন পাঠের সেই ভিন্ন পদ্ধতির বিষয়টি শামবাসীরা জানতো না। পরিপ্রেক্ষিতে ফলাফল এই দাঁড়ালো- এই উভয় শ্রেণীর জ্ঞান-স্বল্পতায় একে অপরকে কাফের সম্বোধন করতেও কোনরূপ কুণ্ঠাবোধ করছে না।

হযরত উসমান রাযি. পূর্বেই এমন ভয়ানক পরিস্থিতি কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ, মদিনার মাটিতেও এ ধরনের ছোট ছোট কয়েকটি ঘটনা ঘটে গিয়েছিল, যা তাঁর স্মরণে ছিল। এখন যেহেতু হযরত হুজাইফা রাযি. সে কথারই সতর্ক সঙ্কেত দিচ্ছেন, এতে করে হযরত উসমান রাযি. এর হৃদয়পটে কুরআনকে নিয়ে এক নতুন পরিকল্পনা জাগ্রত হল।

তিনি বড় বড় সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন, এই মহান কাজকে সামনে রেখে তাঁদের উপস্থিতিতে বললেনÑ

হে আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ! আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, বিভিন্ন এলাকার মুসলমানগণ পরস্পরে এক ঘৃণ্য কথার বড়াই করে বেড়াচ্ছে, তা হলোÑ “আমার কেরাত তোমার কেরাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর।” এ কথা তো তাদেরকে কুফর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে!

এখন কথা হলোÑ তাঁদের মুখ থেকে এ ধরনের বাক্য প্রকাশ করা নিজেদের মাঝে ঐক্যের পরিবর্তে সঙ্ঘাতের পথ উন্মোচন করে দিবে। তাই উক্ত বিষয়টির সমাধানে আপনাদের অভিমত কী?
হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) উসমান রাযি. এর কথা শেষ হতে না হতেই বলতে লাগলেনÑ হযরত! আপনিই বলুন, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

হযরত উসমান রাযি. বলতে লাগলেন- “আমি মনে করি, গোটা মুসলিম জাতিকে উপহার হিসেবে দেওয়া হোক কুরআনের এমন এক নির্ভরযোগ্য পা-ুলিপি, যাতে কারোর মতপার্থক্য থাকবে না।” তাঁর এ প্রস্তাবের বাস্তবতার দিকে লক্ষ্য করে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করলেন।

কাজের প্রস্তুতি শুরু হল। খলিফা হযরত উসমান রাযি. সকল লোকদের আহ্বান জানালেন। তারা খলিফার ডাকে সাড়া দিয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে গেলো। তখন তিনি পূর্ব পরামর্শ অনুযায়ী সকলের উপস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিলেন-

“হে আমার শ্রদ্ধেয় সাথীবর্গ! আপনাদের উদ্দেশ্য করে বলছি, মদিনার মাটিতে আমি উপস্থিত থাকা অবস্থায়ও আপনারা কুরআনের বিশুদ্ধ কেরাতসমূহে মতানৈক্যের শিকার হয়ে পড়েছেন। কিন্তু, যারা এখান থেকে দূরে, বহুদূরে, কুরআনের কেরাত বিষয়ে তাদের পরস্পরে মতানৈক্যের ব্যাপারটা কতটা চরম পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, বিষয়টি আপনারাও ভেবে দেখুন!

এখন সিদ্ধান্ত হলো- সকল মতানৈক্যের পথ নিরসন করতে সকলের ঐকমত্যে কুরআনের এমন এক পা-ুলিপি তৈরি করা হবে, যার অনুসরণ করা সকলের ওপর অবশ্য কর্তব্য হবে।”

আম্মাজান হযরত হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর নিকট এ বলে বার্তা পাঠালেন: “আপনার কাছে হযরত আবু বকর রাযি. এর প্রস্তুতকৃত মহাগ্রন্থের যেই পা-ুলিপিটি রক্ষিত আছে, তা আমাদের নিকট পৌঁছে দিন। আমরা এর অনুসরণ করে নতুনধারায় এক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে পুনরায় আপনাকে তা বুঝিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ।”

