Home জাতীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই: বিক্ষোভ সমাবেশে আল্লামা কাসেমী

বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই: বিক্ষোভ সমাবেশে আল্লামা কাসেমী

নিজস্ব সংবাদদাতা: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, লাগাতার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জাতি আজ দিশেহারা। সরকারের সর্বব্যাপী ব্যর্থতার কারণে দেশের সকল খাত আজ অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত। কোথাও সুশাসন, সুবিচার ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। সর্বোপরি বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণেও সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং এই ব্যর্থ সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আজ (৬ ডিসেম্বর) শুক্রবার জুমার নামাযের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি- উম্মাহ।

সমাবেশে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পেঁয়াজের বাজারে হাহাকার চলছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে ডাল, চাল, তরিতরকারী, মাছ, গোশত’সহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সারা দেশে দুর্ভিক্ষের মতো হাহাকার পরিস্থিতি চলছে।

তিনি বলেন, সরকার কোনভাবেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তো আনতে পারছেই না, বরং ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের তালিকা দিন দিন আরো লম্বা হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ নেই।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়, যেমন- চাল, ডাল, লবণ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবি শস্য ও মাছ-গোশত। অথচ দেখা যায় কৃষক মাঠ পর্যায়ে এসব পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, কিন্তু বাজারে এসব পণ্য অনেক উচ্চমূল্যে বিক্রয় হয়। একদিকে কৃষক নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, অন্যদিকে এসব কৃষিপণ্যও সাধারণ মানুষকে ক্রয় করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যে। মাঝখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগে মজুতদার সি-িকেট অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য জনগণের ভোটের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ বহু মৌলিক অধিকার হরণ করেছে এই সরকার। খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, লুটপাট, সম্পদ হরণ দেশব্যাপী সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। কোথাও সুশাসন ও সুবিচার নেই।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের ও দেশের স্বার্থবিরোধী যেসকল চুক্তি ভারতের সাথে করেছেন, তাতে তিনি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের প্রতি সুস্পষ্ট এই আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে ভারতের সাথে দেশবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করুন।দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষকে আর কষ্ট দিবেন না।পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পথ করে দিন। জনগণ মাঠে নামলে পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না।

সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ যখন সংবিধান রচনা করে, তাতে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সংযোজন করেছিল। পরবর্তীতে যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি এদেশের মানুষের ধর্মীয় চেতনাবোধ, মনের আকুতি ও আদর্শিক চিন্তার নার্ভ বুঝে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সংশোধন করে মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি সংযোজন করেছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি বাতিল করে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পুনরায় সংযোজন করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভারতের পানিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। পদ্মার পানি আমরা পাই না। তিস্তার পানি পাই না। অসংখ্য অভিন্ন নদীর পানি আমরা পাই না। অথচ আমাদের ফেনী নদীর পানি ভারতকে দিয়ে দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে বলেছেন, পেঁয়াজ না খেলে কি হয়। মানে পেঁয়াজ নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে চান কিনা কে জানে। এর মধ্যে মার্কেট থেকে লবণ আউট। লবণ নিরপেক্ষ বাংলাদেশ। এভাবে আমরা আশংকায় আছি, প্রধানমন্ত্রী কোন দিন আবার বলে দেন, কাপড় নিরপেক্ষ বাংলাদেশ! কিন্তু আমি স্পষ্ট বলে দিতে চাই, প্রধানমন্ত্রী সবকিছু নিরপেক্ষ চাইতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষ এসব নিরপেক্ষতা মেনে নিবে না। আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, আমাদেরকে আশ্চর্য হতে হয়, যে সরকার দেশের পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, রাজনীতিবিদদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, গুলির মুখে আলেমদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে, ব্যবসায়িদেরকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেই সরকার কতিপয় পেঁয়াজ মজুদদারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।

তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব রকমের পলিসি, ম্যাকানিজম, দমন-পীড়ন, অধিকার হরণ সবই করে যাচ্ছে। এখন দেখছি, সরকার মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারও রক্ষা করছে না। দেশের শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, অল্প আয়ের মানুষদেরকেও শোষণ করার বিষয়েও চরম উদাসীন। কারণ, এই সরকার জনগণের সরকার নয়। এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার ভারতের পাচাটা গোলামির সরকার। এই সরকারের কাছে এই দেশের কোন কিছুই নিরাপদ নয়। এই কাছে মানুষের জান, মাল, ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা নেই।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনারা পেশাগত অঙ্গিকার করে কলম হাতে নিয়েছিলেন যে, এই দেশের স্বাধীনতার উপর, সার্বভৌমত্বের উপর, মানুষের অধিকারের উপর কখনো যদি কোন আঘাত আসে, তাহলে আপনারা সবসময় সজাগ হয়ে কলম হাতে নিয়ে জাতিকে সচেতন করতে কাজ করে যাবেন।

তিনি বলেন, আমার ফেনী নদীর পানি যাচ্ছে, আমার দেশের ভেতর দিয়ে করিডোর যাচ্ছে, আমার দেশের মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, আপনার কলম নিশ্চুপ কেন? আপনার কলম হাতে ওঠে না কেন? আপনাদের অঙ্গিকার স্মরণ করে কলম হাতে নিন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কলম হাতে তুলুন। আমরা অঙ্গিকার করছি, এই দেশের আলেম-উলামা, মাদ্রাসা ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা আপনাদের সহযোগি হয়ে সাথে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর সেক্রেটারী মাওলানা মতিউর রহমান গাজিপুরী বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ, ডাল, চাল, চিনি, লবণের মতো নিত্যপণ্যের দাম যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে সরকারের কর্তব্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া।

তিনি বলেন, একটা সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখা এবং সুশাসন, সুবিচার ও সর্বস্তরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে এর কোনটাই পুরণ করা হচ্ছে না।

জমিয়ত সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নাছির উদ্দীন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগরী সহসাধারণ সম্পাদক মুফতি হিদায়াতুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়গরী, যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি হাফেজ মাওলানা বোরহান উদ্দীন, ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ আহমদুল হক উমামা, মাওলানা শাব্বির আহমদ প্রমুখ।