Home লাইফ স্টাইল ভোগ্যপণ্যে কৃত্রিম রাসায়নিকের উপস্থিতি অকাল মৃত্যুর কারণ

ভোগ্যপণ্যে কৃত্রিম রাসায়নিকের উপস্থিতি অকাল মৃত্যুর কারণ

ভোগ্যপণ্যে কৃত্রিম রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ বা তার চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যুর হয়! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন ফলাফল পেয়েছেন গবেষকরা।

খাদ্য সংরক্ষণের পাত্র, শ্যাম্পু, মেকআপ, সুগন্ধি, এমনকি শিশুদের খেলনাতেও পাওয়া গেছে ‘ফ্‌থালেটস’ (phthalates) নামক কৃত্রিম রাসায়নিকের উপস্থিতি, যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৯১ হাজার থেকে ১ লাখ ৭ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ। এই রাসায়নিক ক্রিয়ায় সাধারণত ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।

এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন নামের এক জার্নালে মঙ্গলবার প্রকাশিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তির শরীরে ফথালেটসের মাত্রা বেশি, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগসহ অন্য যেকোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে।

সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, এমন মৃত্যুর ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হতে পারে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সেসের মতে, শরীরের হরমোন উৎপাদনব্যবস্থায় ফ্থালেটস বাধা দেয়, যা এন্ডোক্রাইন সিস্টেম নামে পরিচিত। এটি শরীরের প্রজননতন্ত্র, মস্তিষ্ক, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে।

এনআইইএইচএস আরও জানিয়েছে, হরমোনের সামান্য তারতম্যও শারীরিক ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এর আগে এক গবেষণায় দেখা যায়, ফ্থালেটস মানবদেহে প্রজনন সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়া, শিশুদের ওবেসিটি, হাঁপানি, কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা এবং ক্যান্সারের সঙ্গেও ফ্থালেটসের সম্পর্ক পাওয়া যায়।

‘সর্বত্র রাসায়নিক দ্রব্য’
জীবনের সর্বত্রই রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার রয়েছে। খুব সহজভাবে বিশ্লেষণ করতেও গেলেও দেখা যায়, আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করে থাকি সেগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ফ্থালেটস এবং এর মতো আরও অনেক রাসায়নিক দ্রব্য। প্লাস্টিককে আরও নমনীয় করতে, পিভিসি প্লাম্বিং, ভিনাইল ফ্লোরিং, বৃষ্টি এবং দাগ-প্রতিরোধী নানা ধরনের পণ্য, এমনকি কিছু চিকিৎসা সামগ্রী এবং বাচ্চাদের খেলনাতেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই রাসায়নিক।

এছাড়া খাবারের মোড়ক, ডিটারজেন্ট, পোশাক, আসবাবপত্র এবং স্বয়ংচালিত প্লাস্টিক থেকেও ফ্থালেটসের সংস্পর্শে আসতে পারে মানবদেহ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্য অনুসারে, মানুষ যখন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয় বা প্লাস্টিকের সংস্পর্শে থাকা খাবার খায় বা পান করে, তখন এটি মানবদেহে প্রবেশ করে।

ফ্থালেটস নিয়ে গবেষণার ভবিষ্যৎ
একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক ডা. লিওনার্দো ট্রাসান্দে বলেন, নতুন গবেষণায়, ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৫ হাজারেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রস্রাবে ফ্যাথলেটসের উপস্থিতি পরিমাপ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ফ্থালেটসের এই মাত্রা মানুষের প্রামথিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং এটি গড় আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

এছাড়া, আগে থেকেই যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, ক্যানসার, হরমোনজনিত সমস্যা কিংবা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতায় আক্রন্ত, তারা এই রাসায়নিক ক্রিয়ায় আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলেও উঠে এসছে গবেষণায়।

আরও পড়তে পারেন-

তবে ট্রাসান্দে সিএনএনকে আবার বলেছেন, ‘যাহোক, আমি আপনাকে কখনোই বলব না, এটি একটি সুনির্দিষ্ট গবেষণার ফল। এটি অল্প সময়ের একটা প্রতিচ্ছবি মাত্র এবং এটি সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর ব্যাপারে একটা ধারণা দেয়।’

ফ্থালেটস কীভাবে মানবদেহের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘তবুও এই ধরনের গবেষণা কখনও করা হবে না; কারণ আমরা নৈতিকভাবে মানুষকে কখনোই সম্ভাব্য বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আনতে পারি না।’

ফ্থালেটস থেকে বাঁচতে সম্ভাব্য কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছেন ডা. ট্রাসান্দে।

তিনি বলেন, ‘প্রথমেই, যতটা সম্ভব প্লাস্টিক এড়িয়ে চলুন। মাইক্রোওয়েভ বা ডিশওয়াশারে প্লাস্টিকের পাত্র কখনও রাখবেন না। তাছাড়া বাড়িতে রান্না করা খাবার গ্রহণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো আপনাকে ফ্থালেটস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।’

এছাড়া ট্রাসান্দের অন্যান্য পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সুগন্ধিবিহীন লোশন এবং লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা।
সুগন্ধিবিহীন পরিষ্কারক সামগ্রী ব্যবহার করা।
খাবার রাখার এবং সংরক্ষণের জন্য কাচ, স্টেইনলেস স্টিল, সিরামিক বা কাঠ ব্যবহার করা।
টিনজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা বা হিমায়িত ফল এবং সবজি কেনা।
এয়ার ফ্রেশনার এবং প্লাস্টিক সামগ্রী এড়িয়ে চলা।

সূত্র: সিএনএন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।