Home ওপিনিয়ন চিন্তার অলি গলি, সঠিক পথ কোনটি?

চিন্তার অলি গলি, সঠিক পথ কোনটি?

।। রাশিদুল হাসান ।।

বাতাস দুষিত আজ লাশের গন্ধে। আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন গুলি আর বুলেটে। জমিন সিক্ত বনি আদমের তাজা লহুতে। কী কুৎসিত আর বিভৎস বিভীষিকাময় সমাজ ও রাষ্ট্রের ছবি! যেনো চারদিকে নাগিনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাসl! অপমৃত্যুর নীল আতংক!

পত্রিকার পাতা খুললেই দেখি, কোনো ভয়ংকর ছায়াদানব আচমকা কাউকে তুলে নিচ্ছে ভয়াল রূপকথার মতো এক অচিনপুরীর দেশে। ক্ষেতে-বনে, নদী-নালায়, খালে ও নর্দমায় পড়ে আছে লাশ। লাশ এখানে; সেখানে! লাশ বেডরুমে ও ফ্রিজে। লাশ গাছে ও ফ্যানে। শুধু লাশ আর লাশ! ছেড়াকাগজের মতো মূল্যহীন এখন মানুষের প্রাণ! কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাবি দেওয়া রোবট প্রশাসনে মিউজিক বাজে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। অপরাধী যেই হোক ধরা হবে। হৈ চৈ করে ওঠে মিডিয়া। নতুন কিছু খোরাক হয় তাদের। কিছুদিন পর থেমে যায় সব। হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতল গহবরে। ধূসর অতীতের পাতায়। হয়তো স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে কোনো সজনের হৃদয়ে। ছবির এলবামে।

দেখছি নিত্য, কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় জলাঞ্জলি দিচ্ছে পবিত্র ‘মা’ অভিধার কলঙ্কিনী আপন সন্তান, সাজানো সংসার ও সম্মান। কচি সন্তানকে জবাই করে ফেলে দেখে ফেলায় নিজের নিষিদ্ধ কামলীলা ও গোপন অভিসার। লোভাতুর স্বামী চরম বর্বর নির্মমতায় দূরে ঠেলে দিচ্ছে, যে তার পায়ে সমর্পণ করেছিলো আপন জীবন ও যৌবন পরম শ্রদ্ধায় ও মমতায়, রাশি রাশি স্বপ্ন আর রঙিন আশায়। হয়তো ‘ভালোবাসাবাসি’ করেই হয়ে ছিলো পরিণয়।

পাড়ার মূর্খলোকদের কাজিয়া স্থান নিয়েছে এখন পবিত্র সংসদে। হায়, জাতির দিকপাল! কলঙ্কিত হচ্ছে রাজনৈতিক মঞ্চ ও কথা- কবিতা নিষিদ্ধপল্লীর খিস্তি-খেউরে। হায়, এরাই নাকি জাতির সুশীল সমাজ! ছাত্রের হাতে চরম লাঞ্ছিত হচ্ছে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সমৃদ্ধ জাতি বিনির্মাণের সুমহান কারিগর শিক্ষক।

আর শিক্ষকের লোভাতুর কামুক চোখ ভ্রমণ করে ছাত্রীর দেহের খাঁজে খাঁজে। তাইতো নিষিদ্ধ হয় হিজাব ও বোরকা। লজ্জাহীন আমোদে লোনাজল উঠে আসে জিবে। ফলে ধর্ষিত হয় তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীও। হায় ধরণী ! স্কুল-অফিসগামী নারীর পথ আগলে দাড়ায় কুকুরবদমাশ। অশ্লীল, অসহ্য ঘেউ ঘেউয়ে ভারী করে দেয় বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস কখনো বসিয়ে দেয় বিষাক্ত দাঁত। বাড়ে পিংকি, নুরিনা, ইলোরাদের ঝরে পড়ার মিছিল। প্রতিবাদে মারা যায় মাস্টার মিজানেরা। আধুনিকার লেভেল সাটানো নারী যেনো ঠিক রাস্তায় পড়ে থাকা খোসামুক্ত কলা। তার চারপাশে ভন ভন করে ঘুরে বেড়ায় বিকৃত রুচিবোধের নষ্ট মাছিরা। মুখ দিয়ে ছুঁয়ে যায় যতো সব বন্য পতঙ্গ।

