।। শাহ ফখরুজ্জামান, হবিগঞ্জ ।।
কোকিলের মতো দেখতে পাখিটিকে অনেকে বলেন বনকোকিল। তবে বিশেষজ্ঞ তথা বইয়ের ভাষায় এর নাম সবুজ ঠোঁট মালকোয়া। ইংরেজি নাম Green billed Malkoha । এটা এ দেশের স্থানীয় পাখি। দেশজুড়েই কমবেশি দেখা যায়। তবে বনভূমিতে বেশি দেখা যায়।
সাধারণত দেশের নানা জায়গায় দেখা গেলেও স্বভাবে নিভৃতচারী সবুজ ঠোঁট মালকোয়া। ঝোপের ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে এরা। এ কারণে এর সন্ধান পাওয়া কষ্টকর। গাছের পাতার সঙ্গে পালকের রঙের মিল থাকার কারণেও বনের গায়ে মিশে থাকে পাখিটি।
সবুজ ঠোঁট মালকোয়া আকারে কাকের চেয়ে কিছুটা বড় হলেও ওজন খুব বেশি না। মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসরাভ সবুজ। গলা, বুক ও পেট হলদে ধূসর। খুব লম্বা কালচে সবুজ লেজের পালকের প্রান্তে সাদা ছোপ। চোখের চার পাশে পালকহীন ত্বক ও ঠোঁটের গোড়া টকটকে লাল। চোখ বাদামি, ঠোঁট সবুজ আর পা কালচে।
বসন্তে এ পাখির দেখা মিললেও কোকিলের মতো সুন্দর করে ডাকতে পারে না। তাই চুপচাপই থাকে বেশি। কিছুটা খসখসে কণ্ঠে এরা ডাকে ‘কো…কো’।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুভাষ চন্দ দেব বলেন, সবুজ ঠোঁট মালকোয়া বুদ্ধিমান ও লড়াকু স্বভাবের পাখি। গিরগিটি, নির্বিষ সাপ, ব্যাঙ, তক্ষক ইত্যাদি শিকার করে এরা। পতঙ্গ, ছোট পাখি এবং পাখির ডিম-ছানাও খায়। পায়ের ব্যবহারে পটু এ পাখি। কোকিল গোত্রীয় পাখি হলেও এরা অলস নয় বরং সংসারি। নিজেরা বাসা বানায় এবং দুই-তিনটি ডিম পাড়ে। এদের প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। শিকারি হিসেবে পরিচিত সবুজ ঠোঁট মালকোয়া নিজের বাসার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেয় না অন্য কোনো পাখিকে। তবে ডাকাত বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মোটের ওপর নিরীহ। সুযোগ পেলে অন্য প্রজাতির শান্ত পাখিরা পর্যন্ত এদের দিকে তেড়ে যায়।
অধ্যাপক সুভাষ চন্দ দেব বলেন, সবুজ ঠোঁট মালকোয়া দেশের স্থানীয় প্রজাতির পাখি হলেও সচরাচর দেখা যায় না। থাকে বনবাদাড়ের গহিনে। একসময় লোকালয়েও দেখা মিলত। এখন একটি বা দুটির বেশি কেউ একসঙ্গে দেখতে পায় না। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ বড় বড় বনে এখনো কিছু পাখি আছে। বন ও পাহাড় ধ্বংসের কারণে অন্য অনেক পশুপাখির মতোই সবুজ ঠোঁট মালকোয়াও ঝুঁকিতে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একদল পাখি পর্যবেক্ষক ও আলোকচিত্রী হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গিয়েছিলেন। অনেকে সারা দিন ছিলেন। এ সময় হরেক পাখির সঙ্গে সবুজ ঠোঁট মালকোয়ারও দেখা পান তাঁরা। ওপরের ছবিটি উদ্যানের টাওয়ারের পাশ থেকে তোলা।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