Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর শুধু একদিন রোযা রাখায় শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

শুধু একদিন রোযা রাখায় শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

প্রশ্ন: যে কোন নফল কিংবা ক্বাযা রোযা রাখার ক্ষেত্রে ১ টি রোযা রাখা কি নিষেধ? আর সপ্তাহে শুক্রবার নিয়ম করে রোযা রাখায় কোন বিধিনিষেধ আছে কিনা, জানতে চাই। মাসআলা না জেনে শুক্রবার রোযা শুরু করার পর এ প্রসঙ্গে অবগত হলে রোযা ভঙ্গ করে ফেলবে, না পূর্ণ করে নিতে হবে- বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

– ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আবু আইয়ুব আনসারী, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা।

উত্তর: নফল কিংবা ক্বাযা আদায়ের ক্ষেত্রে একটি রোজা রাখা নিষেধ; এটা সঠিক নয়। বরং রোযা নিষিদ্ধের ৫ দিন এবং রমযান মাস ছাড়া বছরের যে কোন মাসে যে কোন দিন এক বা একাধিক নফল বা ক্বাযা রোযা রাখাতে শরীয়তে কোন বাধা-নিষেধ নেই। তবে সপ্তাহের শুধু শুক্রবার বা শুধু শনিবার রোযা রাখা মাকরূহে তানযিহী, কিন্তু হারাম বা মাকরূহে তাহরিমী নয়।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.)এর বর্ণনা করেন, একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি-

 لا يَصُومَنَّ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلا يَوْمًا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ

অর্থাৎ- তোমাদের কেউ যেন শুধু জুম‘আর দিনে রোযা না রাখে। কিন্তু তার পূর্বে একদিন অথবা পরের দিন (যদি রাখে তবে জুমু‘আর দিনে রোযা রাখা যায়)। (বুখারি শরীফ, হাদীস নং- ১৮৪৯, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ১৯২৯)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু বুসর থেকে তাঁর বোনের সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-

لا تَصُومُوا يَوْمَ السَّبْتِ إِلا فِيمَا افْتَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلا لِحَاءَ عِنَبَةٍ ، أَوْ عُودَ شَجَرَةٍ فَلْيَمْضُغْهُ

অর্থাৎ- তোমাদের উপর ফরযকৃত রোযা ছাড়া তোমরা শনিবারে আর অন্য কোন রোযা পালন করো না। আঙ্গুরের লতার বাকল বা গাছের ডাল ছাড়া তোমাদের কেউ যদি আর কিছু না পায় (সেদিনের আহারের জন্য), তবে সে যেন তাই চিবিয়ে নেয় (ইফতারের জন্য)। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং- ৭৪৪, আবুদাউদ শরীফ- ২৪২১, ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১৭২৬)।

আশূরা বা মুহাররমের রোযার ক্ষেত্রে কেবল ১০ মুহাররমের তারিখে একটি রোযা রাখা অনুত্তম। এর কারণ হল যে, ইয়াহুদিরা ১০ মুহাররম মাত্র একটি রোযা রাখত। তাদের সাথে যেন সাদৃশ্য না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রেখে আশূরার পূর্বের দিন ৯ তারিখ বা পরের দিন ১১ তারিখ অতিরিক্ত একটি রোযা মিলিয়ে ২টি রোযা রাখা উত্তম।

হাদীসে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন-

حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ”. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ

অর্থাৎ- যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আশূরার রোযা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এটি তো এমন দিন, যাকে ইহুদী ও খ্রীস্টানরা মহত্বপূর্ণ দিন মনে করেন, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোযা রাখব, ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সা.) ওফাত বরণ করেন। (মুসলিম শরীফ- ১৯৪৬)।

সুতরাং আপনার প্রশ্নের আলোকে সংক্ষেপে বলব, নফল ও ক্বাযা রোযা আদায়ের ক্ষেত্রে এক বা একাধিক রাখাতে শরীয়তে কোন বাধানিষেধ নেই। শুক্রবার রোযা রাখার ক্ষেত্রে আগের দিন বৃহস্পতিবার বা পরের দিন শনিবার যোগ করে দুইটি রাখা উত্তম। শুধু শুক্রবার নির্দিষ্ট করে একটি রোযা রাখা মাকরূহে তানযিহী বা অনুত্তম হবে। আশূরার রোযা রাখার সময় ১০ মুহাররমের আগের দিন বা পরের দিন আরো একটি রোযা রাখা সুন্নাত। আর শুধু রোযা রাখা অনুত্তম এটা না জেনে যদি রোযা শুরু করেন এবং শুক্রবার দিনের যে কোন সময়ে এই মাসআলা সম্পর্কে অবগত হন, তাহলে রোযা না ভেঙ্গে পুরা করে নিবেন। কারণ, নফল রোযা নিয়্যাত করে রাখা হলে শেষ করা ফরয হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত জানতে ‘তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-৩১৫’ পৃষ্ঠা দেখা যেতে পারে।

জবাব লিখেছেন- মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী

ফাযেলে- দারুল উলূম দেওবন্দ (দাওরা ও ইফতা), মুহাদ্দিস ও মুফতি- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং উপদেষ্টা সম্পাদক- উম্মাহ ২৪ ডট কম।