Home অর্থনীতি বাংলাদেশের ৯৮% পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেবে চীন

বাংলাদেশের ৯৮% পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেবে চীন

আবুল কাশেম: লেদার ও লেদার গুডস পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের ৯৮% পণ্যকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। এতে এখন থেকে চীনের বাজারে বাংলাদেশের ৮,৯৩০টি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে।

এই বাড়তি সুবিধা কার্যকর করতে লেটার অব এক্সচেঞ্জ করবে বাংলাদেশ ও চীন। ইতোমধ্যে চীনা সরকারের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এতে স্বাক্ষর করেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বাড়িয়েছে। এখন থেকে চীনে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্যারিফ লাইনের ৯৮% পণ্যে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। 

২০২০ সালে বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয় চীন, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এর আওতায় বাংলাদেশের ৮৫৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়েছে। অর্থাৎ, চীন বাংলাদেশের আরও ৩৮৩টি পণ্যকে নতুন করে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে।

তবে চীনে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বেশ কিছু আইটেম শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে ছিল। এবার এসব পণ্যকেও শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।    

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মোঃ মাহবুবুল হক টিবিএসকে বলেন, বুধবার চীনা দূতাবাস থেকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা পণ্যতালিকা পেয়েছি। চীনা ভাষায় লেখা এ তালিকার এইচএস কোড বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফলে যে ৩৮৩টি আইটেম নতুন করে শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর নাম এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, লেদার ও লেদার গুডসের আইটেমগুলো চ্যাপ্টার ৪৬ এর অন্তর্ভুক্ত। এ চ্যাপ্টারের আওতায় থাকা পণ্যগুলোর মধ্যে আগে ৬টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছিল, নতুন তালিকায় এ চ্যাপ্টারে পণ্য সংখ্যা বেশ বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ও বাংলাদেশি চামড়ায় উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্যের মূল বাজার চীন। ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হওয়া চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা হয় বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা এ খাতের রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়তে পারেন-

চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধার তালিকায় লেদার ও লেদার গুডস অন্তর্ভুক্ত করাকে ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন টিবিএসকে বলেন, চীনের এ সিদ্ধান্ত লেদার সেক্টরের রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে চীনের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনা বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে।  

৯৮% শুল্কমুক্ত সুবিধা কার্যকর করতে বাংলাদেশকে লেটার অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়ে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল দিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

চীন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে চীন সরকার বাংলাদেশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করবে। 

চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ সরকার দ্রুত এই লেটার অফ এক্সচেঞ্জে স্বাক্ষর করলে তা হবে একটি দারুণ ব্যাপার, এতে করে বাংলাদেশের জনগণ এই বিশেষ উদ্যোগ এবং শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারবে।”

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান টিবিএসকে বলেন, চীনের দেওয়া ৯৭% শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকখাতের সকল আইটেমসহ বাংলাদেশের মোট রপ্তানি পণ্যের ৯৯% কাভার করতো। তবে লেদার ও লেদার গুডসের বেশকিছু আইটেম এ তালিকার বাইরে ছিল, যা এখন অন্তর্ভুক্ত করা হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের জন্য চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধা ১ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বাড়ানোর এই ঘটনা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণের পাশাপাশি বিশ্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।

একক দেশ হিসেবে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু চীনের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। গত অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বাড়লেও চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি বাড়েনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশ। একই সময়ে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩.৪২% বেশি।  

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৩৫৭ মিলিয়ন ডলার। চীনে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ওভেন গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য। [সৌজন্যে- টিবিএস]

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।