Home ফিকহ ও মাসায়েল রোযার শুদ্ধতায় সদকাতুল ফিতর

রোযার শুদ্ধতায় সদকাতুল ফিতর

।। শায়খুল হাদীস মাওলানা তাজুল ইসলাম আশরাফী ।।

সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমযানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। ’ (সুরা আলা, আয়াত- ১৪)।

ইসলামী বিধানমতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস- ১৫১২)।

সদকাতুল ফিতরের দুটি তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ, হাদিস- ১৬০৯)।

যাদের ওপর ওয়াজিব

ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় কারো কাছে জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির- ২/২৮১)।

আরও পড়তে পারেন-

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১. ‘এক সা’ ২.‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এ ছাড়া গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৮)।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা মতে, ‘এক সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ‘আধা সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, এক কেজি ৬৫০ গ্রাম।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন সে যেন মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা করে যে জেনে রেখো, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের ওপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু। (তিরমিযী, হাদিস- ৬৭৪)।

কখন আদায় করা উত্তম

ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করা সর্বোত্তম। কারণ এর মাধ্যমে ধনী-গরিবের মাঝে আনন্দের ভাগাভাগি হয়। তা ছাড়া এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতও। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস- ১১২৯৬)।

ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস- ১৫০৯)।

তবে কারো যদি কোনো কারণবশত ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে।

হাদিসে উল্লিখিত পাঁচটি দ্রব্যের যেকোনো একটি দ্রব্য বা এর মূল্য আদায়ের মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায়ের সুযোগ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এর কারণ হচ্ছে মুসলিমরা যেন নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো একটির মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে তা আদায় করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সামর্থ্যবানরাও ব্যাপকভাবে সর্বনিম্ন দ্রব্যের মূল্য ধরে তা আদায় করে থাকে, যা সত্যিই অপছন্দনীয়। কারণ হাদিস শরিফে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোত্কৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। ’ (বুখারি, হাদিস- ২৫১৮)।

মহান আল্লাহ আমাদের সাধ্যানুযায়ী যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের তাওফিক দান করুন।

লেখক: শায়খুল হাদিস- তিলপাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা, খিলগাঁও, ঢাকা ও মিফতাহুল উলূম মাদ্রাসা, বাড্ডা, ঢাকা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- সানমুন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, নয়াপল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।