Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ রক্তান্ত ফিলিস্তিন, বাঁকে বাঁকে ইহুদি জায়নবাদ

রক্তান্ত ফিলিস্তিন, বাঁকে বাঁকে ইহুদি জায়নবাদ

।। সাইফুর রহমান বাদল ।।

ফিলিস্তিনে জন্ম নিয়েছিলেন খ্রীস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইইসুফ (আ.), যাকারিয়া (আ.) ও ঈসা (আ.)সহ অনেক নবী ও রাসুল। পার্শ্ববর্তী দেশ জর্ডানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নূহ (আ.), লূত (আ.) ও আইউব (আ.)। লেবাননে জন্ম নেন সালেহ (আ.) পাশের দেশ মিশরে জন্ম নেন মুসা (আ.), হারুন ও শুয়াইব (আ.)।

এসকল নবী-রাসুল ছিলেন সমসাময়িক যুগের পথপ্রদর্শক ও সংশ্লিষ্ট দেশের জনপ্রতিনিধি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইয়াকুব (আ.) এর বংশধরেরা খ্রিস্টপূর্ব তেরোশ’ বছর ধরে ফিলিস্তিন শাসন করেছেন। দাউদ (আ.) এর শাসনামলে জেরুজালেমে বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। আর তাঁর পুত্র সুলায়মান (আ.) নির্মাণ কাজ শেষ করেছিলেন। এই মসজিদেই মিরাজের রাতে সকল নবীর আগমন ঘটেছিল। আর শেষ নবী মুহাম্মাদ (স.)এর ইমামতিতে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দাউদ (আ.)-এর মৃত্যুর পর ফিলিস্তিনের শাসনভার গ্রহণ করেন তাঁরই পুত্র সুলাইমান (আ.)। আর এসব কারণেই ফিলিস্তিন, জেরুজালেম ও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিমবিশ্বে পূণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত।

নবী সুলাইমান (আ.)-এর পরে ফিলিস্তিনে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা বসবাস করতে শুরু করে । কিন্তু ইহুদিরা তাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যদের পাত্তা না দিয়ে নিজেরা জুদাহ নামে একটি রাষ্ট্র গঠন করে। জেরুজালেমকে তারা রাজধানী ঘোষণা করে। এতে খ্রিস্টান এবং মুসলিমরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে।

১৩২ সালে খ্রিস্টান রাজা কনস্টানটিন (রোমান সম্রাট) ইহুদিদেরকে জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত করেন। ফিলিস্তিন ঈসা (আ.)-এর জন্মভূমি হওয়ার কারণে খ্রিস্টানদের কাছে বিশেষ পূণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। অবশ্য সপ্তম শতাব্দীতে রোমানরা মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয়। ফিলিস্তিন চলে আসে আবার মুসলিম শাসনের অধীনে। এ সময় থেকে পরবর্তী ১২০০ বছর পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল স্বাধীন এক মুসলিম জাতিরাষ্ট্র।

হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন ইহুদি এ সময় ফিলিস্তিনে বসবাস করত। রোমানদের কাছে পরাজিত হয়ে ইহুদিরা ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নীতিভ্রষ্টতার কারণে কোন দেশেই তাদের জায়গা হয়নি। ভূমিহীন যাযাবর-রিফিউজি হিসেবে বিভিন্ন দেশের বস্তিতে তারা বসবাস করতে থাকে। সৃষ্টিলগ্নের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ইহুদিদের স্থায়ী কোনো বসতভিটা ছিল না। তারা কোনো জাতির সাথেই মিলেমিশে বাস করতে পারেনি। তাই এভাবেই তারা নির্বাসিত জীবনযাপন করতে থাকে। ওদিকে সৃষ্টির শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। তাই ইউরোপ-আমেরিকার লোভাতুর দৃষ্টি ছিল এসব দেশের প্রতি। তাই পূর্ব থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একটি মিত্র ও বন্ধু রাষ্ট্র গঠনের বাসনা ছিল।

ওদিকে যাযবর জীবন থেকে মুক্তির জন্য ইহুদিরাও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকলাপনা করতে থাকে। আর এ লক্ষ্যে তারা গড়ে তোলে ‘জায়নবাদি সংগঠন’। একদিকে ইউরোপ-আমেরিকার বাসনা, অন্যদিকে ইহুদিদের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের নকশা তৈরি করে।

এভাবেই আস্তে আস্তে ইহুদীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আবার সংগঠিত হতে থাকে আর প্ল্যান করে কিভাবে মুসলমানদের উপর আক্রমণ করা যায়। কোথাও এদের স্থায়ী কোন স্থান, দেশ, ভিটা ছিলনা কিন্তু কোন এক সময় এক ইহুদী এসে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের নিকট বসবাসের জায়গা চাই আর হয়ে গেল মুসলমানদের মহাকাল। অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম করে বিভিন্ন অজুহাতে বিশ্বের ইহুদীদের এখানে নিয়ে এসে বসতি স্থাপন করে আর একে মুসলমানদের উপর শুরু করে অঘোষিত নির্যাতন। আর কোথা থেকে কীভাবে নির্যাতন শুরু হয় জানতে পরবর্তী পর্ব পড়ুন।

তথ্য সুত্র: ক্রুসেড, সুলতান সালাউদ্দিন আয়ুবি, ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির ইতিহাস, ইহুদি জাতির ইতিহাস, মোসাদ এক্সডোস, ফিলিস্তিন বেঁচে থাকার লড়াই, ইন্টারনেট।

লেখক: কলামিস্ট ও সাংবাদিক।