সম্পর্কে তারা আপন চাচাতো ভাই। দুজন একত্রে সিঙ্গাপুর ছিলেন। ইউরোপে যাওয়ার জন্য এক ভাই অপরজনকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সেই টাকা আত্মসাৎ করায় দুজনের সম্পর্কে চিড় ধরে। দুজনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দেশে ফিরে আসেন। টাকা ঠাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে এক ভাই অপরজনকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। আর সেখানেই শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে খুন করা হয় ভাইকে। গত বছরের ১১ অক্টোবর হাত-পা বাঁধা মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান চাচাত ভাই নুরুল আমিন। সেখানে ট্রলারে চেপে মাঝনদীতে ঘুরতে নিয়ে শ্যালক তানিম মিয়ার সহায়তায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন ভাই নুরুল আমিনকে। হত্যার দু’দিন পরই কামরুল সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। এরপর হত্যাকাণ্ডে সহযোগী শ্যালককে সৌদি আরবে যাওয়ার সকল ব্যবস্থা করে দেন।
তবে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে শ্যালক তানিম মিয়া সৌদি যাবারকালে বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে মুলাদী নৌপুলিশ। শুক্রবার তানিমকে মূলাদী নিয়ে এসে হত্যায় ব্যবহৃত ট্রলারসহ সকল আলামত পুলিশ জব্দ করে শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আমিনের আদালতে হাজির করে। সেখানে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তানিম।
আটক তানিম মুলাদী উপজেলার ১ নম্বর বাটামারা ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামের খোরশেদ মিরের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের শিকার নুরুল আমিন নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা এলাকার পিয়ার আলীর ছেলে। তার চাচা হানিফের ছেলে কামরুল ইসলামের পরিকল্পনায় তাকে খুন করা হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
নাজিরপুর নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক প্রদীপ কুমার বলেন, গত বছরের ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে হাত-পা বাঁধা মরদেহটি উদ্ধার করেন। মৃতদেহের পরিচয় না পাওয়ায় তারা ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বরিশাল আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করেন। এরপরে নৌ-পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ১৬ অক্টোবর ওই মরদেহের পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রদীপ কুমার বলেন, মরদেহটি নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা এলাকার সিঙ্গাপুর প্রবাসী নুরুল আমিনের। তিনি ওই এলাকার পিয়ার আলীর ছেলে। এরপর তার স্বজনরা গত ২৫ অক্টোবর মরদেহ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে দাফন করেন। তিনি জানান, নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, নুরুল আমিন চাচাত ভাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী কামরুল ইসলামের সাথে তার শ্বশুরবাড়ি মুলাদী উপজেলার ১ নম্বর বাটামারা ইউনিয়নের গোয়ালিয়া গ্রামের খোরশেদ মিরের বাড়িতে বেড়াতে যান। পুলিশ এই সূত্র ধরেই সামনে আগায়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নুরুল আমিনকে ইউরোপে নেবার আশ্বাসে চাচাত ভাই কামরুল মোটা অংকের টাকা নেন। নুরুল আমিন দায়িত্ব নিয়ে আরো কয়েকজনের কাছ থেকে কামরুলকে টাকা এনে দেন। তবে কামরুল সেই টাকা আত্মসাৎ করেন। টাকা ফেরত চাওয়ায় দুই ভাইয়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নুরুল আমিনকে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে নিয়ে শ্যালককে নিয়ে ট্রলারে মাঝনদীতে ঘুরতে যান। এরপর হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেন।
এরপর পুলিশ কামরুল ও তার শ্যালককে ধরতে অভিযানে নামে। তখন জানা যায়, খুনের দু’দিন পর কামরুল সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন। এরপর তার শ্যালক তানিমকে সৌদি নেবার সকল ব্যবস্থা করেন কামরুল। বৃহস্পতিবার তানিমের ফ্লাইট ছিল। আমরা জানতে পেরে ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর ওইদিন বিকাল ৫টায় তাকে আটক করে বরিশালে নিয়ে আসা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যাবহৃত ট্রলারটিও জব্দ করা হয়েছে। তানিম খুনের বিষয়টি স্বীকার করে শনিবার সন্ধ্যায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