Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন গুনাহর ক্ষতি এবং বেঁচে থাকার উপায়

গুনাহর ক্ষতি এবং বেঁচে থাকার উপায়

।। মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমূদী ।।

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার জন্য । দরুদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাঁর পরিবারবর্গ , তাঁর সকল সাহাবায়ে কেরাম এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা পদাংক অনুসরণ করবে তাঁদের উপর। গুনাহ (পাপ)এর কারণে বিভিন্ন ক্ষতি রয়েছে। তন্মধ্যে আত্মার ক্ষতি, শারিরীক ক্ষতিসহ ইহকাল ও পরকালের অসংখ্য ক্ষতি রয়েছে। যা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউই অবগত নন।

গুনাহর ক্ষতিসমূহ থেকে আংশিক নিম্নে উপস্থাপন করা হল-

(ক) ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়াঃ

গুনাহ করার কারণে মানুষ (মানবজাতি) ধর্মীয় ইলম থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কেননা, ইলম হচ্ছে নূর বা আলো। যে নূর আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির অন্তরে দিয়ে থাকেন, কিন্তু গুনাহ করার কারণে অন্তরের সে নূর নিভে যায়।

যেমন- ইমাম শাফী (রাহ.) জনৈক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি দেখছি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমার অন্তরে নূর দিয়েছেন অতএব, সে নূরকে গুনাহর দ্বারা নিভিয়ে দিও না।

(খ) রিযক-জীবিকা হতে বঞ্চিত হওয়াঃ

যেমন- হাদীস শরীফে এসেছে যে, নিশ্চয় মানুষ কৃত গুনাহের কারণে রিযক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেমন তাক্বওয়ার (আল্লাহ ভীতির) কারণে রিযিকের প্রাচুর্যতা হয়।

(গ) অন্তরে ভীতি অনুভব হওয়াঃ

গুনাহগার গুনাহ করার কারণে অন্তরের মধ্যে আল্লাহর ভয়-ভীতি অনুভব করে।

(ঘ) গুনাহগারের কাজসমূহ কঠিন হয়ে যায়ঃ

গুনাহকারী গুনাহ করার কারণে যে দিকে যায়, সেদিকে তাঁর সকল কাজ সমূহ কঠিন হয়ে যায়। গুনাহকারী যে দিকেই যায় না কেন, তার প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। (আল্লাহ্ তায়ালা সকলকে হেফাযত করুক) আমীন।

(ঙ) ইবাদতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ঃ

অনেক গুনাহগার ব্যক্তি স্বীয় গুনাহর কারণে ভালো কাজ ও আনুগত্য করার তাওফীকে ধন্য হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যে ভাল কাজগুলো দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সব চেয়ে সর্বোত্তম হতো।

(চ) গুনাহ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ধ্বংস করে দেয়ঃ

কেননা আকল (বিবেক-বুদ্ধি)এর জন্য রয়েছে একটি আলো, সে গুনাহ জ্ঞানের আলোকে নিভিয়ে দেয়। যখন জ্ঞানের আলো নিভে যায় তখন তাঁর বিবেক-বুদ্ধি দুর্বল ও অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। যেমন- কেউ সুন্দর করে বলেছেন-

অর্থাৎ- মানুষ বিবেকহীন না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়্লাার নাফরমানী করে না। কেননা এ কথা সূর্যের মত সুস্পষ্ট যে, যখন তাঁর বিবেক-বুদ্ধি থাকবে, তখন তার বিবেক বুদ্ধি তাকে নাফরমানী করা থেকে বাধা প্রদান করবে।

(জ) নিশ্চয় যখন গুনাহ বেশি হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা গুনাহগারের অন্তরের মধ্যে মোহর লাগিয়ে দেন।

যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “ না এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনের উপর মরিচা রূপে জমে গেছে। (সূরা মুতাফ্ফিফীন-১৪)। অর্থাৎ গুনাহকারীর কৃত অবিরাম গুনাহর কারণে তার অন্তরে মরিচা লেগে গেছে।

(ঝ) গুনাহের কারণে আয়ু হ্রাস পায় এবং হায়াতের বরকত কমে যায়।

কেননা সৎ আমলের ওসীলায় আয়ু বৃদ্ধি হয় এবং নাফরমানীর কারণে আয়ু হ্রাস পায়। অতএব, বান্দা যখন আল্লাহ্ তায়ালার আনুগত্য থেকে দূরে সরে যাবে, এবং একের পর এক নাফরমানী করতে থাকে, তখন তাঁর জীবন তার ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়।