নারী এখন পণ্য। শুধুই ভোগপণ্য। অতি সস্তা ও সহজলভ্য এ দ্রব্য। জমজমাট বিকিকিনি হয় অধুনাভিজাত ঝলমলে নীল সভ্যতার হাটে। কয়েক হাজার টাকায় ইচ্ছেমতো নাচানো যায় যশস্বী সেলিব্রেটিদেরকে হোটেলে, বারে, ক্লাবে, উন্মত্ত কামুকদের মদমত্ত জলসার খোলামঞ্চে। এখন লুকিয়ে পড়তে হয় না পর্নোম্যাগাজিন। রগরগে যৌনতার নির্লজ্জ প্রকাশই আজ স্ব সাহিত্য। খেলারাম খেলে যা-রা চরম পূজনীয়। সেলফোন ও কম্পিউটার নিয়ে এসেছে যৌনতার নির্বাধ ও সহজ সম্প্রচার। আড়চোখে খেতে হয় না এখন নারীদেহ। দেখতে হয় না ব্লু -ফিল্ম। মার্কেট, পার্ক, ভার্সিটিতে গেলে অবাধেই দেখা যায়…! লোলুপদৃষ্টি থেকে আপাদমস্তক বোরকাবৃত রাখতে লজ্জা-শরম করে; বড় গলার ব্লাউজে বের হয়ে থাকা উদোম পিঠে, চাপা জিন্সের দুর্বিনীত নিতম্বে, ওড়নাহীন সুডৌল বুকের প্রদর্শনীতে লজ্জা করে না স্মার্ট নারী।

সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে লজ্জা লাগে; নর্তক-নর্তকী বানিয়ে অন্যের মনোরঞ্জন করাতে লজ্জা লাগে না আধুনিক মাতা-পিতার। সপরিবারে স্বল্প বসনের কামায়িত নর্তকীর উদ্দাম নাচ দেখতে লজ্জা লাগে না বন্ধুবৎসল বাবা-মার। স্ত্রী-কন্যাকে বন্ধুমহলে আকর্ষণীয় বানিয়ে গর্ববোধ করে যুগের জেন্টলম্যান।

অদ্ভুত সময়! অদ্ভুত সমাজ!! আধুনিক জীবনধারার এক নতুন আয়োজন বৃদ্ধাশ্রম। রাতদিন রক্তে-ঘামে যার জন্য নির্মাণ করেছে শান্তি-সুখের নিরাপদ আবাস, সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ, হারাম করেছে নিজের সহস্র রজনীর ঘুম, জীবনের সকল সাধ-অভিলাষ, সে মুজুরি দেয় এর- পিতা-পুত্রের স্বর্গীয় সম্পর্কের রক্তাক্ত লাশের সাদা কফিন। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে সংসার। ভাঙ্গছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, সামাজিক স্থিতি ও সম্প্রীতি। মুষ্টিমেয় যাদুকরের হাতের মুঠোয় বন্দী দেশের তামাম জনগোষ্ঠি।

গুটিকয়েক জোয়াড়ি খেলে বেড়ায় নিয়ে দেশের ভাগ্যঘুড়ি। দেশ-বিদেশী ভণ্ডগুরুর যাদুমন্ত্রে দেশ-ধর্মের বিনাশে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চিন্তার নাবালকেরা। ধরিবাজ নেতারা মুক্তির ঠিকানা বলে দেখিয়ে দিচ্ছে জনতাকে বিপ্লবের রঙিন আলেয়া,ফলে মুক্তিপাগল স্বপ্নবাজেরা রক্তের আখরে লিখে যাচ্ছে অবিরাম লাল লাল দাস্তান।

দুর্নীতির আশীবিষে নীলাভ দেশ। মুমূর্ষু মানবতার ত্রাহি ত্রাহি করুণ অস্ফুট আর্তনাদ ধ্বনিত হচ্ছে ইথারে পাথারে! চারদিকে শুধুই হতাশার ঘোর অমানিশা! বর্বর জয়োৎসব! এ কোন সমাজ, চারিদিকে শুধু জাহান্নামের লেলিহান শিখা

