Home ইসলাম চাঁদ দেখার শরীয়ত সম্মত বিধান

চাঁদ দেখার শরীয়ত সম্মত বিধান

।। আল্লামা মুফতী নূর আহমদ ।।

* মাহে শা’বানের চাঁদের ঊনত্রিশ তারিখে মাহে রমযানের চাঁদ অনুসন্ধান করা ওয়াজিবে কিফায়া। (হিদায়া-১/২১৩ পৃষ্ঠা)।

* আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা ধুলিময় থাকার কারণে যদি রমযানের চাঁদ পরিদৃষ্ট না হয়, তবে এমন একজন প্রকৃত দ্বীনদার সত্যবাদী লোক এসে যদি সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আমি স্বয়ং রমযানের চাঁদ দেখেছি, তাহলে চাঁদ উদয় হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়ে যাবে। সাক্ষ্যদাতা স্ত্রীলোক হোক বা পুরুষ। (হিদায়া- ১/২১৫ পৃষ্ঠা)।

* কিন্তু উপরোক্ত কারণে যদি ঈদের চাঁদ দেখা না যায়, তবে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না; তিনি যতই বিশ্বস্ত হোন না কেন। বরং যখন দু’জন বিশ্বস্ত এবং পরহেযগার পুরুষ অথবা একজন দ্বীনদার পুরুষ ও দু’জন দ্বীনদার মহিলা চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করবে, কেবল তখনই রমযানের চাঁদ উঠা প্রমাণিত হবে। (হিদায়া-১/২১৬)।

* যদি আকাশ সম্পূর্ণ পরিস্কার ও মেঘমুক্ত থাকে, তখন রমযানের হোক কিংবা ঈদের, দু’চার জন ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রদানের দ্বারা চাঁদ উঠা প্রমাণিত হবে না। তবে যদি অনেক ব্যক্তি স্বচক্ষে চাঁদ দেখার কথা সাক্ষ্য দেয় এবং অন্তরও একথার সাক্ষ্য দেয় যে, এতগুলো লোক একত্রে মিথ্যা কথা রটাতে কিংবা গুজব সৃষ্টি করতে পারে না,  তখন চাঁদ উঠা প্রমাণিত হবে। (শরহে বিদায়া- ১ খণ্ড ২১৬ পৃষ্ঠা)।

* যে ব্যক্তি শরীয়তের বিধান মত চলে না, বরং শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপে সর্বদা লিপ্ত থাকে, যেমন- মিথ্যা বলে, নামায পড়ে না, রোযা রাখে না, সুদ-ঘুষ খায় ইত্যাদি এমন লোকের কথার কোন বিশ্বস্ততা নেই। এ ধরনের লোক যদি শত বার শপথ করে চাঁদ দেখার স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে, তবুও তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। যদিও এরূপ চরিত্রের দুই বা ততোধিক ব্যক্তি হয়। (হিদায়া, বাহরুর রায়েক্ব- ২/২৬৬, দুররে মুখতার- ২/১২৪ পৃষ্ঠা)।

* অনেক সময় দেশব্যাপী এমনভাবে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, গতকাল চাঁদ দেখা গিয়েছে, বহু লোক চাঁদ দেখেছে। কিন্তু তদন্ত করে এমন কাউকে পাওয়া যায় না যিনি স্বচক্ষে চাঁদ দেখেছেন। এরূপ ভিত্তিহীন খবর শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। (ফাতওয়ায়ে শামী- ২/১২৯ পৃষ্ঠা)।

* অনেক এলাকায় এরূপ একটি কথার প্রচলন আছে যে, যে বারে রজবের ৪ তারিখ হবে সে বারে রমযানের প্রথম তারিখ হবে। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই, বরং চাঁদ দেখে রোযা রাখতে হবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ করতে হবে। (মিশকাত শরীফ- ১৬৬ পৃষ্ঠা)।

* চাঁদ দেখে এরূপ শংসয়মূলক কথাবার্তা বলা অনুচিত যে, চাঁদটা অনেক বড় দেখা যাচ্ছে, এটা মনে হয় গতকালের চাঁদ। এরূপ মন্তব্য করাকে হাদীস শরীফে ক্বিয়ামতের নিদর্শন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চাঁদ ছোট বড় হওয়ায় কোন পার্থক্য নেই। অনুরূপ হিন্দু ও গণকদের হিসাব (যেমন আজ দ্বিতীয়া সুতরাং অবশ্যই চাঁদ উঠবে) এবং বৈজ্ঞানিকদের নির্ধারিত সময়ও বিধান সম্মত না হলে শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।

মোট কথা, রমযানের চাঁদ ব্যতীত অন্য কোন চাঁদের ব্যাপারে আধুনিক যন্ত্রপাতি যথা- দূরবীন, তার, ওয়ারলেস, রেডিও, টেলিফোন, টেলিভিশন ইত্যাদির খবরাখবরের উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। অবশ্য রমযানের চাঁদের ক্ষেত্রেও কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু সেখানেও সাবধানতা অবলম্বন শ্রেয়। (কাশফুয্ যুনূন- ৬০ পৃষ্ঠা)।

লেখক: প্রবীণ ইসলামী আইন বিশারদ, ইসলামী আইনবিষয়ক বহু গ্রন্থের প্রণেতা এবং মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।