Home গল্প-উপন্যাস গল্প: আঁধার পথের যাত্রী

গল্প: আঁধার পথের যাত্রী

।। জাহাঙ্গীর আলম অরণ্য ।।

অন্ধকার পৃথিবীতে ডুবে থেকে থেকে কেঁচোর মতোই মাটির নিঃসীম নীরবতায় সে শুধু অস্তিত্বহীন থেকে যায়। মাটির গভীরের নিরেট অন্ধকার আর মাটির উপরের খোলা পৃথিবী দুই-ই তার কাছে সমান। তবু তো কেঁচো মানসিক অনুভূতিহীন, আবেগহীন। অনুভূতিহীন নির্লিপ্ততায় সে বাস করে আসছে পৃথিবীর আদিম দিনটি থেকে। তাকে বাঁচতে হয় না কারো অনুগ্রহ নিয়ে। তার কোনো হাহাকার নেই তার নির্লিপ্ত জীবন নিয়ে। কিন্তু খবির তো অনুভূতিতে জ্বাজল্যমান এক রক্ত-মাংসের সহজাত বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী। সে তো আর কেঁচোর মতো নিঃসীম অন্ধকার বয়ে বেড়াতে পারে না জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। মোহহীন হয়ে এক অন্ধকার জগতে ডুবে থাকতে পারে না অবিরত। তবু তাকে তা-ই করতে হয়। কেঁচোর চেয়েও জঘন্যভাবে দিন কাটাতে হয় তাকে। বাঁচতে হয় অন্যের দয়া আর করুণার উপর নির্ভর করে। কারণ, সে জন্মান্ধ, তার উপরে আবার সহায়-সম্বলহীন গরিব ভিক্ষুক।

তার জীবন অন্যসব প্রাণীকূলের মতো স্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক জীবন অনেক বৈচিত্রে ভরা আর জৌলুসময়। খবির তা জানে এবং প্রতিনিয়ত তা অনুভব করে- একদম হৃদয়ের মূল শিকড় থেকে। শত অপ্রাপ্তির মাঝেও প্রাপ্তির বাজি ধরতে পারে এ স্বাভাবিক মানুষগুলো। কিন্তু খবির বাজি ধরতে পারে না। খবির আশায় বুক বাঁধতে পারে না। সে সংগ্রাম করতে জানে না। সে শুধু জানে আত্মসমর্পণ করতে। সে বুঝে, সে মানুষ নয়। সে প্রাণী আর শূন্যতা এই দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে ঝুলে থাকা খাপছাড়া এক অস্তিত্ব মাত্র।

তবুও সে স্বপ্ন দেখে। অনুভবের পায়ে ভর করে একজন চোখওয়ালা মানুষ হয়ে সে ছুটে চলে; মানুষ, কুকুর, বিড়াল, টিকটিকি যেভাবে ছুটে চলে তাদের নিজস্ব গতিধারায়। খবির যখন ঝিম মেরে বসে থাকে, তখন বিনিময় করে, দুটো নয় একটি মাত্র চোখের বিনিময়ে কেউ নিয়ে যাক তার একটি হাত বা একটি পা অথবা অন্য কেনো একটি অঙ্গ। তবু তার একটি চোখ চাই, একটি মাত্র চোখ। যে চোখ দিয়ে সে সজীব হতে চায়, নিজের নাম লেখাতে চায় মানুষের স্তরে অথবা অন্য চোখওয়ালা কোনো প্রাণীর স্তরে। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। বুকের ভেতরে জেগে উঠে ভিন্নমাত্রার এক হাহাকার।