(ঞ) জনৈক ব্যক্তির জন্য ইব্রাহিম বিন আদহাম (রাহ.)এর নসীহতঃ

এক ব্যক্তি ইব্রাহীম বিন আদহাম ( রাহ.) এর নিকট এসে বলল, হে আবু ইসহাক! (ইসহাক ইব্রাহিম আদহামের ছেলের নাম) আমি পাপের দ্বারা নিজের উপর জুলুম করেছি। অতএব, আমাকে নসীহত করুন! ইব্রাহীম ( রাহ.) বললেন, যদি আমার নিকট থেকে পাঁচটি জিনিস তুমি গ্রহণ করে নাও এবং তার বাস্তবায়ন করতে পার, তবে কোন পাপ কখনো তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। সে ব্যক্তি তখন জিজ্ঞেস করলো, জিনিসগুলো কি কি? ইব্রাহীম (রাহ.) বললেন- তা হলো, যখন তুমি আল্লাহ্ তায়ালার না-ফরমানী করতে ইচ্ছে করবে, তখন তার প্রদত্ত জীবিকা ভক্ষণ করবে না! লোকটি তা শুনে বললো, তাহলে আমি খাবো কোথা থেকে? যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তো তাঁর (আল্লাহ্র) জীবিকা। তখন ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, এটা কি ভাল যে, তুমি আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা খাবে এবং তাঁরই অবাধ্যতা করবে? সে বললো, না।

দ্বিতীয়টি বলুন, ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, যখন তুমি আল্লাহর অবাধ্যতা করার ইচ্ছা করবে, তখন তাঁর যমীনে বসবাস করবে না। লোকটি বলল, এটাতো প্রথমটির চেয়ে আরো কঠিন। তাহলে থাকবো কোথায়? ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, এটা কি ভাল যে, তুমি আল্লাহ্ তায়ালা প্রদত্ত জীবিকা খাবে, তাঁর যমীনে বসবাস করবে, আবার তাঁরই অবাধ্যতা করবে? লোকটি বলল, না।

তৃতীয়টি বলুন, ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, যখন তুমি আল্লাহর না-ফরমানী করার ইচ্ছে করবে, তখন এমন স্থানে আত্মগোপন করবে, যেখানে তিনি তোমাকে দেখতে পাবেন না। লোকটি বললো, কোথায় যাবো? তিনি তো প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সবকিছুর খবর রাখেন। ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, এটা কি ঠিক যে, তুমি আল্লাহর দেওয়া রিয্ক খাবে, তাঁর যমীনে বসবাস করবে আবার তাঁরই অবাধ্যতা করবে? অথচ তিনি তোমাকে দেখছেন। লোকটি বললো, না।

চতুর্থটি বলুন, ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, যখন মালাকুল মাউত (ফেরেশতা) তোমার আত্মা ছিনিয়ে নিতে আসবেন, তখন তাঁকে বলবে, আমাকে তাওবা ও নেক আমল করার জন্য সুযোগ দিন।

লোকটি বলল, ফেরেশতা আমার এ প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না এবং আমাকে সুযোগও দেবেন না। ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, তুমি যখন তাওবা করার ও প্রত্যাবর্তনের জন্য মৃত্যকে দূর করার ক্ষমতা রাখো না, তখন তাঁর অবাধ্যতা কেমনে করো?

লোকটি বললো পঞ্চমটি বলুন। ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, যখন কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের প্রহরীরা তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চাইবেন, তখন তুমি তাঁদের সাথে যাবে না। লোকটি বললো, তাঁরা তো আমাকে ছাড়বে না এবং আমার কোন কথাই শুনবেন না। ইব্রাহিম (রাহ.) বললেন, তাহলে তুমি মুক্তির আশা কেমনে করছো? লোকটি বলালো, এই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আমার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছি। এরপর থেকে যুবকটি নিয়মিত আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হয়ে গেল।

নাফরমানী সম্পর্কে মূল্যবান মতামতঃ

১. প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বলেন, গুনাহের দ্বারা মুখ কালো হয়ে যায়। অন্তর অন্ধকার হয়ে যায়। জীবিকার বরকত হ্রাস পায় এবং তার ব্যাপারে সৃষ্ট জীবের (আল্লাহর মাখলুকাতের) অন্তরে ঘৃণা জন্মে।

২. ফুযাইল ইবনে আয়াজ (রাহ.) বলেন, তুমি গুনাহকে যে পরিমাণ ছোট মনে করবে সে পরিমাণ গুনাহ আল্লাহর নিকট বড় হবে।

৩. ইমাম আহমদ (রাহ.) বলেন- আমি বেলাল বিন সাঈদকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন যে, গুনাহ ছোট হওয়ার দিকে দৃষ্টি কর না, বরং যাঁর নাফরমানী করছ, তাঁর বড়ত্বের দিকে দৃষ্টিপাত কর।