হযরত হাফসা রাযি. তৎক্ষণাৎ সেই পা-ুলিপিটি হযরত উসমান রাযি. পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন।
হযরত উসমান রাযি. পান্ডুলিপিটি হাতে পেয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলেন। সুদক্ষ ও চৌকস চারজন বিশিষ্ট সাহাবী দ্বারা একটি কমিটি গঠন করে সেই মহৎ কাজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বুঝিয়ে দিলেন। তাঁরা ছিলেনÑ হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রাযি., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রাযি., হযরত সাঈদ ইবনুল আ’স রাযি. ও আব্দুর রহমান ইবনে হারেস ইবনে হিশাম রাযি.।

এই চার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে উক্ত বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন- হে আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ! আপনারা হযরত আবু বকরের এই প্রস্তুতকৃত পা-ুলিপিটি সামনে রেখে একটি পা-ুলিপি এমন আন্দাজে তৈরি করবেন, যাতে সূরাসমূহ ধারাবাহিকভাবে সাজানো থাকবে।

সেই বরেণ্য চারজন সাহাবীর একজন ছিলেন ‘আনসারী’। তিনি হলেন, হযরত যায়েদ বিন সাবেত রাযি.। বাকি তিনজন ছিলেন ‘কুরাইশী’।

তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হযরত উসমান রাযি. বললেনÑ আপনারা এই তিনজন এবং যায়েদের মাঝে কুরআন লেখার কাজে কোন অংশে দ্বিমত দেখা দিলে, যেমন ‘কোনো একটি শব্দের অঙ্কনরূপ কোন গোত্রের ভাষা অনুযায়ী হবে’; এ ধরনের দ্বিমত হলে, কুরাইশ গোত্রের অঙ্কনরূপকেই অগ্রাধিকার দিবেন। যেহেতু মহাগ্রন্থের অবতরণ কুরাইশী বর্ণনা ভঙ্গিতে অবতীর্ণ হয়েছে।

প্রথম দিকে যদিও চারজনের সেই কমিটি ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের সহযোগী সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়।

উসমানী পা-ুলিপির ক্ষেত্রে যে কাজগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়-

এক. হযরত আবু বকর রাযি. এর যুগে তৈরিকৃত কুরআনী পা-ুলিপিতে সূরাসমূহ স্বতন্ত্রাকারে উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু সূরাগুলো বিন্যস্ত ছিল না, তাই সে দিকে দৃষ্টি রেখে বর্তমান পা-ুলিপিতে সূরাসমূহকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে এক ভলিউমে আনা হয়।

দুই. কুরআনের আয়াতগুলোকে ‘নুকতা, যের, যবর ও পেশ’ মুক্ত করে অঙ্কন করা হয়। ফলশ্রুতিতে এর মাঝে সমাবেশ ঘটেছিল প্রসিদ্ধ কেরাতসমূহের। এ পদ্ধতি গ্রহণের কারণে বিভিন্ন এলাকার কুরআন পাঠকদের জন্য কুরআন পাঠ সহজসাধ্য হয়ে যায়।

তিন. এতদিন পর্যন্ত সকলের ঐকমত্যে কুরআনের নির্ভরযোগ্য কপি ছিল একটি। এখন একাধিক কপি প্রস্তুত করানো হয়।

প্রসিদ্ধ আছে- হযরত উসমান রাযি. মোট পাঁচটি কপি তৈরি করান। কিন্তু আবু হাতেম সাজিস্তানী রহ. বলেন, সেসময় কুরআনের মোট সাতটি কপি তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলোর একটি পাঠানো হয় মক্কায়। একটি ‘শাম’ অর্থাৎ সিরিয়ায়। একটি ইয়ামানে, একটি বাহরাইনে, একটি বসরায়, একটি কূফায় আর এক কপি রাখা হয় মদিনা মুনাওয়ারায়।

আরও পড়তে পারেন-

চার. উক্ত পা-ুলিপিটি তৈরি করতে প্রথমত হযরত আবু বকর রাযি. এর প্রস্তুতকৃত পা-ুলিপিকে সামনে রাখা হয়। বিশেষভাবে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সেসকল অংশবিশেষের প্রতিও দৃষ্টি রাখা হয়, যা বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবীর জীবদ্দশায় ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহে রাখার জন্য নিজেদের কাছে লিখে রেখেছিলেন।