খবির সব সময় রঙয়ের কথা শোনে। আর কতোবারই না সে ভেবেছেÑরঙ কী, দেখতে কেমন হয় তা! সাদা রঙ কীসের মতো! বকের মতো। কিন্তু বক কীসের মতো! লাল রঙ রক্তের মতো, কিন্তু রক্ত দেখতে কীসের মতো! খবির এসবের আর কূল-কিনারা পায় না। সে ঘুমের মধ্যে বহুবার স্বপ্নে দেখেছে। তবে তা ঠিক চোখওয়ালা মানুষের দুচোখের তুলিতে আর অন্তরের পটে আঁকা পৃথিবীর বাস্তবতা থেকে উদ্ভুত বাস্তবতা মিশ্রিত স্বপ্ন নয়। সে স্বপ্ন এক অদ্ভুত স্বপ্ন, অদ্ভুত তার প্রকৃতি, অদ্ভুত তার ঢং। এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের মাঝে আরেক অন্ধকারাচ্ছন্ন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিসম দৈত্যের নাচন।

এসব দেখে কেঁপে উঠে ঘুম ছুটে যায় তার। কিন্তু এই অনুভূতিগুলো কাউকে বলবে তেমন মানুষও জোটে না। জুটলেও উদাহরণ সহযোগে স্বপ্নের বর্ণনা খুঁজে পায় না। গাছ-পালা, মানুষ-জন, ঘর-বাড়ি, আকাশ-মাটি, রঙিন দৃশ্য এসব তার কোনোদিন দেখা হয় নি। তাই এসবের অস্তিত্ব স্বপ্নের মাঝেও ধরা দেয় না। সে শুধু অন্ধকারের গল্প জানে, নিজের স্বপ্নে ফুটাতে পারে সর্বোচ্চ ওই অন্ধকারের অস্তিত্বই। একটা স্বাভাবিক স্বপ্ন দেখার অধিকারও খবিরের নেই। সে কতো যে কেঁদেছে, দুহাতের কব্জি উপরের দিকে চিত করে অঝোরে কেঁদেছে, বুক ফাটিয়ে কেঁদেছে, ‘আমাকে কেনো এতোদিক থেকে বঞ্চিত করলে! আমাকে দৃষ্টি দাও, অন্তত একটুখানি দৃষ্টি- যা একটি পিঁপড়াকেও দিয়ে থাকো! আমি দেখতে চাই, শুধু একটু দেখতে চাই! তারপর সব ছেড়ে আজীবনের জন্য তোমার ছায়ার নিচে পড়ে থাকবো! তবে আমার এইটুকুর জন্য যদি তোমার ভা-ারে টান পড়ে, তবে আমায় তুলে নাও!’

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে আবার শেষের আবেদনটা তুলেও নেয়। তারও যে বাঁচতে ইচ্ছা হয়! 

জন্মের পর থেকেই সে না দেখেছে গাছ-পাতা, না দেখেছে মাটি-আকাশ, না দেখেছে মা-বাবার অবয়ব, না আপন-পর এবং না অন্য কোনোকিছু। সবকিছুর অস্তিত্বই সে টের পায় কিন্তু সেসবের অবয়ব জানে না। একটা শিশুর চেয়েও তার অভিজ্ঞতা অনেক কম। সে দূরের কোকিলের ডাক শুনেছে। কিন্তু কোকিলের অবয়ব পায়ের কাছে নেচে উঠা মুরগীর বাচ্চাটির মতো নাকি তার তেল চিটচিটে বালিশটার মতো, খবির তা জানে না।

তার এতোসব শূন্যতার মাঝে প্রতিনিয়ত আবার নতুন শূন্যতা যোগ করে দেয় তার সমজাতি মনুষ্যসমাজ। একদল এমন অবহেলা করে যে খবিরের মরে যেতে ইচ্ছা করে। আর আরেকদল এমনভাবে অর্বাচীন করুণা দেখায় যে অপমানে তার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে।

এতোসব শূন্যতার মাঝেও একবার সে পূর্ণ হয়েছিলো। নছিমনের সাথে বিয়ের পরে বাসর ঘরে। এতো সুখ সে কোনোদিনও পায় নি, পায় নি নিজেকে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবার সুযোগও। আশাও করে নি আরেকটা মানুষ তাকে এতোটা নির্ভরশীলতার প্রতীক বানিয়ে নেবে। অনেক সুখ হয়েছিলো তখন। তবুও হৃদয়ের একদম গহিন থেকে দীর্ঘশ্বাসের একটা দমক বেড়িয়েছিলো খবিরের; বউ জিনিসটা যদি একবার একটু দেখা যেতো দুচোখ মেলে!

