Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর মান্নত কী এবং মান্নত শুদ্ধ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত রয়েছে?

মান্নত কী এবং মান্নত শুদ্ধ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত রয়েছে?

প্রশ্ন- মান্নত কি? মান্নত শুদ্ধ হওয়ার জন্য কি কি শর্ত রয়েছে। আমাদের দেশে মসজিদের নামে বিভিন্ন সময় ফলমূল এবং গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী দেওয়া হয়। অনেক সময় দানকারীর কোন খোঁজখবর থাকে না। ফলতঃ এসব জিনিস কোন শ্রেণীর তা বোঝা যায় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এরূপ জিনিস মুসল্লীরা ব্যবহার করতে পারবে কি? অথবা মসজিদের কাজে ব্যবহার করা যাবে কি? তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, মুসীবতগ্রস্ত ব্যক্তি আল্লাহর নামে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী ছেড়ে দেয়। যেমন গরু, মহিষ ইত্যাদি। যা সর্বদা মানুষের ফসল ইত্যাদি নষ্ট করে থাকে এমনকি মানুষের জানের হুমকি পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায়। এ থেকে বাঁচার উপায় কি?

– রেজাউল করীম, ইকরাশী কবিরাজ বাড়ী, দোহার, ঢাকা।

উত্তর- শরীয়তের পরিভাষায় ওয়াজিব নয় এমন কিছু নিজের উপর ওয়াজিব করে নেওয়াকে মান্নত বলা হয়। এরূপ মান্নত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তসমূহ হচ্ছে-

(১) মান্নতকৃত বস্তু ইবাদতে মাক্বসূদাহ্ তথা মৌলিক ইবাদতের মধ্য থেকে হতে হবে। যেমন- নামায, রোযা, হজ্ব, ইত্যাদি।

(২) সত্তাগত পাপ কর্মের মান্নত করা যাবে না। যেমন, কেউ মান্নত করল, আমার অমুক কাজটি সমাধা হলে শরাব পান করব কিংবা বলল, অমুক কাজটি পূর্ণ হলে মানুষ খুন করব ইত্যাদি।

(৩) সেটি অন্তত ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। যেমন- নামায, রোযা ইত্যাদি।

(৪) এমন কিছুর মান্নত করা যাবে না যেটি ইতিপূর্বে তার উপর ওয়াজিব ছিল। যেমন- ওয়াক্তিয়া নামায, রমযান মাসের রোযা ইত্যাদি।

(৫) মালিকানার অতিরিক্ত মান্নত করা যাবে না। যেমন- দশ টাকার মালিক হয়ে বিশ টাকার মান্নত করা।

(৬) মালিকানা সত্ত্ব বহির্ভুত কোন কিছুর মান্নত করা যাবে না। যেমন- অপরের মালিকার কোন কিছু নিজের নামে মান্নত করা।

(৭) এমন কিছুর মান্নত করা যাবে না, যা শরীয়ত এবং যুক্তির নিরিখে অসম্ভব। যেমন, বিগত দিনের রোযার মান্নত করা।

উপরোক্ত শর্তসমূহ মান্নত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য। যে মান্নত উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে হবে না, সে মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব নয়। কারণ, মান্নত করাই যেখানে শুদ্ধ হয়নি, সেখানে আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার প্রশ্ন আসে না।
এ কারণেই মসজিদের নামে কোন কিছু মান্নত করলে তা শুদ্ধ হয় না। কাজেই মসজিদের নামে কৃত মান্নত আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে ইচ্ছা করলে নফল সাদকা হিসেবে আদায় করা যাবে।

মসজিদের নামে যেসব জিনিস আসে সেগুলোর দাতার খোঁজ খবর পাওয়া না গেলে, সেগুলো খাবার সামগ্রী হলে ইমাম, মুয়াযযিন বা মুসল্লী সবাই খেতে পারবে। আর যদি টাকা-পয়সা হয়, তাহলে নফল সাদকা হিসেবে মসজিদ ফাণ্ডে জমা করে নিতে হবে।

আর প্রশ্নোল্লিখিত আল্লাহর নামে গরু-মহিষ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি শরীয়ত সম্মত নয়। এভাবে গরু-মহিষ ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কেউ যদি এরূপ করে ফেলে, তাহলে পশুটিকে ধরে তার প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। মালিক পাওয়া না গেলে যবাই করে ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করে দিলে অসুবিধা হবে না।

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখা যেতে পারে- ফাতওয়ায়ে শামী-৩/৭৩৫-৭৪১, আল-ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবাআহ-২/১৪৫, ফাতওয়ায়ে আলমগিরিয়্যা-১/২০৮।

জবাব লিখেছেন- মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী

ফাযেলে দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা), মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।

নোটঃ উম্মাহ ২৪ডটকম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে আপনিও চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন অবশ্যই ইসলাম ধর্মবিষয়ক হতে হবে। প্রশ্নের আকার ছোট হতে হবে এবং একক বিষয়বস্তুর হতে হবে। প্রশ্ন পাঠানোর জন্য editor@ummah24.com এই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।