Home জাতীয় সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে মেধাবী ও যোগ্যদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে: আল্লামা কাসেমী

সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে মেধাবী ও যোগ্যদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে: আল্লামা কাসেমী

উম্মাহ প্রতিবেদক: জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সামাজিক ও পারিবারিক স্তর পর্যন্ত অনিয়ম, দুর্নীতি, মিথ্যাচার ও অপরাধে জড়িতরাই মূল্যায়িত হয় এবং সর্বত্র দাপিয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে সৎ মেধাবী ও ভাল মানুষদের কোন মূল্যায়ন নেই। তাদেরকে মূল্যায়ন ও উৎসাহিত করা দূরের কথা, কোনরূপ গ্রাহ্যই করা হচ্ছে না। আর এর অবধারিত পরিণতি হিসেবে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সকল স্তরে দিন দিন ভয়াবহ অধ:পতন ও অবক্ষয় ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি, ঘুষ, অবিচার, অনাচার, ব্যভিচার, জুলুম-অত্যাচার ও মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ পুরো দেশ ও সমাজকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এই ধারার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে সর্বগ্রাসী এই অবক্ষয়ের তা-ব সবকিছু ছারখার করে ছাড়বে। তাই সৎ, নীতিবান, মেধাবী ও ভাল মানুষদের মূল্যায়ন ও উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদেরকে জায়গা করে দিতে হবে। এই চর্চা আমরা সমাজের তৃণমূল থেকেই শুরু করতে পারি। ধাপে ধাপে এই চর্চাকে উপরের দিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হলে চূড়ান্ত সফলতা পেতে দেরি হবে না।

জামিয়া মাদানীয়া বারিধারা মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রদের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার এক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন।

বারিধারা মাদ্রাসার শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এই পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বেফাক ও হাইয়্যাতুল উলইয়া বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ৬৫ জন এবং মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ৫৮ জন ছাত্রকে নগদ অর্থসহ পুরষ্কৃত করা হয়।

অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা কাসেমী আরো বলেন, আল্লাহ পাকের একটা নীতি হলো- যে অন্যায় করে, হয় তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন, অথবা শাস্তি দিলে যে মাত্রায় অন্যায় করা হয়েছে ঠিক সে পরিমাণ সাজা দেন। অপারাধের মাত্রার চেয়ে একটুও বেশি শাস্তি দেন না। অন্যদিকে বান্দা কোন একটা ভাল কাজ করলে এর বিনিময়ে তাকে দশ গুণ, একশত গুণ, সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়া দিয়ে পুরষ্কৃত করেন। এমনকি এরপরও পবিত্র কুরআনের আয়াত “ওয়াল্লাহু ইয়ুযাইফু লিমাঁইয়াশাউ” অনুযায়ী যাকে চান তার সাওয়াবে আরো বৃদ্ধি করতে থাকেন। অর্থাৎ- উত্তম ও ভাল কাজে বান্দার ইখলাস ও দৃঢ়তা যত বেশি থাকবে সাওয়াবের পরিমাণ এবং মাত্রাও তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, আল্লাহ পাক মন্দের বিষয়ে সংযত নীতি এবং ভাল ও উত্তম কাজের বিষয়ে উদার নীতির প্রয়োগ করেন। দুই রকম নীতির কারণ বর্ণনায় হাদীসে আছে- ‘সাবাকাত রাহমাতি গাযাবি’। অর্থাৎ- আল্লাহর রহমত ও দয়া ক্রোধকে অতিক্রম করে উপরে থাকে।

আল্লামা কাসেমী বলেন, ঠিক অনুরূপ যদি আমাদের সমাজের মধ্যে যারা ভাল কাজ করে তাদের প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে এতে তারা উৎসাহিত হবে, ভাল কাজে তাদের আগ্রহ বেড়ে যাবে, প্রতিভা বিকশিত হবে, সৎ ও মেধাবিরা সামনে এগিয়ে যাবে। আর যদি প্রতিভা ও সৎকর্মের অবমূল্যায়ন হয়, তাহলে সুপ্ত প্রতিভা আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়তে থাকবে, সামনে এগুবে না এবং এক সময় উৎসাহ হারাতে হারাতে থেমে যাবে। এই জন্য সমাজকে আগে বাড়াতে হলে সত্যিকারে যারা প্রতিভাবান, সৎ ও যোগ্য, তাদেরকে মূল্যায়ন করা চাই।

তিনি বলেন, পরীক্ষায় যারা ভাল ফলাফল করেছে, তাদেরকে আজকে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে মৌলিকভাবে তাদের প্রতিভাকে আরো শাণিত করার জন্য, তাদের আগ্রহকে আরো বাড়ানোর জন্য এবং তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্যই আজকের এই পুরষ্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।এই নীতি যদি জাতীয় ও সামাজিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাতে সমাজ ও জাতি এগিয়ে যাবে এবং লাভবান হবে। আর যদি প্রতিভার অবমূল্যায়ন হয়, যারা কাজ করে তাদেরকে মূল্যায়ন করা না হয়, দুর্নীতি অপকর্ম ও খারাপ কাজে জড়িতরা মূল্যায়িত হয়, সর্বত্র দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পায়, এই সমাজ এই দেশ আগে বাড়বে না, উন্নতি আসবে না এবং ক্রমান্বয়ে অধ:পতিত হতে থাকবে।

মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফেজ আবু সালেহ এবং মাওলানা মাসউদ আহমদের পরিচালনায় পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন জামিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা উবাদুল্লাহ ফারুক, ভাইস প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, মুফতী মকবুল হোসাইন কাসেমী, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ, মুফতী ইকবাল হোসাইন, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি জাকির হোসাইন, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ মাহমূদ কাসেমী, মাওলানা আমজাদ হোসাইন হেলালী, মাওলানা মাহমূদ প্রমুখ।