জুমার খুতবা বা সাধারণ বয়ানের সময় ইমামদের সমাজের বিতর্কিত বিষয় থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা ও দলিলভিত্তিক বক্তব্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট আলেমরা।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এক সেমিনারে এই পরামর্শ দিয়েছেন আলেমরা। প্রায় ২০০ ইমাম এ সেমিনারে অংশ নেন।
সেমিনারে ‘আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের কর্তব্য ও করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোহাম্মদপুর জামিয়া ইসলামিয়া মুহাম্মদী আশরাফুল মাদারিসের শিক্ষাসচিব মাওলানা আশরাফ বিন রাব্বানী।
আশরাফ বিন রাব্বানী বলেন, ইমামদের বক্তব্য হতে হবে দলিলভিত্তিক, তথ্যনির্ভর, সাবলীল ও গোছানো। সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে লক্ষ্য করে চটুল বক্তব্য দিলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। যাচাই–বাছাই ছাড়া বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া মসজিদকে সাধারণ মানুষের জন্য ইসলামি শিক্ষা ও সেই সঙ্গে সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে ১৮৫৯ সালে চার্লস রবার্ট ডারউইনের লেখা ‘অন দ্য অরিজিন অব স্পেসিস’ গ্রন্থের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। তাতে বলা হয়, এটি সরাসরি ইসলামি বিশ্বাসের বিরোধী। কিন্তু এই মত নাকচ করে দিয়ে অনেকে (ইমাম, আলেম) তাত্ত্বিক এবং একাডেমিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে এলোমেলো ও অকার্যকর যুক্তি প্রদর্শন করেন। সেটা কখনো কখনো ভদ্রতার সীমাও লঙ্ঘন করছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এমন অসংখ্য যুক্তি আছে, যেসবের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষের আগমন সম্পর্কে ইসলামি বিশ্বাস প্রমাণিত হয়। সেগুলো সাবলীলভাবে তুলে ধরতে হবে। যেমন মানুষই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র জীব, যে প্রকৃতি থেকে সরাসরি খাবার গ্রহণ করতে পারে না। তাকে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খাবার গ্রহণ করতে হয়। এ বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর সব প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করেছে। এ যুক্তি দিয়ে মানুষের সৃষ্টি ও পৃথিবীতে মানুষের আগমন সম্পর্কে ইসলামি বিশ্বাসই প্রমাণিত হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
‘বাংলাদেশ আইম্মা পরিষদ’ নামের একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কারওয়ান বাজারের আম্বর শাহ মসজিদের খতিব মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। তিনি বেনামাজিদের নামাজি বানাতে আলেম-ওলামা ও ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ সব পাপাচার থেকে বিরত রাখে। তাই সপ্তাহে দু-একজন করে বেনামাজিকে নামাজি বানাতে পারলেও সমাজ থেকে অনাচার দূর হয়ে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে আইম্মা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ইজতেমা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাঈল নূরপুরী, জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়ার পরিচালক আবুল কালাম, জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুমের পরিচালক জহুরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমাদ আলী কাসেমী, মাদরাসাতুল কাউসারের মুহতামিম মাওলানা সাঈদুর রহমান, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় ইমাম সমাজের সভাপতি মাওলানা কারি আবুল হুসাইন, আইম্মা পরিষদের মহাসচিব মাওলানা এনামুল হক মুসা, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আশরাফ মাসরূর প্রমুখ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