Home ফিকহ ও মাসায়েল নামাযে ‘আমীন’ আস্তে বলব, না উচ্চস্বরে বলব?

নামাযে ‘আমীন’ আস্তে বলব, না উচ্চস্বরে বলব?

- মাওলানা সাঈদ আহমদ।

।। মাওলানা সাঈদ আহমদ ।।

সকল নামাযে, যথা- ইমাম, মুক্তাদী ও একা নামায আদায়কারী নারী-পুরুষ সবার জন্য সূরা ফাতিহার পর আমীন বলা সুন্নাত। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘যখন তোমাদের কেউ নামাযে ‘আমীন’ বলে এবং আসমানের ফেরেশতাগণও আমীন বলেন। আর উভয়ের আমীন একই সময়ে হয়, তখন তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহীহ বুখারী- হাদীস- ৭৮১; মুসলিম হাদীস- ৪১০)।
আমীন বলার দু’টি পদ্ধতি রয়েছে; জোরে বা আস্তে। তবে আস্তে বলাই উত্তম।
প্রথম দলীলঃ আমীন হল, দোয়া বিশেষ। পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

অর্থাৎ- আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা ও হারুন (আ.) সম্পর্কে বলেন- ‘তোমাদের উভয়ের দোয়া কবুল করা হয়েছে’। (সূরা ইউনুস- ৮৯)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.), ইবনে আব্বাস ও আনাস (রাযি.) এবং তাবেয়ী আবুল আলিয়া, ইকরিমা, মুহাম্মদ ইবনে কা’ব, আবু সালেহ, রবী’ ইবনে আনাস ও ইবনে যায়েদ (রাহ.) প্রমুখ বলেছেন-

‘হযরত মূসা (আ.) দোয়া করতেন আর হযরত হারুন (আ.) তাঁর দোয়ায় আমীন বলতেন’। (দেখুন- তাফসীরে তাবারী- ১৫/১৮৬-১৮৭; ইবনে কাসীর- ৪/২৫৩; আদ-দুররুল মানসূর- ৩/৫৬৭)।

সুতরাং প্রমাণিত হল, আমীন একটি দোয়া বিশেষ। হারুন (আ.)এর আমীনকেও আল্লাহ তাআলা দোয়া বলেছেন। এভাবে বিশিষ্ট তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাহ.)ও বলেন, ‘আমীন হল দোয়া।’ (বুখারী- ১/১০৭)।

দোয়ার উত্তম পদ্ধতি আস্তে করা

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, অর্থাৎ- তোমরা স্বীয় পালনকর্তাকে ডাক কাকুতি-মিনতি করে এবং আস্তে ও সংগোপনে। (সূরা আরাফ- ৫৫)।

উল্লেখ্য, কারো কারো মতে ‘আমীন’ শব্দটি আল্লাহ তাআলার একটি নাম। অতএব, ‘আমীন’ বললে তা যিকির হিসেবে গণ্য হবে। আর যিকিরেরও উত্তম পদ্ধতি হলো আস্তে করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, অর্থাৎ- তোমার পালনকর্তাকে স্মরণ করতে থাক স্বীয় মনে সকাতর ও ভীত হয়ে এবং না অতি উচ্চস্বরে। (সূরা আরাফ- ২০৫)।

আরও পড়তে পারেন-

কালজয়ী গবেষক ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী শাফিয়ী (রাহ.) (মৃত্যু ৬০৬ হি.) ‘তাফসীরে কাবীর’ গ্রন্থে লিখেন, ইমাম আবু হানিফা (রাহ.) বলেছেন- ‘আস্তে ও অনুচ্চস্বরে আমীন বলা উত্তম। কেননা আমীন যদি দোয়া হয়, তবে সূরা আরাফের ৫৫নং আয়াতের আলোকে তা আস্তে বলা (ওয়াজিব না হলেও কমপক্ষে) উত্তম সাব্যস্ত হয়। আর যদি যিকির গণ্য করা হয়, তখনও একই সূরার ২০৫ নং আয়াত থেকে তা আস্তে বলা উত্তম প্রমাণিত হয়। এটাই আমাদের অভিমত’। (তাফসীরে কাবীর- ১৪/১৩১, ৫৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়)।

দ্বিতীয় দলীল

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদেরকে নামায শিক্ষা দিয়ে বললেন- ‘তোমরা ইমামের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলবে তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। ইমাম যখন “ওয়ালাদ-দ্বোয়াল্লীন” বলবে তোমরা ‘আমীন’ বলবে। ইমাম যখন রুকু করবে, তোমরাও রুকু করবে। আর ইমাম “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বললে তোমরা “রাব্বানা লাকাল হাম্্দ” বলবে।’ (সহীহ মুসলিম- ১/১১৭, হাদীস-৪১৫)।