লোকে বলেছিলো, তার বউ দেখতে নাকি বেশ বিশ্রী রকমের। কিন্তু সুশ্রী আর বিশ্রী এ দুয়ের যে কী তফাৎ, খবির তা জানে না। অতএব বউয়ের রূপ নিয়ে কোনো আগ্রহ বা অনাগ্রহই পরিলক্ষিত হয় নি তার মধ্যে। বরং বউয়ের দুটো চোখ আছে, যে চোখের সুফল সে ভোগ করবে অবারিত বাতাসের মতো, আজীবন, এটাই তার কাছে বড়ো পাওয়া।

পাশের গ্রামের তালাকপ্রাপ্তা মাঝবয়েসী নারী নছিমন জীবনের সব আকাঙ্খা আর সংসার করার আশা যখন ছেড়েই দিয়েছিলো, তখনই খবিরের সাথে তার বিয়ের একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এলাকার কিছু দায়িত্ববান মানুষ। নছিমন রাজি না হতে হতেও রাজি হয়ে গেলো। তাকে কেউ কানার বউ বলে হেয় করুক সেটা সে কিছুতেই হতে দিতে রাজি ছিলো না। কিন্তু তার জীবনেরও একটা তাগিদ ছিলো, সেই তাগিদ থেকেই নিজের প্রয়োজনেই সে রাজি হয়েছিলো শেষেÑপ্রতিটি মানুষই যেমন নিজের তাগিদেই অন্যের সাথে লেনাদেনায় রাজি হয়।

সংসার পাতার কয়েক মাসের মধ্যেই খবিরের একমাত্র অভিভাবক মা মারা গেলেন। বিয়ের কিছুদিন পর খবিরের ভাই খবিরকে আলাদা করে দিলো। এমনিতেই বাপের সহায় সম্পত্তি কিছুই নেই। এতোকাল মায়ের সাহায্য আর ভাইয়ের গায়েখাটা উপার্জনের উপর খবিরকে নির্ভর করতে হয়েছে। এখন গেলো দুজনই। তবে খবির গঞ্জের দোকানে দোকানে কিছু সাহায্য চেয়ে নিজের জন্য কিছুটা ব্যবন্থা করতে চেষ্টা করতো। কিন্তু গঞ্জ পর্যন্ত যেতেই যতো রকমের ঝামেলা। কয়েকবার তো গাড়ির নিচে চাপা পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। দু-তিনবার মচকে গিয়েছিলো হাত পা, ছড়ে গিয়েছিলো চামড়া। তাই ছেলেকে গঞ্জে পাঠাতে ভরসা পেতেন না মা।

কিন্তু এখন আর উপায় নেই। দুটো পেট চালানো অসম্ভব হয়ে পড়লো খবিরের। তা ছাড়া সরাসরি ভিক্ষা করাটাও বোধে হাতুড়ি পেটায়। জীবনের মান একদম শেষ ধাপে নামিয়ে  নিয়ে তার নিজস্ব সমাজে সে অস্তিত্ব সঙ্কটের একদম শেষ ধাপে চলে যেতে চায় না। তার উপরে অল্প কিছু চাল ভিক্ষা করার বিনিময়ে গ্রামের মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেওয়াও তার জন্য সম্ভব নয়। শেষে নছিমনকে নিয়ে শহরে উঠার সিদ্ধান্ত নিলো।