কিন্তু কেন নেমে এসেছে দেশ ও জাতির উপর এ ভয়াবহ ধ্বংসের নিকরুণ সর্বগ্রাসী অমানিশা! সমাজবাদীদের সুচিন্তিত (?) দাবি- এ সামাজিক অবক্ষয়ের সকাতর অভিশাপ। সেলফোন, ফেসবুকের সভ্যতায় আমরা যখন উদ্ভাসিত, সময়ের নিত্য নতুন আবিস্কারে বিস্ময়ও পরাভূত, সাইমুমের মতো উত্তাল মিডিয়ার উতরোল, অজপাড়া গাঁয়ের বুভুক্ষে কঙ্কালসার সকিনার বিধবা মা’র ছাপড়া ঘরেও পৌঁছেছে বিদ্যুৎ, স্টার জলসা, স্টার প্লাসের সিরিয়ালগুলোয় গিয়ে থামে পল্লীবধুর হাতের রিমোট। এঁকে বেঁকে যাওয়া সেই মেঠোপথগুলো কালোপিচে এখন আরো সুপরিসর, দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ বিনির্মাণে চলছে প্রতিযোগিতা নিরন্তর, ক্রমাগত সমৃদ্ধ হচ্ছে ধনীকশ্রেণীর কলেবর, তখন সমাজের অবনমনের দাবি কতটুকু গ্রহনযোগ্য?

আমরা নিজেদের দাবি করি সভ্যকালের সভ্যমানুষ বলে। ‘মধ্যযুগ’কে গালি দিই চরম ঘৃণায় মুখ ভরে। আমাদের সমাজ, আমাদের বর্তমান অনুযুক্ত সে সমাজ, সে কালের চেয়েও কি অধঃপতিত? তবে কোন সাহসে চলে যাওয়া সে সময় কে রক্তাক্ত করি ঘৃণার বিষবাণে! যদি তা না হয়, তবে সামাজিক সামাজিক অবক্ষয়ের মর্মস্পর্শী অনুযোগ সত্যেরই অপলাপ বটে। পন্ডিতমহাশয়দের জ্ঞানগম্য দাবি- এ শিক্ষার অভাব।

উল্লেখ্য যে, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী অতীতের চেয়ে নেহায়েত কম নয়। দিন দিন জনবিস্ফোরণের মতোই বিস্ফোরিত হচ্ছে শিক্ষালয়। এস. এস. সি. ও এইচ. এস. সি. তে হচ্ছে গোল্ডেন ফাইভের বাম্পার ফলন। গ্রাজুয়েটদের কাফেলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিবছর। ভার্সিটি ও মেডিকেলে তো দেশসেরা মেধাবীরাই যায়। তবে কেন রক্তাক্ত হয় শিক্ষাচত্বর সহপাঠীর রক্তে! কেন ছাত্রী ফাঁসি নেয় হোস্টেলের বাথরুমে!

কেন বর্বর পিশাচের দল ছাত্রীর বুক থেকে সম্ভ্রমের পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে নগ্নোল্লাসে মেতে উঠে! পবিত্র ক্যাম্পাস কেন এখন লম্পট ও দুর্বৃত্তের মুক্তজনপদ! রাষ্টযন্ত্র চালায় কোন সে মূর্খের দল! ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ হয় দুর্র্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে কোন সে অশিক্ষিত ঘাতক?শিক্ষিত স্বামীর হাতে নির্যাতিত হবার ছবি আজ তো আর গোপন নয়!বামে। সমাজবাদীদের সুচিন্তিত (?) দাবি- এ সামাজিক অবক্ষয়ের সকাতর অভিশাপ।

সেলফোন, ফেসবুকের সভ্যতায় আমরা যখন উদ্ভাসিত, সময়ের নিত্য নতুন আবিস্কারে বিস্ময়ও পরাভূত, সাইমুমের মতো উত্তাল মিডিয়ার উতরোল, অজপাড়া গাঁয়ের বুভুক্ষে কঙ্কালসার সকিনার বিধবা মা’র ছাপড়া ঘরেও পৌঁছেছে বিদ্যুৎ, স্টার জলসা, স্টার প্লাসের সিরিয়ালগুলোয় গিয়ে থামে পল্লীবধুর হাতের রিমোট।

এঁকে বেঁকে যাওয়া সেই মেঠোপথগুলো কালোপিচে এখন আরো সুপরিসর, দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ বিনির্মাণে চলছে প্রতিযোগিতা নিরন্তর, ক্রমাগত সমৃদ্ধ হচ্ছে ধনীকশ্রেণীর কলেবর, তখন সমাজের অবনমনের দাবি কতটুকু গ্রহনযোগ্য? আমরা নিজেদের দাবি করি সভ্যকালের সভ্যমানুষ বলে। ‘মধ্যযুগ’কে গালি দিই চরম ঘৃণায় মুখ ভরে। আমাদের সমাজ, আমাদের বর্তমান অনুযুক্ত সে সমাজ, সে কালের চেয়েও কি অধঃপতিত?