পাঁচ. কুরআনের এ নতুন সংকলনের কাজ সম্পন্ন করে হযরত উসমান রাযি. বিভিন্ন সাহাবী কর্তৃক ব্যক্তিগত তৈরিকৃত পা-ুলিপিগুলো জ্বালিয়ে দেন। যাতে হস্তলিপির পদ্ধতিগত বিষয়টি এবং সূরাগুলোর বিন্যাসের ক্ষেত্রে তৈরিকৃত সকল কপি এক ধরনের থাকে, পরবর্তীতে এতে কোন বেশ কম না হয়।

উক্ত সাত কপির পর্যালোচনা

মক্কি কপি: এই কপিটি ৬৫৭ হিজরী পর্যন্ত মক্কা মুকাররমাতেই সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে সেটিকে দামাস্কের জামে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাক্রমে সেই মসজিদে আগুন লেগে যাওয়ায় তাতে থাকা সেই পা-ুলিপিটিও পুড়ে যায়।

মাদানি কপি: এই কপিটি হযরত উসমান রাযি. এর নিকট তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ছিল। হযরতের শাহাদাত বরণের পর উক্ত কপিটি হযরত আলী রাযি. এর তত্ত্বাবধানে চলে যায়।

শামি কপি: এই কপিটি কূফা থেকে আন্দালুস-মুসলিম স্পেনের বাদশাহদের, তারপর মুওয়াহহিদীনের বাদশাহদের এবং পরবর্তীতে সেটা বনু মারয়ীনের হস্তগত হয়। তখন তা কর্ডোবার জামে মসজিদে ছিল। কিন্তু সেসময় কোনভাবে তা ‘তালমিসানে’র শাহী খাজানায় পৌঁছে গেলে সেখান থেকে এক ব্যবসায়ী তা ক্রয় করে ‘ফেয’ (নগরী)তে নিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানেই সংরক্ষিত আছে।

বসরি কপি: এই কপিটি ৫৭৫ হিজরীতে সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবীর এক মন্ত্রী ত্রিশ হাজার আশরাফির বিনিময়ে ক্রয় করে নেন। এখন তা মিসরের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

ইয়ামানি কপি: এই কপিটি এখনো মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে।

বাহরাইনি কপি: এই কপিটি এখনো বাহরাইনের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

কূফি কপি: এই কপিটি বর্তমানে ইস্তাম্বুল তথা কন্স্টানটিনোপ্লের এক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

পরবর্তীতে সেই কপিটি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাযি. এর অধীনে চলে যায়। এরপর কোনভাবে তা মদিনা থেকে স্পেনে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে মরোক্কোর রাজধানী জারেস পৌঁছে।

তারপর আবার কোনভাবে মদিনায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গভর্নর ফখরি পাশা মদিনার বিভিন্ন তাবাররুকাতের সাথে সেটা স্পেনে নিয়ে যায়। এখনো তা সেখানে সংরক্ষিত আছে।

হযরত উসমান রাযি. এর সাড়াজাগানো এ কর্ম উম্মতে মুহাম্মাদীর ভীতকে শক্তিশালী করেছে। অনৈক্যের সমুদয় গলিপথ বন্ধ করে দিয়ে সকলকে ভ্রাতৃত্বের সেতু বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছে।

হযরত উসমান রাযি. সম্পর্কে হযরত আলী রাযি. বলেন-

لَا تَقُوْلُوْا فِيْ عُثْمَانَ اِلَّا خَيْرًا فَوَ اللهِ مَا فَعَلَ الَّذِيْ فَعَلَ فِي الْمَصَاحِفِ اِلَّا عَنْ مَلَاٍ مِّنَّا.

“হযরত উসমানের ব্যাপারে কল্যাণের কথা ছাড়া মুখ খুলো না। আল্লাহর কসম! হযরত উসমান কুরআন সংকলনে যে পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, তা আমাদের উপস্থিতিতে, আমাদের পরামর্শক্রমেই করেছেন।”

– মুফতি আবু সাঈদ, সিনিয়র শিক্ষক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। খতীব- বারীয়া জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।