Home ইসলাম ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম

ইসলাম একটি সার্বজনীন ধর্ম

।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।

দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ কোন না কোন দ্বীন বা ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে। আর এ পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানব জাতি এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার চরম প্রয়োজন অনুভব করে আসছিল, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। বিশ্ব মানবের এ সম্মিলিত প্রয়োজন মেটানোর মহান লক্ষ্যেই আল্লাহ্ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এ পৃথিবীতে। যাতে জগদ্বাসীরা সর্বোত্তম দ্বীনের অনুসারী হতে পারে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ নিজেদেরকে সেই পুরানো গোমরাহীর ভয়াল সাগরেই নিমজ্জিত রাখল।

তারা নিজেদের মস্তিষ্ক প্রসূত বাতিল মতবাদকে সঠিক ধর্মের (ইসলামের) উপর প্রাধান্য দিয়ে নানা উপায়ে দ্বীনের বিরোধিতা করতে লাগল। অথচ তারাও প্রথমে পারলৌকিক শান্তি প্রাপ্তি ও মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে সঠিক দ্বীনের সন্ধান লাভের জন্য হৃদয়ে চরম ব্যাকুলতা অনুভব করেছিল।

আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে নবী-রাসূলগণ যখন যে দ্বীনই নিয়ে এসেছেন, সবগুলোতেই এক দিকে যেমন আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম পন্থা বর্ণিত ছিল, ঠিক তেমনি অপরদিকে বর্ণিত ছিল খোদায়ী বিধান মতে এ দুনিয়াতে নিরাপদে বসবাসের যাবতীয় মূলনীতি। নবী-রাসূলগণের এ পবিত্র আগমনী ধারার সর্বশেষ যাত্রী হলেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি এসে দ্বীনকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজালেন। বিশ্ববাসীকে পুনঃদ্বীনের দাওয়াত দিলেন। মানুষকে ইসলামের সংগে নতুন করে পরিচয় করালেন। মিথ্যা ছেড়ে সত্যের পথে আসার জন্য সকলকে আহ্বান জানালেন। তাঁর আনিত দ্বীন হচ্ছে একটি নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। তিনি এসেই একদিকে পার্থিব জীবন ব্যবস্থা সংশোধনের ঐতিহাসিক ঘোষণা দিলেন। অপরদিকে পারলৌকিক জীবনে অফুরন্ত সুখ-শান্তি প্রাপ্তির মূলনীতিগুলোও বাতলে দিলেন বিশ্বমানবকে।

তিনি নিজেও এই দ্বীনের মূলনীতি অনুসারে জীবনযাপন করেছেন আর সকল ভুল মতবাদের মূলোৎপাটন করতঃ সেখানে সত্য সুন্দর দ্বীনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে। দুনিয়া থেকে সকল প্রকার ফিৎনা ফ্যাসাদ দূরীভূত করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাইতো আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এই ইসলাম ধর্মকে “সর্বোত্তম দ্বীন” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং নিজের সকল বান্দাদের জন্য তা পছন্দ ও মনোনয়ন করেছেন। বিশ্বমানবের একমাত্র এটাই শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। এটাই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নতুন দ্বীন প্রবর্তনের অবকাশ নেই। অতএব, ক্বিয়ামত পর্যন্ত দেশ-দেশান্তরে যুগ-যুগান্তরে বর্ণ ও গোত্র-বংশ নির্বিশেষে সকলের কাছে এই সুমহান দ্বীনই অনুসৃত ও প্রতিপালিত হবে।

এমর্মে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” (সূরা মায়িদা- ৩ আয়াত)।

আল্লাহ্ তায়ালার নিকট একমাত্র ইসলামই সত্য-সঠিক ধর্ম হিসেবে মনোনীত। তাই তিনি বিশ্ববাসীকে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেছেন- “তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।” (সূরা আলে ইমরান- ১০২ আয়াত)।

