Home স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা জ্বর হলেই সাথে সাথে কমানোর ওষুধ দেয়া ঠিক নয় : বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

জ্বর হলেই সাথে সাথে কমানোর ওষুধ দেয়া ঠিক নয় : বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

জ্বর হলেই অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের শরীরের তাপ কমিয়ে ফেলার ওষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা অপ্রয়োজনীয়, এভাবে জ্বর হলেই ওষুধ দিয়ে দেয়া ঠিক না।’ তারা বলছেন, ওষুধ দেয়া হলে শিশুরা আরাম বোধ করে ঠিকই কিন্তু এই প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ ডায়াগনসিসে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে। ডায়াগনসিসে সঠিক রিপোর্ট না আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন জ্বর এসেছে তা বুঝতে চিকিৎসকদের দেরি হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জ্বর কোনো অসুখ নয়। এটা কোনো অসুখের পূর্ব লক্ষণ। জ্বর হলে বুঝতে হবে যে, সামনে শরীরে বড় কোনো অসুখ হতে পারে এবং অন্য কোনো অসুখের লক্ষণ প্রকাশ হলো জ্বর।’

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান মেডিক্যাল স্কুলের এফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠান সিএস মট চিলড্রেনস হসপিটাল ১২ বছরের কম বয়সী এক হাজার ৩৭৬ শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা উপসংহারে বলেছেন যে, ‘প্রতি তিন শিশুর এক শিশুকে তার মা-বাবা জ্বর হলেই তাপ কমানোর ওষুধ দিয়ে থাকেন।’ ২০২২ সালে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ গবেষণাটি চালানো হয়। মট শিশুবিশেষজ্ঞ এবং এই গবেষণার সহপরিচালক ড. সুসান উলফোর্ড বলেন,

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, প্রতি তিন শিশুর একজনের জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হলেই জ্বর কমানোর ওষুধ দেয়া হচ্ছে এবং প্রতি ২ শিশুর একজনকে জ্বর কমানোর ওষুধ দেয়া হয় শিশুর শরীরে জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০১.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হলেই।

গবেষকরা বলছেন, এভাবে ওষুধ দেয়া হলে শরীর ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণের ওপর একধরনের উপাদান তৈরি হয় যাতে জ্বরের সঠিক কারণ উঠে আসে না ডায়গনসিস করা হলে।

আরও পড়তে পারেন-

গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ মা-বাবা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার আগে তাপমাত্রা মেপে নেন কিন্তু ২৬ শতাংশ মা-বাবা জ্বর না থাকলেও শিশুকে দ্বিতীয় ডোজ ওষুধ দিয়ে থাকেন। তারা এটা করে থাকেন জ্বর যেন আর ফিরে না আসে। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিশিয়ানের মুখপাত্র ড. চানদ্যানি ডিজুর বলছেন, জ্বর আসলেই মা-বাবা শিশুকে জ্বর কমানোর ওষুধ দিয়ে থাকেন এ কারণে যে, তাদের শিশুরা হয়তো ওষুধ না দিলে মারাত্মক অসুখে না ভুগতে পারে। উল্লেখ্য, ড. চানদ্যানি ডিজুর মট হাসপাতালের এই গবেষণার সাথে যুক্ত নন। এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি হলো, কারণ জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে জ্বর হলো শরীরের প্রাকৃতিক সাড়া।’ তিনি বলেন, ‘জ্বর কমানোর ওষুধে কোনো জীবাণু প্রতিরোধ করে না, এটা শুধুই শরীরের তাপ কমায় এবং শরীরে আরাম বোধ নিয়ে আসে।’

শিশুর জ্বর হলে কী করণীয়?

ড. সুসান উলফোর্ড বলেন, তাপমাত্রা সঠিকভাবে মেপে জ্বর প্রকৃতপক্ষে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুর ওজন ও উচ্চতা অনুসারে জ্বর কমানোর ওষুধ দিতে হবে। গবেষণায় উঠে এসেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের দুই তৃতীয়াংশকে প্রথমে জ্বর কমানোর বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর মধ্যে ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীরের তাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়। ড. সুসান বলেন, শিশুর আরাম ফিরিয়ে আনাটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। শিশু যে রুমে থাকবে সে রুমটি আরামদায়ক ঠাণ্ডা (কুল) রাখা উচিত কিন্তু অত্যধিক ঠাণ্ডা (কোল্ড) নয়।

এরপর শিশুকে যথেষ্ট পানি অথবা এ জাতীয় কিছু পান করাতে হবে। তিনি বলেন, ‘তিন মাস বয়সের কম শিশুর জ্বর হলে মা-বাবার উচিত শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা। কিন্তু যদি এই বয়সী শিশুর জ্বরের সাথে ঘুম ঘুম ভাব থাকে, শিশুর ঘাড়ে ব্যথা হয় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তা যত শিগগির সম্ভব শিশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।’ জ্বর হওয়ার পর যে ওষুধই দেয়া হোক না কেন মা-বাবার উচিত ওই ওষুধের একটি লিস্ট করে ফেলা যে, ‘কখন কোন ওষুধ কি ডোজে দেয়া হয়েছে।’ প্রথমবার জ্বর হওয়ার পর শিশুর জ্বর না কমলে দ্বিতীয়বার ওষুধ দেয়া উচিত নয় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এবং কখনোই ওভার ডোজ ওষুধ দেয়া যাবে না।

ড. ডিজুর মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা শিশুর সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সব কিছু করতে পারবেন না কিন্তু চিকিৎসকরা শিশুকে সুস্থ করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে অনেক কিছু করতে পারেন। রোগটি যদি ছোঁয়াচে হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকরা বুঝতে পারবেন। এমনটি হলে চিকিৎসক শিশুকে হাসপাতালেই নিরাপদে রাখবেন যেন শিশু বাইরে গিয়ে (স্কুলে) গিয়ে অন্যদের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে দিতে না পারে।’

জ্বর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে পারে

ড. উলফোর্ড বলেন, জ্বর উপকারীও হতে পারে। লো গ্রেড (অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা) জ্বর শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। জ্বর শরীরের মধ্যে থাকা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার রেপ্লিকেটিং (ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি) ঠেকিয়ে দিতে পারে। জীবাণুর বৃদ্ধি ঠেকিয়ে দিয়ে জ্বর দেহে সাদা রক্ত কণিকা উৎপাদন করতে সহায়তা করে, এমনকি অ্যান্টিবডি (প্রতিরোধক ক্ষমতা) বৃদ্ধি করে থাকে।

জ্বর কমানোর ওষুধ দিলেই শরীরে এই গুণগুলো বন্ধ হয়ে যায়। জ্বর হলে শরীরে ব্যথাও হয়ে থাকে। শরীরের ব্যথা, ইনফেকশন কোথায় বাধা বেধেছে তা চিহ্নিত করতে চিকিৎসকদের সহায়তা করে থাকে। কিন্তু জ্বর কমিয়ে ফেললে ব্যথা কমে যায় এবং রোগ চিহ্নিত হতে দেরি হয়। ফলে চিকিৎসাও বিলম্বিত হয়। আবার রোগটি ছোঁয়াচে হলে অন্যদের সংক্রমিত করতে পারে।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।