শহরে উঠার পর সব এলোমেলো। কোথায় থাকবে, কী খাবে, কী কাজ করবে। দু’রাত ট্রেন লাইনের পাশে ময়লার মধ্যে শুয়ে কাটালো। এদের পাশে শুয়ে থাকতো দুটো কুকুর। কুকুর দুটো এদের ভালোভাবে নিতে পারে নি। সারা দিনরাত ফোঁস ফোঁস করে করে আর গর্জন করে করে এদের তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। একজন স্বাভাবিক মানুষকে যতোটা সমীহ করে চলে শহুরে এই কুকুরগুলো, সেই সমীহটা এদের দেখানোর প্রয়োজনীয়তা জেগে উঠে নি কুকুরগুলোর মধ্যে। বরং ওদের সমপর্যায়ের আর প্রতিদ্বন্দ¦ী ভেবে এদের তাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। শেষে রেল লাইনের বস্তিতে একটা কক্ষ ভাড়া নিলো এরা। ভাড়া সাধারণ বস্তির চেয়ে কিছুটা কম। ভাড়াটা দিতে হয় এলাকার রাজনৈতিক মাস্তানদের।

এবার করবে কী! শেষে অনিচ্ছার সেই ভিক্ষার থালাই হাতে তুলে নিতে হলো খবিরকে। আর নছিমন মিশে গেলো গাঁজা বিক্রেতাদের দলে। অনেক মানুষ আসা যাওয়া করতো খবিরের ঘরে। নছিমনের সাথে চলতো শলা-পরামর্শ। কিন্তু কিছু কিছু পুরুষ মানুষের কণ্ঠে নছিমনের প্রতি থাকতো ভিন্ন ধরনের সুর। খবির যখন ঘরে থাকতো, তার উপস্থিতিতেও তাদের সেই সুর তাদের সাবধানতার গণ্ডি ছিঁড়ে খবিরের গোচরে ঘাত-প্রতিঘাত হয়ে ধরা দিতো। ক্রমে সে সন্ধেহপ্রবণ হয়ে ওঠে। ঈর্ষার অষ্টকাঁটা গিলে গিলে হজম করতে চাইতো খবির। এই পুরুষ মানুষদের সাথে নছিমনের অতি মেশামিশি মেনে নিতে পারছিলো না সে। প্রচ- অভিমান হতো তার। নছিমন সব বুঝেও তার অবস্থানে অটল থাকতো। খবিরের অভিমানের কোনো মূল্যই ছিলো না নছিমনের কাছে। প্রথম দিকে মুখ না খুললেও এক পর্যায়ে মুখ খুলে গেলো খবিরের। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উত্তপ্ত আচরণ শুরু হলো। খবির অন্ধ। তাকে ঠকানো অতি সহজ। ঘরের মধ্যে সন্দেহভাজন পুরুষগুলো বিশেষ করে কালুর সাথে শব্দহীন মেলামেশা করতে থাকে নছিমন। কিন্তু খবির এসব বুঝতো।

শূন্যের মাঝে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা নিঃশ্বাস খবিরের কাছে আলাদা আলাদা অস্তিত্বের জানান দেয়। মানুষের কণ্ঠস্বর, নছিমনের সাথে তাদের অশালীন কথাবার্তা, অবশেষে কথাহীন উত্তপ্ত আনাগোনা সবই খবির বোঝে। প্রথম দিকের টুকটাক ঝামেলা ক্রমে মহিরূহ হয়ে উঠতে থাকে। সেই সাথে খবিরের প্রতি নছিমনের সাহায্য সহযোগিতাও ক্রমে কমে আসতে থাকে।