৪. ইয়াহ্ইয়া বিন মুআজ আর রাজী (রাহ.) বলেন, আমি ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করি যে, স্বীয় দোয়ায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে থাকেন এই বলে- অর্থাৎ- হে আল্লাহ্! আমার দ্বারা আমার দুশমনদেরকে খুশি করবেন না। অথচ যে ব্যক্তি গুনাহ করে, সে নিজের দুশমন শয়তানকে খুশী করছে।

গুনাহ্ থেকে বাঁচার উপায়

গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে ৫টি জিনিস থেকে কঠোরভাবে বাঁচতে হবে-

১. র্শিক থেকে বাঁচতে হবে যে, র্শিক মারাত্মক অপরাধ, যা তাওহীদকে নষ্ট করে দেয়।
২. বিদআত থেকে বাঁচতে হবে, যা সুন্নাতকে নষ্ট করে দেয়।
৩. মনের ইচ্ছা প্রবৃত্তি থেকে বাঁচতে হবে, যা আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে বাধ্য করে।
৪. অলসতা থেকে বাঁচতে হবে, যা আল্লাহর স্মরণ নষ্ট করে দেয়।
৫. মনের কু-প্রবৃত্তি থেকে বাঁচতে হবে, যা ইবাদতের একাগ্রতাকে নষ্ট করে দেয়।

আল্লাহর নাফরমানী করার পূর্বে স্মরণ করুন, যে আল্লাহ্ তায়ালা আপনার প্রকাশ্য যাহেরী ও বাতেনী সকল আমলসমূহ দেখছেন, তাঁর নজর থেকে কোন কিছুই লুকায়িত নয়। নিশ্চয় আল্লাহ্ তায়ালার নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণ আপনার সকল কথাবার্তা কাজকর্ম আপনার হিসাব খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। তন্মধ্যে সামান্য সংশয় ও সামান্যতম গরমিল হবে না।

পাপ করার পূর্বে সে দিনকে ভয় করুন, যেদিন সূর্য মাথার সন্নিকটে আসবে তখন মানুষের শরীরের ঘাম অবিরাম ঝরতে থাকবে।

পাপ করার পূর্বে সে পুণরুত্থানের দিনকে ভয় করুন, যে দিন মানুষ উলঙ্গ ও জুতা বিহীন হবে। অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে

পাপ করার পূর্বে সে সময়কে সর্বদা স্মরণ করুণ, যখন মালাকুল মাউত (আ.) আপনার রুহ ক্ববজ করে নিয়ে যাবেন।

পাপ করার পূর্বে কবরের সে ভয়াবহ আযাব গজব চাপ সংকীর্ণতা নির্জনতা অন্ধকারাচ্ছন্নের অবস্থার কথা স্মরণ করুন, যে কবর হবে জান্নাতের বাগান সমূহ থেকে একটি বাগান অথবা জাহান্নামের গর্ত সমূহ থেকে একটি গর্ত।

পাপ করার পূর্বে স্মরণ করুন যে, পাপ অন্ধকার, যা দ্বারা অন্তর অসুস্থ্য ও দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনো অন্তর মরে যায়। একথায় স্মরণ রাখা উচিত যে, গুনাহ এমন মারাত্মক অপরাধ, যে কারণে আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যখানে দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়। তখন রহমত কল্যাণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন গজব ও অকল্যাণের পথ প্রশস্ত হয়। আল্লাহ্ পাকের দরবারে ফরিয়াদ জানাই, তিনি আমাদেরকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে হেফাযত করুক। আমীন॥

তাওবাকারীর গুণাবলী

* তাওবাকারীর অন্তর ভাঙ্গা থাকে, চোখে অশ্রু থাকে।
* তাওবাকারী নম্র, ভদ্র ও সভ্য হন এবং আত্মগৌরব ও অহংকারহীন হন।
* তাওবাকারী ভয় ও আশার মধ্যবর্তী থাকেন।
* তাওবাকারী ইবাদতে স্বাদ এবং গুনাহ করলে কষ্ট অনুভব করে।
* তাওবাকারী স্বীয় প্রত্যেক কর্ম-কান্ড থেকে শিক্ষা হাসেল করেন, তা দ্বারা স্বাদ ভোগ করে থাকেন।
* তাওবাকারী রোযা, নামায ইত্যাদি ইবাদতের প্রতি যত্নশীল হয়ে নিজ শরীর ও নফ্স কে দূর্বল করে ফেলে থাকেন এবং আল্লাহতায়ালার দরবারে তাওবায়ে নাসুহা অর্থাৎ খাঁটি তাওবা করে থাকেন।
* তাওবাকারী স্বীয় নফসকে সংযম রাখেন তাই আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রশংসিত হন।