এ প্রসঙ্গে অপর এক আয়াতে ঘোষিত হচ্ছে- “নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান- ১৯ আয়াত)।

এই মর্মে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “কুরআন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ‘দ্বীন ইসলাম’ই হচ্ছে মানুষকে হিদায়াত দানে সহায়ক পথ সমূহের মাঝে সর্বোত্তম পথ।”

উপরোক্ত আলোচনায় বুঝাগেল যে, ইসলাম হচ্ছে সকল দ্বীন-ধর্মের মাঝে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামই হচ্ছে পূর্বেকার সকল ধর্ম ও মতবাদকে রহিতকারী। কেননা, পবিত্র কুরআনে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “খাতামুন্ নাবিয়্যীন” বলা হয়েছে। অর্থাৎ- তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নতুন নবীর আগমন ঘটবেনা। আর তাঁর পরে যদি কোন নতুন নবী-রাসূলের আগমন না ঘটে, তাহলে তাঁর আনিত দ্বীন-ইসলামই ক্বিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে চালু থাকবে।

কেননা, নবী-রাসূলগণ তো আসলে সত্য ধর্ম নিয়েই আসেন। অন্যান্য ধর্মকে ইসলাম রহিত করে দিয়েছে। এমনকি তাওরাত-ইঞ্জিলে ইহুদী-নাসারাদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, “তোমরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আন। কেননা, ইসলামের পরে কেউ যদি কোন নতুন ধর্মকে খাঁটি বিশুদ্ধ ধর্ম বলে দাবী করে, তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।”

ইসলাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ধর্ম হওয়ার কারণ এটাও যে, ইসলাম দুনিয়ার সকল প্রকার বাতিল মতবাদের মূলোৎপাটন করতঃ তদস্থলে সঠিক মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাছাড়া ইসলাম সাম্য-মৈত্রীর যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, অন্য সব ধর্ম তা বিকাশে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মুনিব-গোলাম একই আরোহণে চড়ে পাশাপাশি বসে ঘুরে বেড়ানো, কিংবা উভয়ে একই সঙ্গে বসে একই দস্তরখানে খানা খাওয়ার ‘আদর্শ বিধান’ একমাত্র ইসলামই সমর্থন করে। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে এ ধরনের সাম্য-মৈত্রীর নজীর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ইসলাম পূর্বযুগে নারীরা তাদের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাদেরকে শুধুমাত্র দাসী-বাঁদী ও ভোগ্যবস্তু মনে করা হত। ইসলাম এসে নারীকে সন্তানের মা ও গৃহের রাণী হওয়ার মর্যাদা দান করেছে। শুধু তাই নয়, বরং তাদের সকল প্রকার হৃত অধিকারকে পুনরুদ্ধার করেছে। বিশ্বমানবতাকে সর্বশীর্ষে সমাসীন করেছে। দুনিয়ার সকল ভুল মতবাদকে (যেগুলো মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল) চিরতরে ধ্বংস করে অপূর্ব সুখ-শান্তির প্রতিশ্রুত, সত্য ও ন্যায়ের মূলনীতি বাস্তবায়ন করেছে। ফলে জগতের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ মুর্খতার অতল গহ্বরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, ইসলাম এসে তাদেরকে সেই বিভীষিকাময় মিথ্যা ও মুর্খতার দুর্গন্ধময় গর্ত থেকে উদ্ধার করে একটি আলোময় জনপদে দাঁড় করিয়ে শহরবাসীদের ন্যায় তাদেরকে সুশিক্ষিত ও সুসভ্য জাতিতে পরিণত করেছে।

উপরোক্ত আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে, ইসলাম হল একটি সহজ-সরল, সার্বজনীন, বিশ্বজনীন ও চিরন্তন পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মুক্তির ধর্ম। ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের মহান লক্ষ্যে সকল প্রকার ভ্রান্ত মতবাদ চিরতরে পরিহার করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক।

লেখকঃ সিনিয়র মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম এবং কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com