Home শীর্ষ সংবাদ দেওবন্দী আকাবিরগণের আমানত জমিয়তের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন: আল্লামা কাসেমী

দেওবন্দী আকাবিরগণের আমানত জমিয়তের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন: আল্লামা কাসেমী

জমিয়তের কাউন্সিল সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দলের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। -ছবি উম্মাহ।

উম্মাহ প্রতিবেদক: উলামায়ে দেওবন্দের অকাবীরগণের প্রাণের সংগঠন প্রাচীনতম ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর জাতীয় কাউন্সিল দলের পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ (১৪ জুলাই) সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কাউন্সিল সভায় সভাপতিত্ব করেছেন দলের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা তফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী। সভায় কাউন্সিলরদের বক্তব্য শেষে দলের মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দিক-নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেছেন দলের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। সভায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় ৩৫০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী তার বক্তব্যে বলেন, জমিয়ত দারুল উলূম দেওবন্দের আকাবিরগণের পবিত্র আমানত। দ্বীনের দাওয়াত তথা প্রসার-প্রসার, সঠিক পদ্দতিতে দ্বীনি ইলমের বিস্তার এবং সুন্নাত যিন্দা, আত্মশুদ্ধি ও বাতিলের মোকাবেলার ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আমরা দারুল উলূম দেওবন্দকে অনুসরণ করি, তেমনিভাবে দেশ ও সমাজ গঠনসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দারুল উলূম দেবওন্দের পবিত্র আমানত হিসেবে দেওবন্দী আকাবিরগণের অনুসরণ অনুকরণ করে থাকে। এই  আমানতকে যথাযথভাবে হেফাজত করা এবং পরিচালনা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আজকে আমাদের অনেক ইসলামী রাজনৈতিক পার্টি ও নেতা দারুল উলূম দেওবন্দের মহান নীতি আদর্শ থেকে দূরে গেছেন। ইসলামী রাজনীতির ময়দানে সফলতার জন্য এটা বড় ঘাটতি। তাই রাজনীতির লাইনে কাজ করার জন্য উলামায়ে কেরামকে অবশ্যই দারুল উলূম দেওবন্দের নীতি-আদর্শের আওতায় থেকে কাজ করতে হবে। আর এই নীতি আদর্শের আওতায় কাজ করতে হলে অবশ্যই জমিয়তের পতাকা তলে সকলকে সমবেত হতে হবে।

তিনি বলেন, জমিয়ত দারুল উলূম দেওবন্দের আকাবিরগণের নীতি-আদর্শ ও দর্শনকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেওবন্দের উসূলের বাইরে গিয়ে সমাজে ইসলাম কায়েম করা অনেক কঠিন। কারণ, আমাদের আকাবিরগণ অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর সময়ে সমাজে ইসলাম কায়েমের জন্য লড়াই করে, সংগ্রাম করে আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করে রেখে গেছেন।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী উপস্থিত কাউন্সিলরদেরকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, জমিয়তের পতাকাতলে সর্বোচ্চ সংযম, চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে ইসলামের সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। উলামায়ে কেরাম সাধারণ জনতাকেও মুকতাদি হিসেবে সাথে রাখতে হবে। সাধারণ জনতার সাথে আলেমদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কারো সমালোচনা, গীবতের পেছনে একটুও সময় নষ্ট করবেন না। কারো মুখাপেক্ষী না থেকে দলীয় শৃঙ্খলার আওতায় থেকে একমাত্র আল্লাহকে রাজী-খুশী করার উদ্দেশ্যে দলের জন্য কাজ করে যাবেন। ইনশাআল্লাহ এতে করে দলে সফলতা আসবে।

তিনি বলেন, দলের সকল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ত্যাগের সর্বোচ্চ মানসিকতা থাকতে হবে। দলের বিদায়ী সাংগঠনিক সম্পাদ মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব একটু পরে যে নতুন দলীয় কমিটির নাম প্রস্তাব করবেন, এই কমিটিতে দায়িত্ব বণ্টনের সময় দলের মুরুব্বী ও শীর্ষনেতৃবৃন্দ মিলে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নামগুলো প্রস্তাব আকারে ঠিক করেছেন। আপনাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্য শতভাগ বজায় রেখে কাজ করে যাবেন। আপনারা সকলে নতুন কমিটির প্রতি সর্বাত্মক দলীয় আনুগত্য প্রদর্শন করে কাজ করে যাবেন বলে আমি পূর্ণ আশাবাদি।

তিনি বলেন, আগামীতে জমিয়তকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সকলে এখান থেকেই শপথ নিয়ে যাব যে, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে যে কোন মূল্যে আমরা জমিয়তকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবো। আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে হবে, আমাদেরকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকল ভাইকে মাঠে নামার তাওফীক দান করুন। জমিয়তকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার তাওফীক দান করুন। ত্যাগ ও কুরবানীর মাধ্যমে সংগঠনকে আগে বাড়িয়ে নেয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।।

উল্লেখ্য, দলের সভাপতি আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়েখে ইমামবাড়ি অসুস্থ থাকায় কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর টেলিফোন নির্দেশনায় কাউন্সিল সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা তফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী।

কাউন্সিল সভায় সারা দেশ থেকে প্রায় ৩৫০ জন কাউন্সিলর যোগদান করেন। সভায় জেলাভিত্তিক সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকগণ দলীয় প্রতিবেদন পেশ করেন। এরপর বিদায়ী কমিটি বিগত সেশনের দলীয় কার্যক্রমসহ সার্বিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনের উপর কাউন্সিলরগণ নিজস্ব মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

কাউন্সিল সভায় বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক আগামী ২০১৮-২০২১ইং সেশনের জন্য ১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্য-নির্বাহী পরিষদের নাম প্রস্তাব করেন। উপস্থিত কাউন্সিলরগণ হাত তুলে সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

[১৫৩ সদস্য বিশিষ্ট জমিয়তের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে কোন দায়িত্ব পেয়েছেন- জানতে এই লেখার উপর ক্লিক করুন ]