Home ইসলাম স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হজ

স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হজ

।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

২০২০ সালে সস্ত্রীক হজে যাওয়ার জন্য ২০১৯ সালে এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন নোয়াখালীর সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম খালেক। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। সময়মতো টাকা জমা দিতে না পারায় ২০২২ সালেও তাঁদের হজে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ১-এর খরচ ছিল চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, আর প্যাকেজ ২-এর ছিল তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন যদি প্যাকেজ-১ নিয়েও হজে যেতেন, তাহলে তাঁদের খরচ পড়ত আট লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

কোরবানি ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে ১০ লাখ টাকায় সব হয়ে যেত। তাঁরা যদি হজ প্যাকেজ ২০১৯-এর প্যাকেজ-২ নিতেন, তাহলে তাঁদের খরচ পড়ত ছয় লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আট লাখ টাকায় হয়তো তাঁদের পবিত্র হজ পালন অনায়াসেই শেষ হয়ে যেত।

আর এ বছর হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে একটি, যার খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। এ বছর হজ করতে এই দম্পতির প্রয়োজন ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩০ টাকা। কোরবানি ও অন্য খরচসহ হিসাব করলে তা সর্বনিম্ন ১৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকবে। তার মানে, ২০১৯ সালের হজের খরচের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর তাঁদের হজ করতে গুনতে হবে প্যাকেজ ১-এর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বেশি, আর প্যাকেজ ২-এর ক্ষেত্রে দ্বিগুণের কাছাকাছি, যা তাঁদের হজযাত্রাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বহু মানুষই এ রকম বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বছর হজের খরচ এতটা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে বিমানভাড়া, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া ও পরিষেবা খরচ বেড়ে যাওয়াকে। এর সঙ্গে ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়াতো রয়েছেই। চলুন দেখা যাক গত পাঁচ বছরে এই খাতগুলোতে কত টাকা বাড়ল।

আরও পড়তে পারেন-

সরকারি হিসাব মতে, ২০১৭ সালে হজযাত্রীদের বিমানভাড়া ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা ২১ পয়সা। এ বছর যাত্রীদের বিমানভাড়া ধরা হয়েছে সর্বসাকল্যে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। সে হিসাবে (করোনার দুই বছর বাদ দিয়ে) গত পাঁচ বছরে বিমানভাড়া বেড়েছে ৭৩ হাজার ৭৩ টাকা ৭৯ পয়সা।

২০১৭ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ১-এ মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৩৩ টাকা ৫০ পয়সা, আর হজ প্যাকেজ ২-এ মক্কা-মাদিনায় বাড়িভাড়া ধরা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। এদিকে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে হজ প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া বাবদ খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৪৪৪ টাকা ৯১ পয়সা। সে হিসাবে হজ প্যাকেজ ১-এর বিপরীতে এ বছর মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া বাবদ খরচ বেড়েছে ৫৪ হাজার ৬১১ টাকা ৪১ পয়সা।

বিমানভাড়া ও বাড়িভাড়ার বাইরে আনুষঙ্গিক খরচ ২০১৭ সালে (সরকারি ব্যবস্থাপনা) হজ প্যাকেজ ১-এ ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৯৫১ টাকা ২৯ পয়সা। আর (সরকারি ব্যবস্থাপনা) হজ প্যাকেজ ২-এ ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা ২৯ পয়সা, যা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার ৭৭৩ টাকা ৯ পয়সায়।

ফলে যাঁদের অঢেল টাকা আছে, তাঁরা ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য হজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। যাঁদের ওপর আগে থেকে হজ ফরজ হয়ে আছে, কিন্তু কোনো কারণে হজ করা হয়নি, তাঁরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। তাই ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনার সহজ কোনো মাধ্যম খুঁজে বের করা সময়ের দাবি।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।