তবে কোন সাহসে চলে যাওয়া সে সময় কে রক্তাক্ত করি ঘৃণার বিষবাণে! যদি তা না হয়, তবে সামাজিক সামাজিক অবক্ষয়ের মর্মস্পর্শী অনুযোগ সত্যেরই অপলাপ বটে। পন্ডিতমহাশয়দের জ্ঞানগম্য দাবি- এ শিক্ষার অভাব। উল্লেখ্য যে, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী অতীতের চেয়ে নেহায়েত কম নয়। দিন দিন জনবিস্ফোরণের মতোই বিস্ফোরিত হচ্ছে শিক্ষালয়। এস. এস. সি. ও এইচ. এস. সি. তে হচ্ছে গোল্ডেন ফাইভের বাম্পার ফলন। গ্রাজুয়েটদের কাফেলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে প্রতিবছর। ভার্সিটি ও মেডিকেলে তো দেশসেরা মেধাবীরাই যায়। তবে কেন রক্তাক্ত হয় শিক্ষাচত্বর সহপাঠীর রক্তে! কেন ছাত্রী ফাঁসি নেয় হোস্টেলের বাথরুমে! কেন বর্বর পিশাচের দল ছাত্রীর বুক থেকে সম্ভ্রমের পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে নগ্নোল্লাসে মেতে উঠে! পবিত্র ক্যাম্পাস কেন এখন লম্পট ও দুর্বৃত্তের মুক্তজনপদ! রাষ্ট্রযন্ত্র চালায় কোন সে মূর্খের দল!

ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ হয় দুর্র্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে কোন সে অশিক্ষিত ঘাতক? শিক্ষিত স্বামীর হাতে নির্যাতিত হবার ছবি আজ তো আর গোপন নয়! কারো কারো দাবি- প্রয়োজন যথার্থ আইন। প্রণিধানযোগ্য যে, স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিটি দেশেই আইন কানুন রয়েছে। রয়েছে কৃতঅপরাধের যথোপযুক্ত শাস্তির বিধান। কার্যকরও হচ্ছে তা। যুদ্ধাপরাধ, শেখ মুজিব হত্যার বিচার, এরশাদ শিকদার ও মনিরের ফাঁসি প্রভৃতি যার প্রমাণ। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও রয়েছে কঠিন শাস্তি। সবগুলির না হলেও অধিকাংশের বিচার হচ্ছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে কি বধু নিপীড়ন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, পরকীয়া, মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ, হত্যা, সন্ত্রাস?

চলমান সময়ের ছবি দেখে অন্তত আমি বলতে পারি না- অতীতের চেয়ে কম হচ্ছে এসব। বরং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তীব্রবেগে বেড়ে চলছে অপরাধের ধারা। সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য নতুন আরো অপরাধ। সংশ্লিষ্ট বক্তব্যের দাবিদাররা খপ মেরে আমার উত্তরে যতিচিহ্ন টেনে বলতে পারেন, “আইনের শাসন শুধু বলিনি বরং আইনের যথার্থ শাসন” হতে হবে। সরল বাংলায় তার ব্যাখ্যাও করতে পারেন এভাবে যে, সঠিকভাবে সর্বক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে হবে। কথা ঐ একটাই- ‘‘ঘাড়ের নাম গর্দান, গর্দানের নাম ঘাড়।” দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আইন দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আইন করলেও সঠিক প্রয়োগ হবে না, যেমন হচ্ছে না। আইনকে উপেক্ষা করা যায় শক্তির মদমত্তা দিয়ে। প্রতাপশালীরা তাই করে আসছে যুগে যুগে।

আইন, আদালত সর্বযুগেই শক্তের ভক্ত নরমের যম হয়ে সবলের হাতকে আরো করেছে শক্তিশালী, দুর্বলকে করেছে সর্বশান্ত। সেই জার্মানির হিটলার থেকে আমাদের আজকের বাংলাদেশের সময়ও একথা চিরোজ্জ্বল ও ধ্রুব সত্য। তাদের ঔদ্ধত্যের লাগাম টেনে ধরেনি সমকালীন আইন ও বিচারক।