আল্লাহর স্মরণ করাঃ

তোমার আত্মা যখন গুনাহ করার ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে স্মরণ কর। এরপরও যদি নফস-মন গুনাহর দিকে যায়, তখন স্মরণ কর লোক সমাজকে, অর্থাৎ গুনাহের খেয়াল আসলে স্মরণ কর যে, আমি অন্যায় করলে মানুষ আমাকে খারাপ বলবে- তারপরও যদি নফস গুনাহ করার দিকে যায়, তাহলে মনে কর যে, মানুষ আমার গুনাহর ব্যাপারে অবগত হলে আমাকে বেইজ্জত/অসম্মানি করবে। এরপরও যদি মন গুনাহ করার দিকে যায়, তাহলে মনে কর তুমি পশু হয়ে গেছ।

আল্লামা ইবনুল কায়্যূম যাওজিয়্যাহ (রাহ.) বলেন যে, নিশ্চয় গুনাহর কারণে আত্মা ও শরীর উভয়ের ক্ষতি সাধিত হয়।

দুনিয়া ও আখেরাতের কোথাও যদি কোন প্রকারের ক্ষতি হয়, তা স্বীয় গুনাহের কারণেই হয়ে থাকে। গুনাহর দ্বারা শরীরের এমন ক্ষতি হয়, যেমন- বিষপান দ্বারা শরীরের ক্ষতি হয়। একটু চিন্তা করা উচিত, আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)কে শান্তি ও আরামদায়ক বেহেস্ত থেকে কিসে অশান্তি ও অস্থিরতা মন্ডিত পৃথিবীতে নিয়ে আসল? এবং কিসে অভিশপ্ত শয়তানকে অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত করল? সবই গুনাহ আর গুনাহ্। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন॥

হাসান বসরী (রাহ.) বলেন যে, মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কাজ প্রবণ। অতএব, মন যখন তোমাকে ইবাদাত হতে ফিরিয়ে রাখে, তখন তুমি মনকে গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখ। সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে যে, তুমি মনকে লাগাম পরাও বা কন্ট্রোল কর, তোমার মুখের দিক হতে, যাতে সে মুখের মাধ্যমে কোন প্রকার গুনাহ করতে না পারে।

আপনি কি আল্লাহর হুকুমের অমান্য করে রহমতের আশা করছেন?

জনৈক ব্যক্তির এক বিচক্ষন জ্ঞানী সেবক ছিল। সেবকটি তার জমিতে ফসলের কাজ করতো। একদা তার মালিক তাকে বললেন, এবার জমিতে গম রোপন করবে। সে করলো কি গমের স্থলে গম রোপন না করে করলো যব রোপন….।

যখন গম কাটার সময় হলো মালিক এসে দেখলেন যে গমের স্থানে গম না হয়ে যবের ফসলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মনিব বললেন, আমি বলেছিলাম গম রোপন করতে, তুমি যব রোপর করলে কেন? তদুত্তরে গোলাম বললো, আমি যব রোপন করার পর আশা করেছিলাম যে গম ফসল হবে।

মনিব রাগান্বিত হয়ে বললেন, ওরে বোকা যব রোপন করলে কি কখনো গম হবে?

এরপর বিচক্ষণ গোলাম বললো – হে মনিব! আপনি কি আল্লাহর নাফরমানী করে তাঁর রহমতের আশা করছেন? আল্লাহর নাফরমানী করে কি জান্নাতের আশা করছেন? গোলামের কথা শুনে মনিব খুবই প্রভাবিত হলেন, তার হৃদয়ে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হলো। সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে অতীতের গুনাহর জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং আল্লাহর নিকট তাওবা করলেন এবং গোলামকে বললেন যে, আমি তোমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ করে দিলাম।

অতএব, যে ব্যক্তি যে রকম কাজ করবে সে রকম ফল পাবে। প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি/ গোষ্ঠী, স্বীয় কর্মানুসারে ফলাফল পাবে। যার কর্ম ভাল তার ফলাফলও ভাল, যার কর্ম খারাপ তার ফলাফলও খারাপ। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কারো সাথে বিন্দু পরিমাণ জুলুম পছন্দ করেন না।

পরিশেষে, মহান আল্লাহ তায়ালার আলীশান দরবারে কায়মনো বাক্যে ফরিয়াদ জানাই, তিনি যেন আমাদের সকলকে গুনাহ ছেড়ে তার দিকে রুজু হওয়ার এবং খাঁটিভাবে তাওবা করার তাওফীক দান করেন।

– মাওলানা সানাউল্লাহ মাহমূদী, বিশিষ্ট আলেমে-দ্বীন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুহাদ্দিস।