প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস যে মূল্যে কেনা হবে, সেই মূল্যেই গ্রাহককে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় গতকাল সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোনো দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।
এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আইএমএফের ঋণের শর্তে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সরকার কীভাবে সামলাবে সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। তাতে সফল হয়েছি। সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহŸান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে। তিনি বলেন, গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে সেটা কী করে দেব? দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, (রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তারপরও সব মানুষ খাদ্য যাতে কম দামে পায় সে ব্যবস্থা করেছি আমরা। যারা কিছুই করতে পারে না তাদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষিতেও ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন। এখানেও আছেন তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি, গ্যাস আমি দিতে পারব; কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে আনব, সেই মূল্য দিলে আমরা গ্যাস দিতে পারব। আমরা ভর্তুকি যেটুকু বাড়ানোর বাড়িয়েছি। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা ভুলে যাবেন না, ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতের দাম কম থাকলে আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঠিকমতো বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম-আয়েশ করবে আর স্বল্পমূল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
এর আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টি মুজিবুল হক পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু পাকিস্তান সফরের পর তেহরিক-ই ইনসাফ ক্ষমতাচ্যুত হয়। তিনি বাংলাদেশে আসার পরে অনেকে মনে করেছিল সরকারের কিছু একটা হবে। জানি না, তিনি যাওয়ার পরে সরকারকে খুব খুশি খুশি লাগছে। আবার একটি দল মনে হয় খুবই অখুশি। আমরা জাতীয় পার্টি এটাকে ওইভাবে নিচ্ছি না। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি। রাজনৈতিকভাবে বর্তমান যে অবস্থাটা মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন আছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা যেন হয়। এ ধরনের কিছু আছে কি-না? এক পর্যায়ে তার বক্তব্য চলাকালেই মাইক বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারি দলের মো. হাবিবর রহমানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আর্থিক খাত ইত্যাদির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নেয়ার লক্ষ্যে পাঁচজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীসহ ৩০ সদস্য বিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট থেকে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ থেকে এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। যেগুলো হলো : স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট। এর আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য বাস্তবায়নে কানেক্টিভিটি বা অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন-প্রশিক্ষণ, ইভেন্ট এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত ও প্রশিক্ষণগত পদক্ষেপ সেখানে থাকবে।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com
দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।