দৈনন্দিন কাজে সে স্বামীকে আর সাহায্য করে না, চলতে সাহায্য করে না, এমনকি ভালোভাবে খেতেও দেয় না। একা খবির অতি কষ্টে সাহায্যহীন হয়ে চলতে থাকে। বউ সব সময় তাকে কানা বলে গালি দেয়। খবিরের জন্যই তার জীবনটা নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে। কী পেয়েছে সে এই অন্ধের ঘরে এসে! খুব খারাপ লাগে খবিরের। মন চায় মরে যায়। কিন্তু মরতেও ভরসা পায় না। তা ছাড়া মরে গিয়েই কী সব পাবে! কররের মধ্যে তার জন্য কী দুটি চোখ বরাদ্দ আছে, নাকি স্তুপাকার খাবার থরে থরে সাজানো আছে সেখানে! হয়তো ওপারও খবিরের জন্য নয়। কারণ, উপরওয়ালার অনুশাসনও তো ঠিকমতো সে পালন করতে পারে না। আজকের একবেলা খাবারের ব্যবস্থা যার কাছে নেই, পরের জীবনের অঢেল প্রত্যাশার উপর সে ধৈর্য স্থির রাখতে পারে না।

একদিন নছিমন বাসায় ফিরছে না। রাত অনেক হয়েছে। সে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু নছিমন ফিরছে না। শুরু হলো যন্ত্রণার নতুন এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। তবুও বুক ভরা আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে খবির। কিন্তু নছিমন আর ফেরে নি।

খবিরের জীবনের একমাত্র স্বপ্ননীড়, যেখানে বসে এই অস্তিত্বহীন জীবনেও নতুন করে অস্তিত্বের খোলস গড়তে চেষ্টা করছিলো, এবার তা ভেঙে পড়লো। ভেঙে চূরমার হয়ে গেলো খবির। ভালোবেসে ফেলেছিলো নছিমনকে। এবার শারিরীক অচলতার সাথে যুক্ত হলো মানসিক অবসন্নতা। শেষে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেবার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু তাও পারলো না।

খবির আর অপেক্ষা করতে পারে না। সব এলোমেলো হয়ে যায়। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। কবরের সব নিস্তব্ধতা তাকে ঘিরে ধরে। শারীরিক আর মানসিক এ দুই ধরনের অন্ধকার তাকে অন্ধকূপে নিক্ষেপ করেছে। এক নিশ্ছিদ্র দেয়াল দশদিক থেকে সব অন্ধকারকে তাড়িয়ে নিয়ে এসে আরও জমাট অন্ধকারে পরিণত করে দেয়। নিশ্ছিদ্র দেয়ালের সেই নিরেট অন্ধকার খবিরের চারপাশটা বায়ুশূন্য করে তাকে চেপে ধরে এক ভয়ঙ্কর মূর্তি নিয়ে। সে ছটফট করতে থাকে। কম্পিত হাত সে সামনে বাড়িয়ে দেয়।

সব শূন্য, যেনো মহাশূন্যের এক গায়েবি অন্ধকার গুহা। শূন্যতার মাঝে সে লাঠিটা বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠে, ‘এই মিয়া ভাই, আমাকে দুটা পয়সা দাও!’ এই চিৎকারের মাধ্যমে সে ভয়কে তাড়ানোর চেষ্টা করে, নিঃসঙ্গতা তাড়ানোর চেষ্টা করে, নিজেকে স্থির করতে চেষ্টা করে, চেষ্টা করে একটু শীতল বাতাস গ্রহণের। কিন্তু পারে না। লাঠিটা আর শরীরটা শুধু কেঁপে ওঠে। ভয়ে সে আরও বিহ্বল হয়ে পড়ে। সে আবারও চিৎকার দেয়, ‘কে কোথায় আছো গো ভাই, আমাকে একটু সাহায্য করো!’

কে একজন দুটাকার একটি কয়েন ঝণাৎ করে ফেলে দিলো খবিরের থালার উপর। পয়সা নয়, লোকটাকে স্পর্শ করার জন্য খবির হাত বাড়িয়ে দিলো। সে চাইছে অন্ধকার গুহার মধ্যে অন্তত আরেকটি অস্তিত্বের সন্ধান পেতে। কিন্তু কই, কেউ নেই! খবির একা। কবরের অন্ধকারে সে বিপদগ্রস্ত হাত দুটি শূন্যে হাতড়াতে লাগলো।