এ হাদীসে রাসূল (সা.) তিনটি কাজ মুখের মাধ্যমে করার আদেশ দিয়েছেন এবং একই পদ্ধতিতে দিয়েছেন।

১. ইমাম “ওয়ালাদ-দ্বোয়াল্লীন” বললে মুক্তাদী ‘আমীন’ বলবে। ২. এ আদেশের পূর্বে তিনি বলেছেন- ইমাম আল্লাহু আকবার বললে মুক্তাদীও আল্লাহু আকবার বলবে। ৩. সবশেষে তিনি বলেছেন- ইমাম “সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ্” বললে মুক্তাদী “রাব্বানা লাকাল হাম্্দ” বলবে। এ তিন আমলের আদেশের ধরণ ও পদ্ধতি এক; পার্থক্যের কোন ইঙ্গিতও নেই। সুতরাং আমীনের আগে ও পরের আমল (অর্থাৎ- “আল্লাহু আকবার” ও “রাব্বানা লাকাল হামদ” যেভাবে মুক্তাদী আস্তে ও নীচুস্বরে বলে, তেমনি ‘আমীন’ও আস্তে ও অনুচ্চস্বরেই বলবে।

তৃতীয় দলীল

হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাযি.) বলেন। আমি নবী কারীম (সা.)এর সাথে নামায আদায় করলাম। তিনি যখন “ওয়ালাদ-দ্বোয়াল্লীন” বললেন, তখন আস্তে ও অনুচ্চস্বরে আমীন বললেন।’ (মুসনাদে আবী দাউদ, হাদীস-১১১৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস-১৮৮৫৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস-২৯১৩)।

ইমাম হাকেম (রাহ.) উক্ত হাদীস বর্ণনার পর বলেছেন, অর্থাৎ- হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ। অতঃপর ইমাম যাহাবী (রাহ.)ও তা সমর্থন করেছেন। (মুসতাদরাক- ২/২৫৩)।

চতুর্থ দলীল

হযরত আবু ওয়ায়েল (রাহ.) বলেন, ‘হযরত ওমর ও আলী (রাযি.) উভয়ে (নামাযে) … আমীন উচ্চস্বরে বলতেন না।’ অনুরূপ বর্ণনা হযরত ইবনে মাসঊদ (রাযি.)এর আমল সম্পর্কেও এসেছে। (দেখুন- তাহাভী, হাদীস-১২০৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, ২/১০৮; ইলাউস সুনান, ২/২৪৯; মাআরিফুস সুনান- ২/৪১২)।

পঞ্চম দলীল

ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী রাহ. (মৃত্যু ৩১০ হি.) বলেন, ‘হযরত ইবরাহীম নাখয়ী, শা’বী ও ইবরাহীম তাইমী (রাহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা আমীন আস্তে আওয়াজে বলতেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘সঠিক কথা হচ্ছে, আমীন জোরে ও আস্তে উভয় ধরণের হাদীসই সহীহ। প্রত্যেক পন্থায় ওলামায়ে কেরামের একদল আমল করেছেন। তবে আমার নিকট আস্তে ও অনুচ্চস্বরে আমীন বলাই উত্তম ও পছন্দনীয়। কেননা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী আস্তে আমীন বলতেন’। (আল-জাওহারুন নাকী ফীর-রাদ্দি আলাল বায়হাকী, ইবনুত তুরকুমানী- ১/১৩২; দায়িরাতুল মাআরিফ হায়দারাবাদ প্রথম প্রকাশ ১৩১৬ হি.)।

প্রশ্ন- কেউ কেউ পবিত্র মক্কা-মদিনায় জোরে আমীনের কথা বলে থাকেন…।

উত্তর- প্রথমতঃ মক্কা-মদিনায় ‘আমীন’ এর মত ‘তারাবীহ’ও বিশ রাকাআত পড়া হয়, এটা তো তারা বলেন না, বরং আট রাকাআতের কথা বলেন কেন?

দ্বিতীয়তঃ শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবে আমীন জোরে বলা উত্তম। আর হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে আমীন আস্তে বলা উত্তম। মক্কা-মদিনার অধিকাংশ লোক হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। এ কারণে তারা জোরে আমীন বলেন।

এ বিষয়ে সবিস্তারে জানতে দেখুন- ‘নামাযে আমীন জোরে না আস্তে?’ গ্রন্থটি।

– মাওলানা সাঈদ আহমদ, সিনিয়র শিক্ষক- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।