পুলিশ কর্তৃক নিরীহ মানুষদের অন্যায় গ্রেফতার, জেল-জুলুম, নারী সহকর্মীর উপর যৌন নির্যাতন স্মরণ করিয়ে দেয়- যারা আইনের সেবক তারা আইনের ভক্ষকও এবং টাকার বাধ্য গোলাম। সংস্কৃতিমনাদের পরিশুদ্ধদাবি- সংস্কৃতি চর্চার কমতি তৈরি করছে এ মানবিক দীনতা। সংস্কৃতি চর্চা আত্মাকে পবিত্র করে। পরিশীলিত করে মন ও মনন। ফলে সমাজ হয় সুস্থ, রাষ্ট্র হয় উন্নত। সংস্কৃতি তৈরি করে দেশপ্রেম জাগৃতির দৃঢ়প্রত্যয়ের দুর্বার দ্যোতনা। তা অন্ধকার বিদূরিত করে আনে বিমল শান্তি-সুখের দীপ্তঊষা।

তাই যদি হয়, তবে সংস্কৃতির দিকপাল, সুশীল’র দিশারিদের জীবন কেন থাকে দুর্বাসিত তমসায় ঢাকা! বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় অশান্তির দাবানল। রঙিন আলোর মতোই স্থায়ীহীন হয় রঙিনললনাদের ঘর। আপাদমস্তক সংস্কৃতিতে মোড়া হুমায়ূন ফরিদীর জীবন (১৩-২-২০১২ইং) কেন ঢেকে গেলো একাকীত্বের আঁধারে বড্ড অবেলায়?

সংস্কৃতির মাঝেই জন্ম, বেড়ে ওঠা ও নিত্য বসবাস; তরুণীদের আইডল সুবর্ণা মুস্তফা ফরিদীকে ছেড়ে নিজের চেয়েও কম বয়সী (বদরুল আনাম সৌদ)র বাহুতে নিজেকে সঁপে(৭-৭-২০০৮ইং) দিলেন কতটুকু সংস্কৃতির অপ্রতুলতায়? চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বল নত্রের মতো আজো জ¦লতে থাকা সালমান শাহ্ (৬-৯-৯৬ইং) নিজ বাড়িতে আর আজীবন মুক্তির লাল পয়গাম বিতরণকারী মিনার মাহমুদ অবশেষে কেন মুক্তি খুঁজেন খিলক্ষিতের রিজেন্সি হোটেলের একটি কক্ষে (২৯-৩-২০১২ইং) আত্মহত্যায়?

সংস্কৃতির গুরুঠাকুর হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ও শিষ্যরা যদি গুরুর অনুকরণে ত্রিশ বছরের দীর্ঘ (১৯৭৩-২০০৩ইং) দাম্পত্যজীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আপন মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করতে থাকেন তবে নিশ্চয়ই ঘরে ঘরে গুলতেকীনদের জীবন বিমল শান্তি সুখে দ্বীপ্ত হবে! কত দেবো এমন উদাহরণ! মেকাপে ঢাকা এই বাসিন্দাদের প্রকৃত কুৎসিত জীবনাচারের অবয়ব দেখলে বেকুবরাও আঁতকে উঠবে ভয়ে। এই দুর্গন্ধময়ীরা সুবাসিত সমাজ দিবে কী করে ?

সুদীর্ঘ এই আলোচনা-বিশ্লেষণ শেষে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে দাঁড়ি টেনে দিতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু নির্ভুল প্রেসক্রিপশন এখনো মেলেনি। অবস্থাদৃষ্টে প্রতিভাত হচ্ছে- কারখানায় পণ্য উৎপাদনের মতো মুক্তির ফর্মুলা উৎপাদিত হচ্ছে। এইসব সস্তা ফর্মুলায় দেশের অবয়ব ক্রমান্বয়ে আরো অবনতিই হচ্ছে। তবে পরমাকাঙ্খিত সেই অমৃতসুধা কী? যার দ্বারা নির্জীব প্রাণে জেগে উঠবে প্রাণের স্পন্দন। রাত্রির কালো আঁধার শেষে ফুটবে সুহাসিনী ভোরের শুভ্র আলো। ভয়ংকর ড্রাকুলার অশুভ করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাবে মা জননী বাংলাদেশ। জানতে হলে, বাঁচতে হলে একনিষ্ঠতায় বিধৌত চিত্তে সমর্পিত হতে হবে শ্বাশ্বত সত্তার সমীপে। যার বাণী ও নির্দেশনা তার সত্তার মতোই অবিনশ্বর, পবিত্র, নির্ভুল।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর, গাজীপুর, ফারিগজামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।